চলচ্চিত্র পরিচিতি
চলচ্চিত্র: হিরোস আইল্যান্ড (জাপানি শিরোনাম: তাকরাজিমা)
সময়: ১৯১ মিনিট
ভাষা: জাপানি ও ইংরেজি
এখন প্রদর্শিত হচ্ছে
অভিনেতা সুজু হিরোসে, সাতোশি তসুমাবুকি ও মাসাতাকা কুবোটা অভিনীত এই ছবিতে যুদ্ধ-পরবর্তী ওকিনাওয়ার অস্থির পরিস্থিতিতে শৈশবের বন্ধুদের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
প্রেক্ষাপট ও কাহিনি
ছবির এক পর্যায়ে গোয়েন্দা গুসুকু (সাতোশি তসুমাবুকি) বলেন, “যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে এই দ্বীপে শান্তি আসেনি।” উক্তিটি বলা হয় ১৯৭০ সালে, অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে তার ২৫ বছর আগে। বাস্তবে ওকিনাওয়ার জন্য যুদ্ধের ক্ষত মুছে ফেলা সহজ ছিল না।
১৯৫২ সালে জাপান থেকে মিত্র বাহিনীর দখল শেষ হলেও ওকিনাওয়া আরও দুই দশক যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কেসুকে ওতোমোর এই ১৯১ মিনিটের বিস্তৃত ড্রামা সেই সময়কে কেন্দ্র করেই নির্মিত, যা জুনজো শিনদোর ২০১৮ সালের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি।
প্রথমে দেখা যায়, গুসুকু একদল “সেনকা আগিয়া”-র সদস্য, যারা মার্কিন সেনা ঘাঁটি থেকে মালামাল চুরি করে স্থানীয়দের মধ্যে বিলিয়ে দেয়। কিন্তু এক অভিযানে মার্কিন সেনাদের হাতে ধরা পড়ে তাদের নেতা ‘অন’ (এইতা নাগায়ামা) নিখোঁজ হয়ে যায়।
এরপর গুসুকু ও তার দুই শৈশব বন্ধু—অন-এর ভাই রেই (মাসাতাকা কুবোটা) ও প্রেমিকা ইয়ামাকো (সুজু হিরোসে)—বছরের পর বছর চেষ্টা চালায় নিখোঁজ সঙ্গীর খোঁজে। গুসুকু পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়, রেই জড়িয়ে পড়ে অপরাধ জগতে, আর ইয়ামাকো শিক্ষকতার পেশা নেয়। তবে স্কুলে মার্কিন বিমানের দুর্ঘটনার পর সে প্রতিবাদ আন্দোলনে যুক্ত হয়।
নির্মাণশৈলী ও ভিজ্যুয়াল
চলচ্চিত্রের নির্মাণশৈলী অত্যন্ত যত্নসহকারে সাজানো হয়েছে। যুদ্ধ-পরবর্তী কোজার (বর্তমান ওকিনাওয়া সিটি) অবস্থা—মাটির রাস্তা, অস্থায়ী বারের পরিবেশ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে আধুনিকায়নের দৃশ্য—নির্ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে চিত্রগ্রাহক দাইসুকে সোমার দানাদার, অতিরিক্ত কনট্রাস্টযুক্ত ভিজ্যুয়াল ও বিষণ্ণ সেপিয়া টোন দর্শনকে অস্বস্তিকর করে তুলেছে।
কোজা দাঙ্গা ও নাটকীয়তা
ছবির সবচেয়ে বড় অংশ হলো ১৯৭০ সালের কোজা দাঙ্গার পুনর্নির্মাণ, যখন স্থানীয়রা মার্কিন দখলদারদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আগুন ও সহিংসতায় ফেটে পড়ে। ওতোমো এ দৃশ্য অসাধারণ দক্ষতায় নির্মাণ করলেও এর পর গল্প দ্রুত গতি হারায়।
সীমাবদ্ধতা ও সমালোচনা
‘হিরোস আইল্যান্ড’ আরও তীব্র রাজনৈতিক অবস্থান নিতে পারত, কিন্তু উপন্যাসের অনেক কষ্টদায়ক ঘটনা এবং স্থানীয় উপভাষা সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দর্শককে অন্যায়ের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা দেখানো হয়নি, ফলে ক্ষোভের তীব্রতা হারিয়ে গেছে। একমাত্র উল্লেখযোগ্য মার্কিন চরিত্রকেও অত্যন্ত সহানুভূতিশীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
চরিত্রায়নও দুর্বল। মূল চরিত্রগুলো একঘেয়ে মনে হয়, যেখানে সহ-অভিনেতা শিনিয়া সুকামোতো, কুমি তাকিউচি ও শোগেনের ছোট চরিত্রগুলো বেশি স্মরণীয় হয়ে ওঠে।
অবশেষে ‘অন’-এর নিখোঁজ রহস্যের সমাধান মেলে, তবে তা বেশ দুর্বল এবং দীর্ঘ অপেক্ষার সঠিক প্রতিদান দেয় না। তবুও তিন ঘণ্টার যাত্রা একেবারেই নিরর্থক নয়—এর ভেতরে সময়কালীন বিশদ চিত্রায়ণ ও আবেগপূর্ণ মুহূর্ত রয়েছে।
কেসুকে ওতোমোর ‘হিরোস আইল্যান্ড’ ইতিহাস ও আবেগের মিশ্রণে তৈরি হলেও এর মধ্যে তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক বক্তব্যের ঘাটতি রয়েছে। ছবিটি চমৎকারভাবে নির্মিত হলেও দর্শকের মনে গভীর প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে।