০৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
বন্যার নতুন বাস্তবতা: এফিমার মানচিত্র পাল্টাতে শহরগুলোর জোর প্রচেষ্টা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধানের আহ্বান: মার্কিন-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ শিথিল করতে, অথবা দীর্ঘমেয়াদী বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে ঝুঁকি ‘নো কিংস’ বিক্ষোভ, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ব্যাপক মিছিল সমাবেশ জুলাই সনদ সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা পরিবর্তন আনতে পারবে? রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৪৩) বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের বিভিন্ন জায়গায় এখনও ধোঁয়া উড়ছে – রবিবার যে চিত্র দেখা যাচ্ছে রাফাহ বন্ধই, ইসরায়েল শনাক্ত করল এক জিম্মির মরদেহ এসএনএল ‘উইকেন্ড আপডেট’: ট্রাম্প, স্যান্টোস ও আর্জেন্টিনা—সবাই তালগোল পাকাল ট্রাম্পের ‘কিং ট্রাম্প’ এআই ভিডিওতে সমালোচনার ঝড় রুশ গ্যাস প্ল্যান্টে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা, বড় অগ্নিকাণ্ড

ভারতে কি কেপপ মডেল সফল করবে হাইব?

হাইবের নতুন পদক্ষেপ

বিশ্বব্যাপী কেপপ ছড়িয়ে দিতে বড়সড় পরিকল্পনা নিয়েছে হাইব লেবেলস। এবার তারা চোখ রাখছে ভারত বাজারে। দক্ষিণ কোরিয়ার এই বিনোদন সংস্থা, যারা বিটিএসের মতো বৈশ্বিক তারকার ঘর, আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে তারা জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, লাতিন আমেরিকা ও চীনে সম্প্রসারণ করেছে।

হাইব এই পদক্ষেপকে তাদের বৈশ্বিক কৌশলগত মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বর্ণনা করেছে। লক্ষ্য হলো একটি বিশ্বব্যাপী কেপপ ইকোসিস্টেম তৈরি করা।

‘মাল্টিহোম, মাল্টিজেনর’ কৌশল

হাইব চেয়ারম্যান বাং শি-হিউক দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, কেপপ টিকে থাকতে হলে শিল্পকে একক ঘরানা বা ভৌগোলিক সীমায় আটকে রাখা যাবে না। তাই তারা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সঙ্গীত শিল্পের সঙ্গে মানানসই ঘরানা তৈরি করে স্থানীয় শিল্পী গড়ে তুলতে চাইছে, তবে কেপপ শৈলীর মূল কাঠামো অটুট রেখে।

এর উদাহরণ হলো ‘ক্যাটসআই’ (KATSEYE), যা হাইব আমেরিকা ও গেফেন রেকর্ডসের যৌথ উদ্যোগে গঠিত একটি গার্ল গ্রুপ। সদস্যরা সরাসরি কেপপ আইডল পরিচয় নিলেও, তাদের সঙ্গীত পরিবেশনা, পারফরম্যান্স ও মিউজিক শোতে উপস্থিতি কেপপ ধারার কাছাকাছি।

HYBE Labels chairman Bang Si-hyuk attends the People's Mandate Ceremony in commemoration of Korea's Liberation Day, Aug. 15. Yonhap

কেন ভারত?

ভারত বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ—প্রায় ১৪০ কোটির বেশি মানুষ। গড় বয়স মাত্র ২৯ বছর, যা কেপপের মূল দর্শক শ্রেণির সঙ্গে ভালোভাবেই মিলে যায়।

এছাড়া, ভারতের সঙ্গীত স্ট্রিমিং বাজার বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি জানায়, দেশে ১৮.৫ কোটি মানুষ নিয়মিত মিউজিক স্ট্রিমিং ব্যবহার করে—যুক্তরাষ্ট্রের পরেই এই অবস্থান।

কেপপের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। কোরিয়া ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ভারতে কেপপ স্ট্রিমিং ৩৬২ শতাংশ বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা এবং বৈশ্বিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার।

২০২৪ সালে ভারতের ডিজিটাল মিডিয়া শিল্পের আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ ট্রিলিয়ন উওন (প্রায় ৯.৩ বিলিয়ন ডলার)। ২০২৫ সালে এটি ১৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোরিয়ান বিনোদন সংস্থাগুলোর জন্য ভারত এখনও তুলনামূলক অনাবিষ্কৃত বাজার, যা একে ‘শেষ সীমান্ত’ হিসেবে উপস্থাপন করছে।

ভারতের জন্য হাইবের পরিকল্পনা

হাইব জানিয়েছে, তাদের ভারতীয় শাখার মূলনীতি হলো: “ভারতের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে বৈশ্বিক গল্প।”

এখানে স্থানীয় শিল্পীদের বাছাই করা হবে, তাদের ভারতীয় নান্দনিকতায় গড়ে তোলা হবে এবং তারপর বৈশ্বিক দর্শকের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।

Lisa of BLACKPINK appears in the group’s “How You Like That” music video, where an image resembling the Hindu deity Ganesha is seen in the lower left corner. Captured from X (formerly Twitter)

এই লক্ষ্য পূরণে স্থানীয় অডিশনের মাধ্যমে নতুন শিল্পী খোঁজা হবে এবং ভারতের বাজার উপযোগী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি গড়ে তোলা হবে। একইসঙ্গে ভারতে হাইবের বিদ্যমান শিল্পীদের কার্যক্রমও বাড়ানো হবে।

সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা

তবে সবকিছুর সঙ্গে বড় চ্যালেঞ্জও আছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বলিউড এতটাই শক্তিশালী যে সেখানে জায়গা করে নেওয়া সহজ হবে না। যদিও বৈশ্বিক জনপ্রিয়তার কারণে কেপপ এখন ভারতে আগের তুলনায় বেশি সম্ভাবনা পাচ্ছে।

তবে সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা না মানলে বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

২০২০ সালে ব্ল্যাকপিঙ্কের “হাউ ইউ লাইক দ্যাট” মিউজিক ভিডিওতে হিন্দু দেবতা গণেশের প্রতীক দেখা যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। ভারতীয় ভক্তরা অভিযোগ করেন, তাদের ধর্মকে হালকা করে উপস্থাপন করা হয়েছে। পরে ওয়াইজি এন্টারটেইনমেন্ট ঘটনাটিকে “অবহেলা” বলে স্বীকার করে।

একই বছর বয় ব্যান্ড সেভেনটিন সমালোচনায় পড়েছিল যখন তারা একটি ভিডিওতে কোরিয়ান জুটি নোরাজোর গান “কারি” গেয়েছিল। অনেক দর্শক এটিকে ভারতীয় সংস্কৃতিকে উপহাস হিসেবে দেখেছিলেন।

সংস্কৃতি বিশ্লেষক কিম হিউন-শিক সতর্ক করে বলেছেন, অতীত অভিজ্ঞতায় কেপপ অনেক উন্নতি করলেও ভারত বাজারে প্রবেশের সময় বাড়তি সতর্কতা জরুরি।

তার মতে, সহযোগিতা বাড়াতে হবে, যা ভারতীয় ঐতিহ্যকে সম্মান জানাবে এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেবে। এভাবেই কেপপ ভারতে টেকসই অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যার নতুন বাস্তবতা: এফিমার মানচিত্র পাল্টাতে শহরগুলোর জোর প্রচেষ্টা

ভারতে কি কেপপ মডেল সফল করবে হাইব?

০৯:০০:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হাইবের নতুন পদক্ষেপ

বিশ্বব্যাপী কেপপ ছড়িয়ে দিতে বড়সড় পরিকল্পনা নিয়েছে হাইব লেবেলস। এবার তারা চোখ রাখছে ভারত বাজারে। দক্ষিণ কোরিয়ার এই বিনোদন সংস্থা, যারা বিটিএসের মতো বৈশ্বিক তারকার ঘর, আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে তারা জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, লাতিন আমেরিকা ও চীনে সম্প্রসারণ করেছে।

হাইব এই পদক্ষেপকে তাদের বৈশ্বিক কৌশলগত মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বর্ণনা করেছে। লক্ষ্য হলো একটি বিশ্বব্যাপী কেপপ ইকোসিস্টেম তৈরি করা।

‘মাল্টিহোম, মাল্টিজেনর’ কৌশল

হাইব চেয়ারম্যান বাং শি-হিউক দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, কেপপ টিকে থাকতে হলে শিল্পকে একক ঘরানা বা ভৌগোলিক সীমায় আটকে রাখা যাবে না। তাই তারা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সঙ্গীত শিল্পের সঙ্গে মানানসই ঘরানা তৈরি করে স্থানীয় শিল্পী গড়ে তুলতে চাইছে, তবে কেপপ শৈলীর মূল কাঠামো অটুট রেখে।

এর উদাহরণ হলো ‘ক্যাটসআই’ (KATSEYE), যা হাইব আমেরিকা ও গেফেন রেকর্ডসের যৌথ উদ্যোগে গঠিত একটি গার্ল গ্রুপ। সদস্যরা সরাসরি কেপপ আইডল পরিচয় নিলেও, তাদের সঙ্গীত পরিবেশনা, পারফরম্যান্স ও মিউজিক শোতে উপস্থিতি কেপপ ধারার কাছাকাছি।

HYBE Labels chairman Bang Si-hyuk attends the People's Mandate Ceremony in commemoration of Korea's Liberation Day, Aug. 15. Yonhap

কেন ভারত?

ভারত বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ—প্রায় ১৪০ কোটির বেশি মানুষ। গড় বয়স মাত্র ২৯ বছর, যা কেপপের মূল দর্শক শ্রেণির সঙ্গে ভালোভাবেই মিলে যায়।

এছাড়া, ভারতের সঙ্গীত স্ট্রিমিং বাজার বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি জানায়, দেশে ১৮.৫ কোটি মানুষ নিয়মিত মিউজিক স্ট্রিমিং ব্যবহার করে—যুক্তরাষ্ট্রের পরেই এই অবস্থান।

কেপপের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। কোরিয়া ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ভারতে কেপপ স্ট্রিমিং ৩৬২ শতাংশ বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা এবং বৈশ্বিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার।

২০২৪ সালে ভারতের ডিজিটাল মিডিয়া শিল্পের আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ ট্রিলিয়ন উওন (প্রায় ৯.৩ বিলিয়ন ডলার)। ২০২৫ সালে এটি ১৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোরিয়ান বিনোদন সংস্থাগুলোর জন্য ভারত এখনও তুলনামূলক অনাবিষ্কৃত বাজার, যা একে ‘শেষ সীমান্ত’ হিসেবে উপস্থাপন করছে।

ভারতের জন্য হাইবের পরিকল্পনা

হাইব জানিয়েছে, তাদের ভারতীয় শাখার মূলনীতি হলো: “ভারতের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে বৈশ্বিক গল্প।”

এখানে স্থানীয় শিল্পীদের বাছাই করা হবে, তাদের ভারতীয় নান্দনিকতায় গড়ে তোলা হবে এবং তারপর বৈশ্বিক দর্শকের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।

Lisa of BLACKPINK appears in the group’s “How You Like That” music video, where an image resembling the Hindu deity Ganesha is seen in the lower left corner. Captured from X (formerly Twitter)

এই লক্ষ্য পূরণে স্থানীয় অডিশনের মাধ্যমে নতুন শিল্পী খোঁজা হবে এবং ভারতের বাজার উপযোগী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি গড়ে তোলা হবে। একইসঙ্গে ভারতে হাইবের বিদ্যমান শিল্পীদের কার্যক্রমও বাড়ানো হবে।

সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা

তবে সবকিছুর সঙ্গে বড় চ্যালেঞ্জও আছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বলিউড এতটাই শক্তিশালী যে সেখানে জায়গা করে নেওয়া সহজ হবে না। যদিও বৈশ্বিক জনপ্রিয়তার কারণে কেপপ এখন ভারতে আগের তুলনায় বেশি সম্ভাবনা পাচ্ছে।

তবে সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা না মানলে বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

২০২০ সালে ব্ল্যাকপিঙ্কের “হাউ ইউ লাইক দ্যাট” মিউজিক ভিডিওতে হিন্দু দেবতা গণেশের প্রতীক দেখা যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। ভারতীয় ভক্তরা অভিযোগ করেন, তাদের ধর্মকে হালকা করে উপস্থাপন করা হয়েছে। পরে ওয়াইজি এন্টারটেইনমেন্ট ঘটনাটিকে “অবহেলা” বলে স্বীকার করে।

একই বছর বয় ব্যান্ড সেভেনটিন সমালোচনায় পড়েছিল যখন তারা একটি ভিডিওতে কোরিয়ান জুটি নোরাজোর গান “কারি” গেয়েছিল। অনেক দর্শক এটিকে ভারতীয় সংস্কৃতিকে উপহাস হিসেবে দেখেছিলেন।

সংস্কৃতি বিশ্লেষক কিম হিউন-শিক সতর্ক করে বলেছেন, অতীত অভিজ্ঞতায় কেপপ অনেক উন্নতি করলেও ভারত বাজারে প্রবেশের সময় বাড়তি সতর্কতা জরুরি।

তার মতে, সহযোগিতা বাড়াতে হবে, যা ভারতীয় ঐতিহ্যকে সম্মান জানাবে এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেবে। এভাবেই কেপপ ভারতে টেকসই অবস্থান তৈরি করতে পারবে।