০২:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ তৎপরতা যশোর এখন বাংলাদেশের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ওমানের দুর্ঘটনায় নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে আট মাস পর ভারতে আটক ১২ বাংলাদেশি নাবিকের দেশে ফেরা নারী অধিকার ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নে ইলা মিত্রের শতবর্ষে নওগাঁয় র‌্যালি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভেনিজুয়েলা: সামরিক প্রস্তুতি ও দুর্বলতা ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুধ খামার বিক্রয়: লাভজনক সুযোগ এবং সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য গঠনমূলক পদক্ষপে ভারতের রুশ তেল কেনার বিষয়ে ট্রাম্পের দাবির প্রতিক্রিয়া ইরানে পুরানো ক্ষত পুনরুজ্জীবিত: মার্কিন ও ইসরাইলি আক্রমণে উদ্বেগের নতুন ঢেউ

চার্লস শোভরাজকে দু’বার ধরেছিলেন ইনস্পেক্টর জেন্দে: সত্য কাহিনির নায়ক এখন নেটফ্লিক্সে

নেটফ্লিক্সে নতুন কাহিনি

ফরাসি সিরিয়াল কিলার চার্লস শোভরাজের গল্প ‘দ্য সার্পেন্ট’ সিরিজের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়েছে। এবার নেটফ্লিক্স এনেছে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ—এক ভারতীয় পুলিশ অফিসারের কাহিনি, যিনি এই কুখ্যাত খুনিকে দু’বার ধরেছিলেন।

‘ইনস্পেক্টর জেন্দে’ নামের ছবিতে শিরোনাম চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউড অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী। খুনির ভূমিকায় আছেন জিম সারভ, যাকে সিনেমায় ‘কার্ল ভুজরাজ’ নামে দেখানো হয়েছে। কাহিনি আবর্তিত হয় ১৯৮৬ সালের তিন সপ্তাহের মধ্যে, যখন পুলিশ আর অপরাধী এক বিড়াল-ইঁদুর খেলায় লিপ্ত হয়।

জেলের ভেতর থেকে নাটকীয় পালানো

১৯৭৬ সাল থেকে দিল্লির তিহার জেলে খুনের মামলায় ১২ বছরের সাজা কাটছিল শোভরাজ। ১৯৮৬ সালের ১৬ মার্চ তিনি জেলকর্মী ও কয়েদিদের মাদক-মিশ্রিত মিষ্টি খাইয়ে পালিয়ে যান। কয়েকদিনের মধ্যে মুম্বাইয়ে তার খোঁজ মেলে। তখনই দায়িত্ব পান ইনস্পেক্টর মধুকর জেন্দে—কারণ ১৯৭১ সালে তিনি একবার শোভরাজকে ধরেছিলেন।

BBC Marathi Photos of Charles Shobhraj (left) and Inspector Zende

জেন্দের খ্যাতি

৮৮ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত এই অফিসার বিবিসিকে বলেন, বহু কুখ্যাত অপরাধীকে ধরলেও আন্তর্জাতিক অপরাধী শোভরাজকে গ্রেপ্তার করাই তাকে ‘সুপারকপ’ খেতাব এনে দেয়। শোভরাজ জন্মেছিলেন সাইগন-এ, ভারতীয় বাবা ও ভিয়েতনামি মায়ের ঘরে। পরে তিনি ফ্রান্সে বড় হন।

১৯৭০ সালে দিল্লির একটি পাঁচতারা হোটেলে গয়নার দোকান থেকে ডাকাতি করে তিনি প্রথম আলোচনায় আসেন। এক বছর পর মুম্বাইয়ে জেন্দে তাকে গ্রেপ্তার করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই হাসপাতালের বাথরুমের পাইপ বেয়ে পালিয়ে যান শোভরাজ।

আন্তর্জাতিক অপরাধী শোভরাজ

পরবর্তী পাঁচ বছরে তিনি ভারত, নেপাল ও থাইল্যান্ডে একের পর এক খুন করেন। তরুণ বিদেশি নারী তার প্রধান লক্ষ্য ছিল। পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার দক্ষতার জন্য তাকে বলা হতো “দ্য সার্পেন্ট”। আর পশ্চিমা নারীদের হত্যার কারণে ডাকনাম পায় “বিকিনি কিলার”। ইন্টারপোল তার নামে রেড কর্নার নোটিশ জারি করে।

১৯৭৬ সালে দিল্লি পুলিশ ৪০ ফরাসি শিক্ষার্থীকে মাদক খাইয়ে ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে। একই বছর মুম্বাইয়ের এক ফরাসি পর্যটক হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি তিহার জেলে যান।

Netflix Bollywood actor Jim Sarbh plays the serial killer Charles Shobhraj in Netflix film Inspector Zende

আবারও ইনস্পেক্টর জেন্দের মিশন

১৯৮৬ সালের জেল ভাঙার পর আবার দায়িত্ব দেওয়া হয় জেন্দেকে। তিনি মনে করেন, শোভরাজ গোয়া থেকে নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রে পালানোর চেষ্টা করবে। গোয়ায় বিখ্যাত ও’কোকেয়োরো রেস্তোরাঁয় নজরদারি বসানো হয়—সেখানে বিদেশিদের আন্তর্জাতিক ফোন করার সুবিধা ছিল।

৬ এপ্রিল রাতে পাকিস্তান-ভারত হকি ম্যাচ চলছিল, একইসঙ্গে সেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানও হচ্ছিল। ঠিক রাত ১০টা ৩০ মিনিটে শোভরাজ ভেতরে ঢুকতেই জেন্দে তাকে চিনে ফেলেন। এভাবেই ঘটে নাটকীয় গ্রেপ্তার।

নায়ক হয়ে ওঠা

এই গ্রেপ্তারের পর ভারতজুড়ে জেন্দে আলোচিত হন। সংবাদপত্রে শিরোনাম হয় “জেন্দাবাদ”। তিনি রাষ্ট্রপতির সাহসিকতার পদক পান, চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতের তারকারা তার অটোগ্রাফ চান। এমনকি গোয়ার সেই রেস্তোরাঁ একটি “জেন্দে প্ল্যাটার” চালু করে তার নামে।

Netflix A still from the film Inspector Zende which shows Manoj Bajpayee and other actors playing policemen in his team that captured Shobhraj

শোভরাজের পরিণতি

গ্রেপ্তারের পর আবারও শোভরাজ কারাগারে যান। পরে দাবি করেন, পালানো ছিল সাজা দীর্ঘায়িত করার কৌশল, যাতে থাইল্যান্ডে তাকে মৃত্যুদণ্ডে পাঠানো না যায়। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়ে তিনি ফ্রান্সে ফিরে যান এবং সাক্ষাৎকার দিয়ে অর্থ উপার্জন করেন।

২০০৩ সালে নেপালে ফেরার পর তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭৫ সালের দুই খুনের মামলায় সেখানে তিনি ১৯ বছর জেলে ছিলেন। ২০২২ সালে বয়স ও আচরণের কারণে মুক্তি পেয়ে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়।

জেন্দের বর্তমান ভাবনা

জেন্দেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি এখনো কি শোভরাজের খোঁজখবর রাখেন? তিনি বলেন, “তার সাজা শেষ হয়েছে, এখন তার বয়স ৮১। আমি আর তার ব্যাপারে ভাবি না।”

Netflix Bollywood actor Jim Sarbh plays the serial killer Charles Shobhraj in Netflix film Inspector Zende

 

BBC Marathi Inspector Zende

জনপ্রিয় সংবাদ

তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব

চার্লস শোভরাজকে দু’বার ধরেছিলেন ইনস্পেক্টর জেন্দে: সত্য কাহিনির নায়ক এখন নেটফ্লিক্সে

১১:০০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নেটফ্লিক্সে নতুন কাহিনি

ফরাসি সিরিয়াল কিলার চার্লস শোভরাজের গল্প ‘দ্য সার্পেন্ট’ সিরিজের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়েছে। এবার নেটফ্লিক্স এনেছে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ—এক ভারতীয় পুলিশ অফিসারের কাহিনি, যিনি এই কুখ্যাত খুনিকে দু’বার ধরেছিলেন।

‘ইনস্পেক্টর জেন্দে’ নামের ছবিতে শিরোনাম চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউড অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী। খুনির ভূমিকায় আছেন জিম সারভ, যাকে সিনেমায় ‘কার্ল ভুজরাজ’ নামে দেখানো হয়েছে। কাহিনি আবর্তিত হয় ১৯৮৬ সালের তিন সপ্তাহের মধ্যে, যখন পুলিশ আর অপরাধী এক বিড়াল-ইঁদুর খেলায় লিপ্ত হয়।

জেলের ভেতর থেকে নাটকীয় পালানো

১৯৭৬ সাল থেকে দিল্লির তিহার জেলে খুনের মামলায় ১২ বছরের সাজা কাটছিল শোভরাজ। ১৯৮৬ সালের ১৬ মার্চ তিনি জেলকর্মী ও কয়েদিদের মাদক-মিশ্রিত মিষ্টি খাইয়ে পালিয়ে যান। কয়েকদিনের মধ্যে মুম্বাইয়ে তার খোঁজ মেলে। তখনই দায়িত্ব পান ইনস্পেক্টর মধুকর জেন্দে—কারণ ১৯৭১ সালে তিনি একবার শোভরাজকে ধরেছিলেন।

BBC Marathi Photos of Charles Shobhraj (left) and Inspector Zende

জেন্দের খ্যাতি

৮৮ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত এই অফিসার বিবিসিকে বলেন, বহু কুখ্যাত অপরাধীকে ধরলেও আন্তর্জাতিক অপরাধী শোভরাজকে গ্রেপ্তার করাই তাকে ‘সুপারকপ’ খেতাব এনে দেয়। শোভরাজ জন্মেছিলেন সাইগন-এ, ভারতীয় বাবা ও ভিয়েতনামি মায়ের ঘরে। পরে তিনি ফ্রান্সে বড় হন।

১৯৭০ সালে দিল্লির একটি পাঁচতারা হোটেলে গয়নার দোকান থেকে ডাকাতি করে তিনি প্রথম আলোচনায় আসেন। এক বছর পর মুম্বাইয়ে জেন্দে তাকে গ্রেপ্তার করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই হাসপাতালের বাথরুমের পাইপ বেয়ে পালিয়ে যান শোভরাজ।

আন্তর্জাতিক অপরাধী শোভরাজ

পরবর্তী পাঁচ বছরে তিনি ভারত, নেপাল ও থাইল্যান্ডে একের পর এক খুন করেন। তরুণ বিদেশি নারী তার প্রধান লক্ষ্য ছিল। পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার দক্ষতার জন্য তাকে বলা হতো “দ্য সার্পেন্ট”। আর পশ্চিমা নারীদের হত্যার কারণে ডাকনাম পায় “বিকিনি কিলার”। ইন্টারপোল তার নামে রেড কর্নার নোটিশ জারি করে।

১৯৭৬ সালে দিল্লি পুলিশ ৪০ ফরাসি শিক্ষার্থীকে মাদক খাইয়ে ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে। একই বছর মুম্বাইয়ের এক ফরাসি পর্যটক হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি তিহার জেলে যান।

Netflix Bollywood actor Jim Sarbh plays the serial killer Charles Shobhraj in Netflix film Inspector Zende

আবারও ইনস্পেক্টর জেন্দের মিশন

১৯৮৬ সালের জেল ভাঙার পর আবার দায়িত্ব দেওয়া হয় জেন্দেকে। তিনি মনে করেন, শোভরাজ গোয়া থেকে নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রে পালানোর চেষ্টা করবে। গোয়ায় বিখ্যাত ও’কোকেয়োরো রেস্তোরাঁয় নজরদারি বসানো হয়—সেখানে বিদেশিদের আন্তর্জাতিক ফোন করার সুবিধা ছিল।

৬ এপ্রিল রাতে পাকিস্তান-ভারত হকি ম্যাচ চলছিল, একইসঙ্গে সেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানও হচ্ছিল। ঠিক রাত ১০টা ৩০ মিনিটে শোভরাজ ভেতরে ঢুকতেই জেন্দে তাকে চিনে ফেলেন। এভাবেই ঘটে নাটকীয় গ্রেপ্তার।

নায়ক হয়ে ওঠা

এই গ্রেপ্তারের পর ভারতজুড়ে জেন্দে আলোচিত হন। সংবাদপত্রে শিরোনাম হয় “জেন্দাবাদ”। তিনি রাষ্ট্রপতির সাহসিকতার পদক পান, চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতের তারকারা তার অটোগ্রাফ চান। এমনকি গোয়ার সেই রেস্তোরাঁ একটি “জেন্দে প্ল্যাটার” চালু করে তার নামে।

Netflix A still from the film Inspector Zende which shows Manoj Bajpayee and other actors playing policemen in his team that captured Shobhraj

শোভরাজের পরিণতি

গ্রেপ্তারের পর আবারও শোভরাজ কারাগারে যান। পরে দাবি করেন, পালানো ছিল সাজা দীর্ঘায়িত করার কৌশল, যাতে থাইল্যান্ডে তাকে মৃত্যুদণ্ডে পাঠানো না যায়। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়ে তিনি ফ্রান্সে ফিরে যান এবং সাক্ষাৎকার দিয়ে অর্থ উপার্জন করেন।

২০০৩ সালে নেপালে ফেরার পর তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭৫ সালের দুই খুনের মামলায় সেখানে তিনি ১৯ বছর জেলে ছিলেন। ২০২২ সালে বয়স ও আচরণের কারণে মুক্তি পেয়ে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়।

জেন্দের বর্তমান ভাবনা

জেন্দেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি এখনো কি শোভরাজের খোঁজখবর রাখেন? তিনি বলেন, “তার সাজা শেষ হয়েছে, এখন তার বয়স ৮১। আমি আর তার ব্যাপারে ভাবি না।”

Netflix Bollywood actor Jim Sarbh plays the serial killer Charles Shobhraj in Netflix film Inspector Zende

 

BBC Marathi Inspector Zende