সারাংশ
১. শিল্প চালানো কঠিন হবে
২. বেকারত্ব বাড়বে
৩. সরকার ঋন নিয়েছে গত বছরের থেকে চার ভাগ বেশি
৪. সরকার বেশি ঋন নেয়াতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বেসরকারিখাত
ঐতিহাসিকভাবে ঋণ কমছে
২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশে, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ তাদের সেপ্টেম্বর মাসের অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, যদি বেসরকারি খাতে ঋণ না বাড়ে, তাহলে শিল্প সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে দেশীয় ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশে। আগের বছর একই সময়ে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে বিনিয়োগ চাহিদার দুর্বলতা, উচ্চ সুদের হার, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকের সতর্ক ঋণনীতির কারণে।
সরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধি
অন্যদিকে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশে। আগের বছর এটি ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মূলত বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের ঋণ নেওয়াই এ প্রবৃদ্ধির প্রধান কারণ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি খাতের বেশি ঋণ নেওয়া বেসরকারি বিনিয়োগকে কার্যত বাধাগ্রস্ত করছে।
আমানত প্রবৃদ্ধি ধীর
২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশে। আগের বছর এটি ছিল ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। মার্চ মাসে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ও জনগণের আস্থার কারণে আমানত কিছুটা বাড়লেও জুলাই ও আগস্টে সেই গতি আর ছিল না।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নগদ অর্থের ঘাটতি ও মেয়াদি আমানতের প্রতি ঝোঁক সঞ্চয় প্রবৃদ্ধিকে সীমিত করেছে। এর ফলে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সক্ষমতাও কমেছে।
উন্নয়ন ব্যয় কম
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি সামান্য কম। আগস্টে কিছুটা উন্নতি হলেও সামগ্রিক অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। নানা জটিলতা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজস্ব ঘাটতি
আগস্ট মাসে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৭১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন টাকা, যেখানে লক্ষ্য ছিল ৩০৮ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ২৭ বিলিয়ন টাকা। যদিও আগের বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়েছে, তবুও ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। এতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ আরও চাপে পড়ছে।

মুদ্রাস্ফীতিতে স্বস্তি
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আগস্টে ভোক্তা মূল্যসূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশে। চাল, পাঙ্গাস মাছ ও ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল থাকায় খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি কমেছে। অন্যদিকে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমায় মানুষের খরচের চাপ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
অখাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি কমে যাওয়ায় সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি হ্রাসে বড় ভূমিকা রেখেছে। এতে পরিবার ও ব্যবসার জন্য কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















