গ্রেটার নয়ডা: বৈশ্বিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছে—বৃহস্পতিবার এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একইসঙ্গে তিনি মস্কোর সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন, যখন ওয়াশিংটন নয়াদিল্লিকে রুশ তেল কেনা বন্ধ করতে চাপ দিচ্ছে।
উত্তর প্রদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় উদ্বোধনী বক্তব্য
গ্রেটার নয়ডার ইন্ডিয়া এক্সপো সেন্টারে উত্তর প্রদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ইউপিআইটিএস-২০২৫) তৃতীয় আসরের উদ্বোধন করেন মোদি। তিনি বলেন, “আজ ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশের লক্ষ্যের পথে এগোচ্ছে। বিশ্বে যত অস্থিরতা বা ব্যাঘাত ঘটুক, আমাদের প্রবৃদ্ধি প্রশংসনীয়। এই ব্যাঘাত আমাদের বিভ্রান্ত করে না, বরং নতুন দিক খুঁজে বের করার সুযোগ তৈরি করে।”
তিনি স্বনির্ভরতার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন, “এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে যত বেশি কোনো দেশ অন্যের ওপর নির্ভর করবে, ততটাই তার প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ভারতের আর কারো ওপর নির্ভর করার সুযোগ নেই। আমাদের নিজেদের উৎপাদন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। যেকোনো পণ্য ভারতে তৈরি করা সম্ভব হলে, তা ভারতে তৈরি করতে হবে।”
রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা
এই মেলার আন্তর্জাতিক সহযোগী দেশ রাশিয়া। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এবার রাশিয়া সহযোগী দেশ হিসেবে অংশ নিয়েছে। এর মানে হলো আমরা বহু দশকের পুরোনো বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করছি।” তার এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মার্কিন প্রশাসন রুশ তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারত ও চীনকে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রধান অর্থদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।
প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভরতা
মোদি জানান, সশস্ত্র বাহিনী এখন দেশীয় সমাধান খুঁজছে, বাহ্যিক নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে। শিগগিরই রাশিয়ার সহযোগিতায় ভারতে তৈরি হতে শুরু করবে একে২০৩ রাইফেল। উত্তর প্রদেশে প্রতিরক্ষা করিডোর গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রসহ একাধিক অস্ত্রের উৎপাদন শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা খাত তৈরি করছি যেখানে প্রতিটি উপাদান ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’র ছাপ বহন করবে। চিপ থেকে জাহাজ—সবকিছু ভারতেই তৈরি করতে চাই। এজন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সহজ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার ধারাবাহিক কাজ করছে।”
জি.এস.টি. সংস্কারের প্রভাব
প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি চালু হওয়া পণ্য ও পরিষেবা করের (জি.এস.টি.) সংস্কারকে ভারতের অর্থনীতির যাত্রায় এক মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, এই সংস্কার ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও শিল্প খাতে নতুন গতি এনেছে এবং সাধারণ মানুষের মাসিক সঞ্চয়ে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এক হাজার রুপির শার্টে আগের কর ছিল ১৭০ রুপি, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ থেকে ৫০ রুপিতে। হেয়ার অয়েল ও ফেস ক্রিমের কর ৩১ রুপি থেকে নেমে এসেছে মাত্র ৫ রুপিতে। একটি ট্র্যাক্টরের দাম কমেছে ৪০ হাজার রুপি, অটো-রিকশা ২০ হাজার রুপি এবং মোটরসাইকেল ৮-৯ হাজার রুপি। তার দাবি, এতে একটি পরিবার বছরে প্রায় ২৫ হাজার রুপি সাশ্রয় করছে এবং সমগ্র দেশে সাশ্রয় হচ্ছে প্রায় ২.৫ লাখ কোটি রুপি।
তিনি আরও বলেন, “আজ দেশ গর্বের সঙ্গে জি.এস.টি. উদযাপন করছে। ২০১৭ সালে আমরা এই সংস্কার শুরু করেছি এবং ২০২৫ সালে আবারও শক্তিশালী করছি। অর্থনীতি যত মজবুত হবে, করের বোঝাও তত কমবে।”
কংগ্রেসের সমালোচনা
মোদি কংগ্রেসের শাসনামলে দুর্নীতি, কর ফাঁকি এবং জনগণের ওপর করের বোঝার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, “আমাদের সরকারই বৃহৎ পরিসরে কর কমিয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং সাধারণ মানুষের আয় ও সঞ্চয় দুটোই বাড়িয়েছে।”
বানসওয়ারা ও দিল্লিতে জনসভা
এর আগে রাজস্থানের বানসওয়ারায় এক জনসভায় মোদি বলেন, কংগ্রেস সরকার বিদ্যুতের গুরুত্বকে অবহেলা করেছে। তিনি সেখানে ৪২ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তার ভাষায়, “কংগ্রেস আমলে গ্রামে দিনে ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলেই মানুষ খুশি হতো। আজ সেই পরিস্থিতি পাল্টেছে।”
অন্যদিকে, দিল্লিতে বিশ্ব ফুড ইন্ডিয়ার চতুর্থ আসরে তিনি বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোকে ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ভারত বৈচিত্র্য, চাহিদা এবং পরিসরের ত্রিমাত্রিক শক্তি ধারণ করে। পৃথিবীর প্রায় সব ধরনের ফল ও সবজি ভারতে উৎপাদিত হয়। এই বৈচিত্র্য ভারতকে বিশ্বে অনন্য করেছে।”