বড় অঙ্কের চুক্তি স্বাক্ষর
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেডের (এইচএএল) সঙ্গে ৬২ হাজার ৩৭০ কোটি রুপির একটি বড় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) জন্য আরও ৯৭টি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ এমকে-১এ) ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কেনা হবে। বিমানবাহিনী বর্তমানে যুদ্ধবিমানের ঘাটতিতে ভুগছে, এই চুক্তি সেই সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সরবরাহের সময়সূচি
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, এসব বিমান সরবরাহ শুরু হবে ২০২৭-২৮ সালে এবং ছয় বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে থাকবে ৬৮টি যুদ্ধবিমান এবং ২৯টি দ্বি-আসনের প্রশিক্ষণ বিমান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি গত আগস্টে চুক্তিটি অনুমোদন করে।
দেশীয় প্রযুক্তি ও স্বনির্ভরতা
চুক্তির আওতায় আসা বিমানে দেশীয় উপাদানের ব্যবহার ৬৪ শতাংশের বেশি হবে। আগের সংস্করণের তুলনায় এতে ৬৭টি অতিরিক্ত উপকরণ যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেশেই তৈরি উন্নত প্রযুক্তি—উত্তম এএসইএ রাডার, স্বয়ং প্রতিরক্ষা কভচ ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা এবং নতুন কন্ট্রোল সারফেস অ্যাকচুয়েটর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, এসব সংযোজন আত্মনির্ভর ভারতের উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করবে। প্রকল্পটিতে সরাসরি প্রায় ১০৫টি ভারতীয় কোম্পানি উপাদান সরবরাহ করবে।
প্রতিরক্ষা ক্রয়ের ধরন
এই অধিগ্রহণটি ‘বাই (ইন্ডিয়ান-আইডিডিএম)’ ধারা অনুযায়ী করা হচ্ছে। আইডিডিএম মানে হলো—দেশীয়ভাবে নকশা করা, উন্নয়ন করা এবং তৈরি করা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, এলসিএ এমকে-১এ হলো দেশীয়ভাবে তৈরি সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান, যা বিমানবাহিনীর আধুনিক চাহিদা মেটাতে শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
প্রত্যাশার চেয়ে আগে চুক্তি
এই চুক্তি এখনই স্বাক্ষর হওয়াটা অনেকের কাছে বিস্ময়কর, কারণ অনুমান করা হয়েছিল এটি হবে কেবল তখনই যখন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমানবাহিনীর হাতে আগেই অর্ডার দেওয়া ৮৩টি এলসিএ এমকে-১এ থেকে প্রথম দুটি হস্তান্তর করবে। ওই চুক্তি হয়েছিল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যার মূল্য ছিল ৪৮ হাজার কোটি রুপি।
অস্ত্র পরীক্ষা ও বিলম্বের শঙ্কা
বর্তমানে দুটি এলসিএ এমকে-১এ অত্যাধুনিক অস্ত্র পরীক্ষার মধ্যে আছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্নত শর্ট রেঞ্জ আকাশ-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র (এএসআরএএএম)। এরপর হবে অস্ত্রের বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ ক্ষেপণাস্ত্রের (বিভিআরএএআর) পরীক্ষা, যা সেমিলাক নিরাপত্তা বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়ার পর সম্পন্ন হবে। অক্টোবর থেকে প্রথম দুটি বিমান আইএএফের হাতে দেওয়া হবে অস্ত্র পরীক্ষা শেষ হলে। তবে বিমানবাহিনী উদ্বিগ্ন যে, এলসিএ এমকে-১এ প্রকল্পে বিলম্ব হলে নতুন যুদ্ধবিমান যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাবে, যা তাদের প্রস্তুতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।
মিগ-২১ এর পরিবর্তে
চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এমন সময়, যখন বিমানবাহিনী তাদের সর্বশেষ মিগ-২১ যুদ্ধবিমান বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিলম্বিত এলসিএ এমকে-১এ বিমানগুলোই সোভিয়েত আমলের ওই বিমানগুলোর বিকল্প হবে।
ইঞ্জিন চুক্তি
এইচএএল এখন আরও একটি বড় চুক্তির অপেক্ষায় আছে। মার্কিন কোম্পানি জিই অ্যারোস্পেসের সঙ্গে এক বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি হওয়ার কথা, যার আওতায় ১১৩টি এফ-৪০৪ আইএন২০ ইঞ্জিন কেনা হবে নতুন ৯৭টি বিমান চালানোর জন্য।
স্কোয়াড্রন ঘাটতি
বর্তমানে বিমানবাহিনী প্রায় ৩০টি যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রন পরিচালনা করছে, অথচ অনুমোদিত সংখ্যা ৪২ দশমিক ৫। এই ঘাটতি পূরণে নতুন চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশেষজ্ঞের মতামত
কৌশল বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল অনিল চোপড়া বলেন, “এই নতুন চুক্তি প্রমাণ করে বিমানবাহিনী এইচএএল-এর প্রতি আস্থা রাখে। এখন দায়িত্ব তাদের, যত দ্রুত সম্ভব অর্ডারকৃত বিমান সরবরাহ করতে হবে, যাতে বিমানবাহিনী তাদের শক্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।”