আফগানিস্তান থেকে হামলার অভিযোগ
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগটি বৃহস্পতিবার বলেছেন, আফগানিস্তানে সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে এবং সেখান থেকেই তারা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
তার এই মন্তব্য এসেছে বেলুচিস্তানের ক্রমবর্ধমান অস্থির নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সন্ত্রাসীরা হামলার গতি ও মাত্রা বাড়িয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) বিশেষভাবে নতুন কৌশল ব্যবহার করে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করছে।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে যে সন্ত্রাসীরা আফগান মাটি ব্যবহার করে দেশজুড়ে হামলা চালায়। তবে কাবুল এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
এক সংবাদ সম্মেলনে বুগটি বলেন, “সন্ত্রাসীদের আফগানিস্তানে নিরাপদ আশ্রয় এবং প্রশিক্ষণ শিবির চালানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি নিহত অনেক সন্ত্রাসীই আফগান নাগরিক।
তিনি আফগান তালেবান সরকারকে দোহা চুক্তি মানার আহ্বান জানান। ওই চুক্তিতে আফগানিস্তান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের মাটি কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেবে না।
চাগাই অভিযানের বিবরণ
সংবাদ সম্মেলনে তিনি চাগাই জেলায় পরিচালিত একটি গোয়েন্দা-ভিত্তিক অভিযানের কথা জানান। অভিযানে দুজন নিহত এবং একজন আত্মসমর্পণ করেছে। নিহতদের একজন আইনজীবী ছিলেন।
বুগটি বলেন, ওই আইনজীবীকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সদস্য হত্যার ঘটনায় আটক কয়েকজনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়। কয়েক মাস নজরদারির পর তার বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়। আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালে তাদের পক্ষ থেকে গুলি শুরু হয়।
দুই থেকে তিন ঘণ্টা গোলাগুলি চলে। এতে দুজন সন্ত্রাসী নিহত হয় এবং তাদের এক সঙ্গী আত্মসমর্পণ করে।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগ
এক প্রশ্নের জবাবে বুগটি অভিযোগ করেন, বেলুচিস্তানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে একত্র করার চেষ্টা চলছে এবং এর পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)-এর অর্থায়ন রয়েছে। তার ভাষায়, “এটি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক গোয়েন্দা যুদ্ধ।”
৪জি সেবা বন্ধের যৌক্তিকতা
বুগটি বেলুচিস্তানে ৪জি সেবা বন্ধের বিষয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি দেওয়ার জন্য নয়, বরং সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য।
তার মতে, সন্ত্রাসীরা এমন যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করছে যা গোয়েন্দা সংস্থার সামর্থ্যের বাইরে। তাই মোবাইল সেবা বন্ধ করলে তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
যুবক ও সশস্ত্রদের মধ্যে পার্থক্য
বুগটি জোর দিয়ে বলেন, যেসব যুবক অস্ত্র হাতে নেয়নি তাদের সঙ্গে যারা পাকিস্তান ভাঙতে অস্ত্র নিয়েছে, তাদের পার্থক্য করতে হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, উন্নয়ন বঞ্চনার অজুহাতে কি হত্যাকাণ্ড বৈধ হয়?
তিনি বলেন, “হিংসাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা উন্নয়ন বঞ্চনার সঙ্গে যুক্ত করা ভুল। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”
মানবাধিকার প্রশ্নে সমালোচনা
বেলুচিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন ঘাটতি ও সহিংসতা অব্যাহত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের সমালোচনা করেছে, বিশেষ করে বেলুচ ইয়াকজেহতি কমিটির মেহরাং বেলুচের আন্দোলনের বিষয়ে।
এ প্রসঙ্গে বুগটি বলেন, “আত্মগোপন আর জোরপূর্বক গুমের মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে।” তিনি অভিযোগ করেন, অনেকেই বাস্তবতা যাচাই না করেই প্রচারিত বর্ণনাকে বিশ্বাস করছেন।
পপি নির্মূলের উদ্যোগ
বুগটি জানান, কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকার স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে আফিম চাষ শনাক্ত করবে, যাতে পাকিস্তানের পপি-মুক্ত অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
জাফর এক্সপ্রেস হামলার মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গ
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে বুগটি বলেন, আফগানিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস হামলার মূল পরিকল্পনাকারী রেহমান গুল নিহত হয়েছেন — এমন খবর এখনও নিশ্চিত নয়।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পাওয়া গেছে, তবে শতভাগ নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। যদিও আমি মনে করি এটি একটি বড় সাফল্য, এবং শিগগিরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।”