ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন, আগামী ১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্ট করা ওষুধের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। হোয়াইট হাউসে স্বাক্ষরিত প্রেসিডেন্টের স্মারক প্রকাশ করে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, যে কোনো ওষুধ কোম্পানি যদি যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব ওষুধ তৈরির কারখানা নির্মাণে হাত দেয়, তবে তারা এ শুল্ক থেকে ছাড় পাবে। তাঁর ভাষায়, “কারখানা নির্মাণ শুরু” বলতে বোঝানো হবে জমি খনন বা নির্মাণ কার্যক্রম চলমান থাকা।
ওষুধ ছাড়াও অন্যান্য খাতে শুল্ক
এই পদক্ষেপ শুধু ওষুধেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন—
- রান্নাঘরের ক্যাবিনেটে ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক,
- আসবাবপত্রে (অলঙ্কৃত চেয়ার-সোফা ইত্যাদি) ৩০ শতাংশ,
- ভারী ট্রাকে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে।
তিনি আরও লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের (যেমন পিটারবিল্ট, কেনওয়ার্থ, ফ্রেইটলাইনার, ম্যাক ট্রাক) সহায়তার জন্য বিশ্বজুড়ে নির্মিত সব ভারী ট্রাকের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। এ সিদ্ধান্ত তিনি “জাতীয় নিরাপত্তার” স্বার্থেও প্রয়োজন বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
ভারতের জন্য ঝুঁকি
যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির সবচেয়ে বড় বাজার। বিশেষত কম দামে পাওয়া জেনেরিক ওষুধের ক্ষেত্রে ভারতীয় কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে সাফল্য পাচ্ছে।
২০২৪ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩১,৬২৬ কোটি টাকা) মূল্যের ওষুধ রপ্তানি করেছে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই এ পরিমাণ দাঁড়ায় ৩.৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩২,৫০৫ কোটি টাকা)।
ড. রেড্ডি’স, সান ফার্মা, লুপিন ও অরবিন্দোর মতো বড় ভারতীয় কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সস্তা জেনেরিক বাজার থেকে বহুদিন ধরে লাভবান হয়ে আসছে।
অনিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য প্রভাব
যদিও ট্রাম্পের নতুন শুল্ক মূলত ব্র্যান্ডেড ও পেটেন্ট করা ওষুধকে লক্ষ্য করে, যেখানে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আধিপত্য বেশি, তবুও ভারতের জটিল জেনেরিক ও বিশেষায়িত ওষুধও ভবিষ্যতে এ বিধিনিষেধের আওতায় পড়তে পারে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ভারতীয় রপ্তানি বাজার ইতিমধ্যেই ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা বইছে। এর সঙ্গে ট্রাম্প দাবি করেছেন, রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখায় এর মধ্যে ২৫ শতাংশ “শাস্তিমূলক শুল্ক” অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে এবং বিদেশি নির্ভরতা কমাতে নেওয়া হলেও এর সরাসরি প্রভাব পড়তে যাচ্ছে ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রভাবশালী ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো সামনে বড় ধাক্কার মুখে পড়তে পারে।