মার্কিন তদন্তের নতুন ধাক্কা
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি শিল্প যন্ত্রপাতি বা মেশিন টুলস আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। ২ সেপ্টেম্বর ঘোষিত এই তদন্তকে বলা হচ্ছে ‘সেকশন ২৩২ ইনভেস্টিগেশন’। এতে মেশিন টুলস, শিল্প রোবট ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর শুল্ক বা আমদানি নিয়ন্ত্রণ কতটা প্রয়োজন, তা খতিয়ে দেখা হবে। আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত জনমত গ্রহণ চলবে।
মেশিন টুলসের গুরুত্ব
মেশিন টুলস গাড়ির যন্ত্রাংশ, ছাঁচ এবং সেমিকন্ডাক্টর তৈরির যন্ত্রে অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে—
- • এয়ারক্রাফটের অংশ তৈরির উচ্চ-নির্ভুল যন্ত্র
- • স্ক্রু তৈরির টার্নিং মেশিন
- • গাড়ি উৎপাদনের প্রেসিং মেশিন
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই এসব যন্ত্রপাতির জন্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্ডনারের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ ছিল। তারা ৬৪৮ কোটি ডলারের মেশিন টুলস আমদানি করেছে, অথচ রপ্তানি করতে পেরেছে মাত্র ১৭৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।

জাপান শীর্ষ সরবরাহকারী
জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। ২০২৩ সালে তারা প্রায় ১৫৩ কোটি ডলারের যন্ত্রপাতি রপ্তানি করেছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে জার্মানি, তাদের রপ্তানি ছিল ৮৭ কোটি ডলার। ফলে অনেকেই মনে করছেন, মার্কিন শুল্ক তদন্ত মূলত জাপানকেই প্রধান লক্ষ্য করছে।
ওকুমার উদ্বেগ
জাপানি মেশিন টুলস নির্মাতা ওকুমা যুক্তরাষ্ট্রে বড় বাজার গড়ে তুলেছে। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে তারা আমেরিকায় প্রায় ৬৩ বিলিয়ন ইয়েন (৪২২ মিলিয়ন ডলার) বিক্রি করেছে, যা তাদের মোট আয়ের প্রায় ৩০%। কোম্পানির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যদি খাতভিত্তিক কর আরোপ করা হয়, তাহলে মুনাফা কমে যাবে এবং দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না।
প্রশ্ন উঠেছিল, তারা কি উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নেবে? উত্তরে প্রতিনিধি বলেন, “জাপানি মেশিন টুলস উচ্চ-নির্ভুল অংশের সমন্বয়ে তৈরি। প্রযুক্তি স্থানান্তরসহ নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন শুরু করা কঠিন।”

ইউরোপ ও জাপানের শক্ত অবস্থান
জাপান ও জার্মানি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র তৈরিতে শক্তিশালী অবস্থানে আছে। এসব যন্ত্র বিমানের ইঞ্জিন ও চিকিৎসা সরঞ্জামে অপরিহার্য। যদিও যুক্তরাষ্ট্রেরও কিছু সুবিধা রয়েছে, তবে জাপানি এক নির্মাতা বলেন, “আমাদের প্রতিযোগী মার্কিন কোম্পানি নয়। বরং মার্কিন ক্রেতাদের দাম বৃদ্ধি মেনে নিতে হবে।”
উৎপাদন পুনরুজ্জীবনে প্রতিবন্ধকতা
অতিরিক্ত শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের শিল্পখাত পুনরুজ্জীবনের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চিকিৎসা সরঞ্জাম শিল্পেও এর প্রভাব পড়বে। বিশ্ববাজারের প্রায় অর্ধেকের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে, আর জাপানি কোম্পানিগুলো তাদের মোট বিক্রির প্রায় ৩০% এই বাজারে করে।

চিকিৎসা সরঞ্জামে জাপানের প্রভাব
বিশেষ করে ডায়াগনস্টিক যন্ত্রে জাপানের অবস্থান শক্তিশালী। উদাহরণস্বরূপ, অলিম্পাস কোম্পানি বিশ্বব্যাপী গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এন্ডোস্কোপ বাজারের ৭০% নিয়ন্ত্রণ করে। এসব যন্ত্র জাপানের ফুকুশিমা প্রদেশে তাদের কারখানায় তৈরি হয়।
এ ধরনের যন্ত্র উৎপাদনে বিশেষ দক্ষতা ও কঠোর নিয়মকানুনের কারণে উৎপাদন অন্য কোথাও সরানো সহজ নয়। অলিম্পাস জানিয়েছে, “শুল্ক তদন্ত শুরু হলেও আমরা উৎপাদন স্থানান্তরের কথা ভাবছি না।”
মার্কিন শুল্ক তদন্ত মূলত জাপানি ও ইউরোপীয় মেশিন টুলস শিল্পকে চাপে ফেলবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, যা দেশটির শিল্প পুনরুজ্জীবনের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। একইসঙ্গে, জাপানি কোম্পানিগুলোও বড় বাজারে তাদের ভবিষ্যৎ অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়বে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















