সারসংক্ষেপ
- ট্রাম্প বলেছেন, এরদোয়ান সম্ভবত মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে সফল হবেন
- তুরস্কের প্রেসিডেন্ট মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশায়
- সিরিয়া বিষয়ে ট্রাম্প-এরদোয়ানের অবস্থান কাছাকাছি, তবে ইসরায়েল ইস্যুতে মতভিন্নতা
- বোয়িংসহ একাধিক বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা
ওয়াশিংটন, ২৫ সেপ্টেম্বর – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন তুরস্ক তার অনুরোধে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। এর বিনিময়ে তিনি আঙ্কারার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা ভাবছেন, যাতে তুরস্ক আধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে পারে।
হোয়াইট হাউসে বৈঠক
ট্রাম্প দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনায় বিভিন্ন বিষয়ে ‘খুবই সিদ্ধান্তমূলক’ ফল এসেছে। তবে বিস্তারিত জানাননি, কেবল বলেছেন শিগগিরই ঘোষণা দেওয়া হবে।

রুশ তেল কেনা বন্ধের চাপ
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন থামাতে ট্রাম্প ইউরোপীয় দেশগুলোকে রুশ তেল কেনা বন্ধ করতে চাপ দিয়ে আসছেন। এর পরিবর্তে তিনি মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছেন, যাতে যুদ্ধের অর্থায়ন বন্ধ হয়।
তিনি উল্লেখ করেন, তুরস্ক চাইলে অন্যান্য অনেক দেশ থেকেও তেল কিনতে পারে। ট্রাম্প বলেন, “আমি বিশ্বাস করি এরদোয়ান রুশ তেল কেনা বন্ধ করবেন।”
হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া এখনও রুশ তেল কিনলেও, তাদের বিকল্প জ্বালানি উৎস সীমিত থাকায় ট্রাম্প সেদিকে কঠোর অবস্থান নেননি।
এরদোয়ানের লক্ষ্য: মার্কিন সম্পর্ক জোরদার
প্রায় ছয় বছর পর এরদোয়ান হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন মূলত নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে এফ-৩৫ কেনার অনুমোদন পাওয়ার আশায়।
ওভাল অফিসে পাশাপাশি বসে ট্রাম্প এরদোয়ানকে “খুব কঠিন মানুষ” বলে অভিহিত করেন, তবে স্বীকার করেন যে তারা বন্ধু। বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালে মার্কিন-তুরস্ক সম্পর্ক বেশ দূরত্বে ছিল, বিশেষ করে তুরস্কের রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতার কারণে।
তুরস্ক এখন ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগাতে চায়, যাতে প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য চুক্তিতে সুবিধা পাওয়া যায়।
এফ-৩৫ নিয়ে সম্ভাব্য সমঝোতা
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি তিনি (এরদোয়ান) যা কিনতে চান, তাতে সফল হবেন।” তিনি আরও বলেন, খুব শিগগিরই তুরস্কের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে, “প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে” যদি বৈঠক ভালো হয়।
প্রথম মেয়াদে তাদের সম্পর্ক অনেক ওঠানামা করলেও, এবার ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর সিরিয়া ইস্যুতে দুজনের অবস্থান একই দিকে। উভয়েই এখন সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন করছে।

নিষেধাজ্ঞা ও এফ-৩৫ বিতর্ক
২০২০ সালে তুরস্ক রুশ এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনলে ট্রাম্প নিজেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। এর ফলে তুরস্ক এফ-৩৫ কেনার পাশাপাশি যৌথ উৎপাদন থেকেও বাদ পড়ে।
এখন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে আঙ্কারা আবার লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে পারবে। এছাড়া ৪০টি এফ-১৬ কেনার আলোচনাও চলছে।
এরদোয়ান আগেই বলেছিলেন, প্রতিরক্ষা শিল্প, আঞ্চলিক সংঘাত, জ্বালানি ও বাণিজ্য—সবই আলোচনায় থাকবে।
তুরস্কের সামরিক চাহিদা
ন্যাটোতে দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী হিসেবে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগরে ক্রমবর্ধমান হুমকির মোকাবিলায় বিমানশক্তি বাড়াতে চায়। রাশিয়া ও ইউক্রেনের সন্নিকটে থাকায় এ পদক্ষেপ তাদের জন্য জরুরি বলে মনে করে আঙ্কারা।
ট্রাম্প-এরদোয়ান বৈঠক নতুন এক পর্যায়ে মার্কিন-তুরস্ক সম্পর্ককে নিয়ে গেছে। রুশ তেল, নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধবিমান কেনা—সব মিলিয়ে এটি শুধু দুই দেশের নয়, পুরো অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















