সারসংক্ষেপ
- • ভ্যাট ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব
- • অতিরিক্ত আয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার
- • পুতিন আগেই কর বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন
- • ট্রাম্প বললেন, রাশিয়া ‘বড় অর্থনৈতিক সমস্যায়’
মস্কো, ২৪ সেপ্টেম্বর – রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২৬ সাল থেকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। এর লক্ষ্য সামরিক ব্যয় মেটানো এবং দ্রুত বেড়ে যাওয়া বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আনা। এ সময়ের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ পাঁচ বছরে গড়াবে।
ট্রাম্পের সমালোচনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে “কাগুজে বাঘ” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি দাবি করেন, সাড়ে তিন বছর ধরে উদ্দেশ্যহীন যুদ্ধ চালিয়ে রাশিয়া এখন “বড় অর্থনৈতিক সমস্যায়” রয়েছে।

পুতিনের কর বৃদ্ধির ইঙ্গিত
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, যুদ্ধের সময়ে কিছু কর বাড়াতে তিনি রাজি আছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ভিয়েতনাম ও কোরিয়া যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ধনীদের ওপর কর বাড়িয়েছিল।
যুদ্ধকালীন বাজেট
বুধবার রাশিয়ার সরকার ২০২৬ সালের জন্য একটি নতুন খসড়া বাজেট অনুমোদন করেছে, যেটিকে ক্রেমলিনের অনেক কর্মকর্তা “যুদ্ধকালীন বাজেট” হিসেবে অভিহিত করছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৪.৩ শতাংশ থেকে নেমে মাত্র ১ শতাংশে ঠেকতে পারে।
প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ২০২৫ সালের রেকর্ড ১৩.৫ ট্রিলিয়ন রুবল থেকে ২০২৬ সালে কমে দাঁড়াবে ১২.৬ ট্রিলিয়ন রুবল (প্রায় ১৫০.৫ বিলিয়ন ডলার)। বাজেট ঘাটতি ২০২৫ সালে জিডিপির ২.৬ শতাংশে পৌঁছাবে, যা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ এবং আগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি।

কর বৃদ্ধির মূল উদ্দেশ্য
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, ভ্যাট বৃদ্ধি মূলত প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতের অর্থায়নের জন্য। ভ্যাট ২০২৪ সালে বাজেট আয়ের ৩৭ শতাংশ যোগান দিয়েছিল। ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রধান আলেকজান্দর শোখিন এ সিদ্ধান্তকে “অপ্রীতিকর” বলেছেন।
নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে এই বাড়তি ভ্যাট থেকে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন রুবল (১৪.৩ বিলিয়ন ডলার) অতিরিক্ত আয় হবে। একই সঙ্গে ২০২৫ সালে সরকারের ঋণ গ্রহণ ৪৬ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, জুয়া ব্যবসা ও ক্ষুদ্র ব্যবসার কর ছাড় বাতিলসহ আরও কিছু কর বৃদ্ধি প্রস্তাব করা হয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি
কর বাড়ানোয় মুদ্রাস্ফীতি আবারও বাড়তে পারে, যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তা কিছুটা কমছিল। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য সুদের হার কমানো কঠিন হয়ে পড়বে।
২০১৯ সালে ভ্যাট ২ শতাংশ বাড়ানোর ফলে মুদ্রাস্ফীতি ০.৬ শতাংশ বাড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার জানিয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি অর্ধেক কমিয়ে ৪ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য রয়েছে।

টি-ব্যাংকের বিশ্লেষক সোফিয়া ডোনেৎস্ ধারণা করছেন, ২০২৬ সালে ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে মুদ্রাস্ফীতি ১.৫ শতাংশ বাড়বে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য ভারসাম্য রাখা কঠিন হবে।
রুবল ও অর্থনৈতিক পূর্বাভাস
বুধবার রুবলের দর ৮৩.৭৫ রুবল প্রতি ডলারে স্থিতিশীল ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, সুদের হার ধীরে কমানোর ফলে রুবলকে সহায়তা করেছে। নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে গড় রুবল বিনিময় হার ডলারপ্রতি ৯২.২ হবে, যা আগের হিসাবের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ শক্তিশালী।
ট্রাম্পের আহ্বান
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন: “পুতিন ও রাশিয়া বড় অর্থনৈতিক সমস্যায় আছে, এটাই ইউক্রেনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।”
এ বক্তব্য তার আগের অবস্থানের সঙ্গে ভিন্ন, কারণ গত মাসে আলাস্কায় এক শীর্ষ বৈঠকে তিনি পুতিনকে লাল গালিচায় সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। তখন তিনি যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রচেষ্টার আভাস দিয়েছিলেন।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতি যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। ট্রাম্পের “কাগুজে বাঘ” মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, “রাশিয়া বাঘ নয়, ভাল্লুক। কাগুজে ভাল্লুক বলে কিছু নেই।”
তিনি আরও বলেন, পুতিন ট্রাম্পের যুদ্ধ সমাধানের প্রচেষ্টা মূল্যায়ন করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দাবি
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৬ সালের বাজেট হবে “সুষম ও টেকসই”। এতে প্রতিরক্ষা খাতে অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা, সেনাদের বেতন ও পরিবারকে সহায়তা এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে আধুনিকীকরণের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















