ভারতের কঠোর সমালোচনা
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ভারত তীব্র সমালোচনা করেছে। ভারতের দাবি, শরিফের বক্তব্য আসলে সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং তথ্য বিকৃতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ।
ভারতের স্থায়ী মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি পেতাল গাহলট পাল্টা জবাব দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করে বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আবারও সন্ত্রাসবাদকে মহিমান্বিত করেছেন, যা তাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু। তিনি উল্লেখ করেন, যত নাটকই হোক কিংবা যত মিথ্যাই বলা হোক, সত্য লুকানো যায় না।
‘অপারেশন সিন্দুর’ ও বিতর্কিত দাবি
শরিফ তার ভাষণে মে মাসে হওয়া চার দিনের সংঘর্ষে ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর প্রসঙ্গ তোলেন এবং দাবি করেন যে সাতটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান অমর প্রীত সিং স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ওই অভিযানে ভারতীয় বাহিনী পাঁচটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ও একটি বড় বিমান ভূপাতিত করেছিল।
গাহলট আরও মনে করিয়ে দেন, চলতি বছরের এপ্রিলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান “দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট” নামের এক পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠনকে কাশ্মীরে পর্যটক হত্যার দায় থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল।
পাকিস্তানি সন্ত্রাসী ঘাঁটির বিরুদ্ধে অভিযান
ভারত ৭ মে পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার (যেখানে ২৬ জন নিহত হন) প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী অবকাঠামোর বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালায়।
গাহলট বলেন, অভিযানে বাহাওয়ালপুর ও মুরিদকে ভারতীয় বাহিনী সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করেছে, যার প্রমাণ রয়েছে ছবিতে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যখন পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতারা প্রকাশ্যে কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের প্রশংসা করেন, তখন এই সরকারের মানসিকতা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে কি?
পাকিস্তানের দ্বিচারিতা ও ওসামা বিন লাদেন ইস্যু
ভারত মনে করিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তান বছরের পর বছর সন্ত্রাসবাদ রপ্তানি করছে। গাহলট কড়া ভাষায় বলেন, পাকিস্তান এমন এক দেশ, যে ওসামা বিন লাদেনকে এক দশক আশ্রয় দিয়েছিল, অথচ তখনও তারা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অংশীদার হওয়ার ভান করছিল। সম্প্রতি পাকিস্তানের মন্ত্রীরা নিজেরাই স্বীকার করেছেন যে দশকের পর দশক ধরে তারা সন্ত্রাসী শিবির পরিচালনা করে আসছে।
ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রস্তাব
শরিফ তার বক্তব্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশংসা করে বলেন, তার প্রচেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধ ঠেকাতে সাহায্য করেছে। পাকিস্তান নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে মনোনীত করেছিল।
ভারত তবে মনে করিয়ে দিয়েছে, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত মূলত দুই দেশের সামরিক প্রধানদের সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছিল।
কাশ্মীর প্রসঙ্গ আবারও উত্থাপন
প্রতিবছরের মতো এ বছরও শাহবাজ শরিফ কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের জনগণ কাশ্মীরিদের পাশে রয়েছে এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরিরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে।
পাকিস্তানের বক্তব্য
শরিফ দাবি করেন, পাকিস্তান সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ নিন্দা করে এবং তার দেশ বহিরাগত অর্থায়নে পরিচালিত গোষ্ঠী যেমন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান ও বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঘৃণাত্মক বক্তব্য, বৈষম্য কিংবা ধর্মীয় সহিংসতার কোনো স্থান থাকা উচিত নয়।
জাতিসংঘে শাহবাজ শরিফের বক্তব্য ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও তিক্ততা প্রকাশ পেল। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন ও আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করল, আর পাকিস্তান আবারও কাশ্মীর ইস্যু সামনে আনল। এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অভিযোগ পাল্টাপাল্টি অবস্থান আরও স্পষ্ট হলো।