বৈশ্বিক বাজারে বিরল খনিজের দাম বেড়ে যাওয়া
বিশ্ববাজারে রেয়ার আর্থ বা বিরল খনিজের দাম দ্রুত বাড়ছে। শুধু চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণাধীন খনিজ নয়, অন্যান্য খনিজের দামও বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের মজুদ ধরে রাখায় এ পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
ইউরোপীয় বাজারে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ডিসপ্রোসিয়াম প্রতি কেজি ৮৪০ ডলারে লেনদেন হয়েছে। এপ্রিল মাসে চীন রপ্তানি সীমিত করার আগে যা আগের দামের তিনগুণ। অন্যদিকে টার্বিয়ামও বারবার রেকর্ড ভেঙে ইউরোপে প্রতি কেজি ৩৬০০ ডলারে পৌঁছেছে।
নীয়োডিমিয়াম-প্রাসোডিমিয়ামের উত্থান
শুধু ভারী রেয়ার আর্থ নয়, হালকা রেয়ার আর্থ নীয়োডিমিয়াম ও প্রাসোডিমিয়ামের দামও দ্রুত বাড়ছে। এই দুই খনিজের মিশ্রণ NdPr ব্যবহৃত হয় গাড়ির মোটর ও উইন্ড টারবাইনের স্থায়ী চুম্বকে।
এনডপিআর ব্যবহার মাঝারি ও ভারী রেয়ার আর্থের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে এর দাম বাড়ায় শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক খরচ বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করছে।

চীনে আগস্টের শেষ দিকে এনপিডি্আর-এর দাম প্রতি মেট্রিক টন ৯০ হাজার ৮৫০ ডলারে পৌঁছেছে, যা মার্চ ২০২৩-এর পর সর্বোচ্চ। এখনও এটি গত দুই-আড়াই বছরের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। কেবল নীয়োডিমিয়ামের ধাতব সংস্করণের দাম জুন থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মজুদ ও রপ্তানি বন্ধ
যুক্তরাষ্ট্র তুলনামূলক বেশি হালকা রেয়ার আর্থ উৎপাদন করে। ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন পাস খনিতে এমপি ম্যাটেরিয়ালস NdPr উত্তোলন করে। এটিই যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র সক্রিয় রেয়ার আর্থ খনি।
এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করে যে তারা আর চীনে রেয়ার আর্থ কনসেনট্রেট রপ্তানি করবে না। কারণ, চীনের পাল্টা শুল্ক ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ। চলতি মাসের শুরুতে তারা নিক্কেই পত্রিকাকে জানায়, ভবিষ্যতেও আর চীনে রপ্তানি করবে না।
জুলাইয়ে এমপি ম্যাটেরিয়ালস যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের NdPr-পণ্য প্রতি কেজি ১১০ ডলারে কিনবে। তখনকার বাজারদামের দ্বিগুণ এই হার আগামী ১০ বছর নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ ধরনের ন্যূনতম মূল্য নিশ্চয়তা দেওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা।

চীনের নিয়ন্ত্রণ ও বৈশ্বিক বাজারের প্রভাব
২০২৪ সালে বৈশ্বিক রেয়ার আর্থ উৎপাদনের ১২ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের ছিল। জুনে এক চুক্তির পর চীন কিছু রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেছিল এবং রপ্তানি বাড়ার আভাসও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু জুলাইয়ের শেষে চীন নতুন নিয়ম জারি করে খনন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মোট পরিমাণে কঠোর সীমা নির্ধারণ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের রিফাইনিং ক্ষমতা দুর্বল হওয়ায় তারা সাধারণত খনিজ আকরিক ও কনসেনট্রেট চীনে রপ্তানি করে এবং সেখান থেকে প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি করে। তবে চীনের নতুন সীমাবদ্ধতা কাঁচামালের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়ায় দাম বাড়তে ভূমিকা রেখেছে।
জাপানের মারুবেনি ইনস্টিটিউটের গবেষক লি শুয়েলিয়েন বলেছেন, চীনে প্রক্রিয়াজাতকরণের মোট সীমা দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা
আর্গাস মিডিয়ার বৈশ্বিক ধাতু বাজার বিভাগের প্রধান এলি সাকলাতভালা জানিয়েছেন, চীনে এখনো রপ্তানি লাইসেন্স পাওয়া কঠিন। অন্যদিকে ভোক্তাদের মজুদও দ্রুত কমে আসছে।
এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে এবং ভবিষ্যতে আরও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















