০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

এআই বিপ্লব: শেয়ারবাজারে নতুন ভরসা নাকি অদৃশ্য ঝুঁকি?

সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ

  • • ২০২৯ সালের মধ্যে রোবো-অ্যাডভাইজারি বাজার ৬০০% বাড়বে বলে পূর্বাভাস
  • • খুচরা বিনিয়োগকারীদের অর্ধেক এআই টুল ব্যবহার করতে আগ্রহী
  • • শেয়ার বাছাইয়ে ১৩% খুচরা বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যে ব্যবহার করছেন চ্যাটজিপিটি
  • • এআই নির্বাচিত শেয়ারের ঝুড়ি যুক্তরাজ্যের শীর্ষ তহবিলকে ছাড়িয়ে গেছে

এআই-এর উত্থান ও বিনিয়োগকারীদের নতুন ভরসা

লন্ডন, ২৫ সেপ্টেম্বরঃ চ্যাটজিপিটির তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই অন্তত প্রতি দশজন খুচরা বিনিয়োগকারীর একজন এই চ্যাটবট ব্যবহার করছেন শেয়ার বাছাইয়ে। এতে দ্রুত বেড়ে উঠছে রোবো-অ্যাডভাইজারি বাজার। তবে সমর্থকেরাও সতর্ক করছেন, এই কৌশল ঝুঁকিপূর্ণ এবং এখনও পুরোপুরি প্রথাগত পরামর্শদাতাদের বিকল্প নয়।

এআই প্রযুক্তির কারণে এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীও এমন তথ্য ও বিশ্লেষণ পাচ্ছেন, যা আগে কেবল বড় ব্যাংক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নাগালে ছিল।

দ্রুত সম্প্রসারণশীল রোবো-অ্যাডভাইজারি বাজার

রোবো-অ্যাডভাইজারি বলতে এমন প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়, যারা অ্যালগরিদম-নির্ভর স্বয়ংক্রিয় আর্থিক পরামর্শ দেয়। এখানে ফিনটেক, ব্যাংক থেকে শুরু করে সম্পদ ব্যবস্থাপক সবাই রয়েছে। ডেটা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটসের হিসেবে, ২০২৪ সালের ৬১.৭৫ বিলিয়ন ডলারের বাজার ২০২৯ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ৪৭০.৯১ বিলিয়ন ডলারে।

ডলার কিনে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রাক্তন ব্যাংকারের অভিজ্ঞতা

প্রায় দুই দশক ইউবিএস-এ কাজ করা বিশ্লেষক জেরেমি লিয়ং গত বছর চাকরি ছাড়ার পর থেকে নিজের বিনিয়োগে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন।

তিনি বলেন, “আগের মতো ব্যয়বহুল ব্লুমবার্গ টার্মিনাল বা বাজারের তথ্যভান্ডার আর আমার কাছে নেই। তবুও সাধারণ চ্যাটজিপিটি অনেক কাজ করে দিতে পারে।” তবে তিনি সতর্ক করেন, যেসব তথ্য পেওয়ালের আড়ালে থাকে তা এআই ধরতে পারে না।

জরিপে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি

ব্রোকার eToro বিশ্বজুড়ে ১১ হাজার খুচরা বিনিয়োগকারীর ওপর জরিপ চালায়। ফলাফলে দেখা গেছে, অর্ধেক বিনিয়োগকারী চ্যাটজিপিটি বা গুগলের জেমিনির মতো এআই টুল ব্যবহার করতে আগ্রহী। এদের মধ্যে ১৩% ইতোমধ্যে ব্যবহার করছেন।

যুক্তরাজ্যে তুলনামূলক সংস্থা ফাইন্ডারের জরিপে দেখা গেছে, ৪০% উত্তরদাতা ব্যক্তিগত আর্থিক পরামর্শের জন্য চ্যাটবট বা এআই ব্যবহার করেছেন।

Artificial Intelligence In Marketing | Sprout Social

ঝুঁকির সতর্কবার্তা

চ্যাটজিপিটি নিজেই সতর্ক করে যে এটি পেশাদার আর্থিক পরামর্শের বিকল্প নয়। ওপেনএআই-ও প্রকাশ করেনি, কতজন শেয়ার বাছাইয়ে এই টুল ব্যবহার করছেন।
eToro-র যুক্তরাজ্যের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড্যান মজুলস্কি বলেন, “এআই মডেলগুলো দারুণ কাজ করতে পারে। কিন্তু ঝুঁকি তখনই আসে, যখন মানুষ চ্যাটজিপিটি বা জেমিনির মতো সাধারণ মডেলকে ভবিষ্যদ্বাণীর যন্ত্র হিসেবে ধরে নেয়।”

তার মতে, বাজার বিশ্লেষণে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এআই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করাই নিরাপদ। কারণ সাধারণ মডেল প্রায়ই তারিখ বা সংখ্যা ভুল উদ্ধৃত করতে পারে এবং অতীত তথ্যের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ অনুমান করতে গিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।

এআই নির্বাচিত শেয়ারের সাফল্য

ফাইন্ডার ২০২৩ সালের মার্চে চ্যাটজিপিটিকে মানসম্মত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শেয়ার বাছাই করতে বলে। শর্ত দেওয়া হয়—ঋণের পরিমাণ, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং প্রতিযোগীদের তুলনায় সুবিধা সৃষ্টি করা সম্পদের ভিত্তিতে বাছাই করতে হবে।

৬টি পরিবর্তন নিয়ে আসছে চ্যাটজিপিটি

চ্যাটজিপিটি যে ৩৮টি শেয়ার বেছে নেয়, তার মধ্যে ছিল এনভিডিয়া, অ্যামাজন, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল ও ওয়ালমার্টের মতো কোম্পানি। এই শেয়ারের মূল্য এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫% বেড়েছে, যা যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ১০টি জনপ্রিয় তহবিলের গড় আয়ের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার প্রয়োজন

বিশ্লেষক লিয়ং বলেন, তিনি চ্যাটজিপিটিকে এমনভাবে নির্দেশ দেন—”ধরে নাও তুমি একজন শর্ট অ্যানালিস্ট, এই শেয়ারের শর্ট থিসিস কী?” অথবা “শুধু নির্ভরযোগ্য উৎস ব্যবহার করো, যেমন এসইসি ফাইলিংস।” তার মতে, যত বেশি প্রেক্ষাপট দেওয়া যায়, উত্তর তত ভালো হয়।

তবে ঝুঁকিও বড়। বিনিয়োগে প্রবেশাধিকার সহজ করে দেওয়ায় এআই জনপ্রিয় হলেও নিশ্চিত নয়, বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সরঞ্জাম ব্যবহার করছেন কি না। বাজার হঠাৎ পাল্টালে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এই বছর ইউরোপের স্টক্স ৬০০ সূচক প্রায় ১০% বেড়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ১৩% বেড়েছে—যা আগের বছরের ২৩% উল্লম্ফনের পরের ধারা।

লিয়ং বলেন, “মানুষ যদি এআই দিয়ে বিনিয়োগ করে এবং লাভ করতে থাকে, তাহলে বাজারে মন্দা বা সংকট এলে তারা সেটা সামাল দিতে পারবে কি না, সে আশঙ্কা থেকেই যায়।”

জনপ্রিয় সংবাদ

এআই বিপ্লব: শেয়ারবাজারে নতুন ভরসা নাকি অদৃশ্য ঝুঁকি?

০৭:৪৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ

  • • ২০২৯ সালের মধ্যে রোবো-অ্যাডভাইজারি বাজার ৬০০% বাড়বে বলে পূর্বাভাস
  • • খুচরা বিনিয়োগকারীদের অর্ধেক এআই টুল ব্যবহার করতে আগ্রহী
  • • শেয়ার বাছাইয়ে ১৩% খুচরা বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যে ব্যবহার করছেন চ্যাটজিপিটি
  • • এআই নির্বাচিত শেয়ারের ঝুড়ি যুক্তরাজ্যের শীর্ষ তহবিলকে ছাড়িয়ে গেছে

এআই-এর উত্থান ও বিনিয়োগকারীদের নতুন ভরসা

লন্ডন, ২৫ সেপ্টেম্বরঃ চ্যাটজিপিটির তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই অন্তত প্রতি দশজন খুচরা বিনিয়োগকারীর একজন এই চ্যাটবট ব্যবহার করছেন শেয়ার বাছাইয়ে। এতে দ্রুত বেড়ে উঠছে রোবো-অ্যাডভাইজারি বাজার। তবে সমর্থকেরাও সতর্ক করছেন, এই কৌশল ঝুঁকিপূর্ণ এবং এখনও পুরোপুরি প্রথাগত পরামর্শদাতাদের বিকল্প নয়।

এআই প্রযুক্তির কারণে এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীও এমন তথ্য ও বিশ্লেষণ পাচ্ছেন, যা আগে কেবল বড় ব্যাংক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নাগালে ছিল।

দ্রুত সম্প্রসারণশীল রোবো-অ্যাডভাইজারি বাজার

রোবো-অ্যাডভাইজারি বলতে এমন প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়, যারা অ্যালগরিদম-নির্ভর স্বয়ংক্রিয় আর্থিক পরামর্শ দেয়। এখানে ফিনটেক, ব্যাংক থেকে শুরু করে সম্পদ ব্যবস্থাপক সবাই রয়েছে। ডেটা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটসের হিসেবে, ২০২৪ সালের ৬১.৭৫ বিলিয়ন ডলারের বাজার ২০২৯ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ৪৭০.৯১ বিলিয়ন ডলারে।

ডলার কিনে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রাক্তন ব্যাংকারের অভিজ্ঞতা

প্রায় দুই দশক ইউবিএস-এ কাজ করা বিশ্লেষক জেরেমি লিয়ং গত বছর চাকরি ছাড়ার পর থেকে নিজের বিনিয়োগে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন।

তিনি বলেন, “আগের মতো ব্যয়বহুল ব্লুমবার্গ টার্মিনাল বা বাজারের তথ্যভান্ডার আর আমার কাছে নেই। তবুও সাধারণ চ্যাটজিপিটি অনেক কাজ করে দিতে পারে।” তবে তিনি সতর্ক করেন, যেসব তথ্য পেওয়ালের আড়ালে থাকে তা এআই ধরতে পারে না।

জরিপে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি

ব্রোকার eToro বিশ্বজুড়ে ১১ হাজার খুচরা বিনিয়োগকারীর ওপর জরিপ চালায়। ফলাফলে দেখা গেছে, অর্ধেক বিনিয়োগকারী চ্যাটজিপিটি বা গুগলের জেমিনির মতো এআই টুল ব্যবহার করতে আগ্রহী। এদের মধ্যে ১৩% ইতোমধ্যে ব্যবহার করছেন।

যুক্তরাজ্যে তুলনামূলক সংস্থা ফাইন্ডারের জরিপে দেখা গেছে, ৪০% উত্তরদাতা ব্যক্তিগত আর্থিক পরামর্শের জন্য চ্যাটবট বা এআই ব্যবহার করেছেন।

Artificial Intelligence In Marketing | Sprout Social

ঝুঁকির সতর্কবার্তা

চ্যাটজিপিটি নিজেই সতর্ক করে যে এটি পেশাদার আর্থিক পরামর্শের বিকল্প নয়। ওপেনএআই-ও প্রকাশ করেনি, কতজন শেয়ার বাছাইয়ে এই টুল ব্যবহার করছেন।
eToro-র যুক্তরাজ্যের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড্যান মজুলস্কি বলেন, “এআই মডেলগুলো দারুণ কাজ করতে পারে। কিন্তু ঝুঁকি তখনই আসে, যখন মানুষ চ্যাটজিপিটি বা জেমিনির মতো সাধারণ মডেলকে ভবিষ্যদ্বাণীর যন্ত্র হিসেবে ধরে নেয়।”

তার মতে, বাজার বিশ্লেষণে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এআই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করাই নিরাপদ। কারণ সাধারণ মডেল প্রায়ই তারিখ বা সংখ্যা ভুল উদ্ধৃত করতে পারে এবং অতীত তথ্যের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ অনুমান করতে গিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।

এআই নির্বাচিত শেয়ারের সাফল্য

ফাইন্ডার ২০২৩ সালের মার্চে চ্যাটজিপিটিকে মানসম্মত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শেয়ার বাছাই করতে বলে। শর্ত দেওয়া হয়—ঋণের পরিমাণ, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং প্রতিযোগীদের তুলনায় সুবিধা সৃষ্টি করা সম্পদের ভিত্তিতে বাছাই করতে হবে।

৬টি পরিবর্তন নিয়ে আসছে চ্যাটজিপিটি

চ্যাটজিপিটি যে ৩৮টি শেয়ার বেছে নেয়, তার মধ্যে ছিল এনভিডিয়া, অ্যামাজন, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল ও ওয়ালমার্টের মতো কোম্পানি। এই শেয়ারের মূল্য এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫% বেড়েছে, যা যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ১০টি জনপ্রিয় তহবিলের গড় আয়ের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার প্রয়োজন

বিশ্লেষক লিয়ং বলেন, তিনি চ্যাটজিপিটিকে এমনভাবে নির্দেশ দেন—”ধরে নাও তুমি একজন শর্ট অ্যানালিস্ট, এই শেয়ারের শর্ট থিসিস কী?” অথবা “শুধু নির্ভরযোগ্য উৎস ব্যবহার করো, যেমন এসইসি ফাইলিংস।” তার মতে, যত বেশি প্রেক্ষাপট দেওয়া যায়, উত্তর তত ভালো হয়।

তবে ঝুঁকিও বড়। বিনিয়োগে প্রবেশাধিকার সহজ করে দেওয়ায় এআই জনপ্রিয় হলেও নিশ্চিত নয়, বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সরঞ্জাম ব্যবহার করছেন কি না। বাজার হঠাৎ পাল্টালে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এই বছর ইউরোপের স্টক্স ৬০০ সূচক প্রায় ১০% বেড়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ১৩% বেড়েছে—যা আগের বছরের ২৩% উল্লম্ফনের পরের ধারা।

লিয়ং বলেন, “মানুষ যদি এআই দিয়ে বিনিয়োগ করে এবং লাভ করতে থাকে, তাহলে বাজারে মন্দা বা সংকট এলে তারা সেটা সামাল দিতে পারবে কি না, সে আশঙ্কা থেকেই যায়।”