প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা দ্বিগুণ
সম্প্রতি পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা ও বর্ষার কারণে হাজারো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবারকে দেওয়া ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এক কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই কোটি টাকা করেছেন। সেনেটের এক বৈঠকে জানানো হয়, এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মানুষ মারা গেছেন এবং আরও হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
প্রভাবিত মানুষের সংখ্যা ও জেলা অনুযায়ী পরিস্থিতি
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তরের (UNOCHA) জরিপ অনুযায়ী, পাঞ্জাবের ১৮টি জেলায় ৪২ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুধু মুজাফফরগড়ে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা মোটের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি।
- • মুজাফফরগড়: সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
- • ঝান্গ: ৬ লাখ ৪৬ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত (১৫.৩ শতাংশ)
- • বাহাওলপুর: ৫ লাখ ১৪ হাজার (১২.২ শতাংশ)
- • খানেওয়াল: ৩ লাখ ৯৭ হাজার (৯.৪ শতাংশ)
- • মুলতান: ৩ লাখ ৪৭ হাজার (৮.২ শতাংশ)
এ ছাড়া ভেহারি, বাহাওয়ালনগর, হাফিজাবাদ, ওকারা, চিনিওট, গুজরাট, রহিম ইয়ার খান, কাসুর, সিয়ালকোট, মান্ডি বাহাউদ্দিন, নারোয়াল, ডেরা গাজি খান ও গুজরানওয়ালা জেলাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাসস্থান ধ্বংস ও বাস্তুচ্যুতি
জরিপে দেখা গেছে, ১ লাখ ৬১ হাজার বাড়ির মধ্যে প্রায় ৪৬ হাজার সম্পূর্ণ বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১ লাখ ১৫ হাজার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে প্রায় ২৮ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যেতে বাধ্য হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুজাফফরগড়, রহিম ইয়ার খান, খানেওয়াল ও ঝান্গে।
আশ্রয়হীন মানুষদের জরুরি ভিত্তিতে তাঁবু, প্লাস্টিক শিট, টিন, উষ্ণ কাপড়, মশারি, কম্বল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ক্ষতি
১৮ জেলায় মোট ৭৪২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ৩৯৫টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাহাওয়ালনগর, ঝান্গ ও মুজাফফরগড়ে।
স্বাস্থ্যসেবায় এই ক্ষতি চিকিৎসা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। জরিপে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ম্যালেরিয়া, ত্বকের রোগ ও ডায়রিয়া ব্যাপক আকারে ছড়াচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি
বন্যায় ৬৬৭টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৪ শতাংশই মেয়েদের স্কুল। এ ছাড়া ২১৭টি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, ফলে এক লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটেছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিয়ালকোটে (২১০ স্কুল), এরপর ঝান্গ (১১০), গুজরাট (৮৩), মুজাফফরগড় ও কোট আদ্দু (৮২টি করে), রহিম ইয়ার খান (১৫)।
কৃষি, পশুপালন ও খাদ্য সংকট
বন্যায় কৃষিজমি, ফসল ও গবাদিপশু ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিকদের কাজও কমে গেছে। এতে বহু পরিবার আয়ের পথ হারিয়েছে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিবারের খাদ্য মজুত মাত্র এক সপ্তাহের জন্য যথেষ্ট। মুলতানে ৮১ শতাংশ, বাহাওয়ালনগরে ৭৬ শতাংশ, মুজাফফরগড়ে ৭৪ শতাংশ এবং বাহাওলপুরে ৬১ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে তাদের খাদ্যভাণ্ডার দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।
কৃষি ও পশুপালন, যা অধিকাংশ মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস, তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মানুষগুলো কঠিন সংকটে পড়েছে।
সরকারি সহায়তা ও ক্ষতির চিত্র
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) জানায়, ২৬ জুন থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে উদ্ধার বা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৫৫৯টি বাড়ি এবং ৬ হাজার ৫০৯টি গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে।
সেনেটের বৈঠকে বলা হয়, নতুন ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হবে প্রায় ২০৩ কোটি রুপি। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, এবং ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।