০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্থির আবহাওয়া: বৃষ্টি ও দুর্ঘটনায় দুবাই–শারজাহজুড়ে সন্ধ্যায় তীব্র যানজট অসম্ভবকে সম্ভব মনে করা অভিনেত্রী মিনি ড্রাইভার, পঞ্চান্নেও ব্যস্ত ও আত্মবিশ্বাসী জীবন যে সিনেমাটি দেখতে আমি ভয় পেয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ ঢাকায় উদীচী কার্যালয়ে হামলার পর অগ্নিকাণ্ড প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রথম আলোর কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিচার দাবি নিক্কেই এশিয়া প্রতিবেদন: বাংলাদেশ –ভারত সম্পর্কের অবনতি জামায়াতের আহ্বান সংযম ও ঐক্যের পথে থাকার চীনের স্যাটেলাইট ‘সুপার ফ্যাক্টরি’: স্টারলিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে বড় পদক্ষেপ

পাকিস্তান বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল: জয়শঙ্কর

জাতিসংঘে জয়শঙ্করের কড়া বক্তব্য

শনিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পাকিস্তানকে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল এবং যারা সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়, তারা শেষ পর্যন্ত এর ফল ভোগ করে।

ভারতীয় কূটনীতিকরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের আগের দিনের ভাষণের পাল্টা জবাব দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই জয়শঙ্কর এই বক্তব্য রাখেন। তিনি উল্লেখ করেন, কয়েক দশক ধরে বড় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হামলার সূত্র পাকিস্তানেই খুঁজে পাওয়া গেছে। এমন দেশগুলোতে সন্ত্রাসের ঘাঁটি শিল্পোৎপাদনের মতো চলছে এবং সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে মহিমান্বিত করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সীমান্তপারের সন্ত্রাসের সাম্প্রতিক উদাহরণ

জয়শঙ্কর পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে এপ্রিল মাসের পাহেলগাম হামলার কথা বলেন। তিনি একে সীমান্তপারের বর্বরতার সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে নিরীহ পর্যটক নিহত হন। তাঁর ভাষায়, যখন কোনো দেশ প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রনীতির অংশ করে তোলে, তখন তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়।

তিনি আরও বলেন, ভারত তার নাগরিকদের রক্ষায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি মে মাসে পরিচালিত ‘অপারেশন সিন্দূর’-এর উল্লেখ করেন।

সন্ত্রাসবাদে সমর্থকদের জন্য সতর্কবার্তা

জয়শঙ্কর সতর্ক করেন, যারা সন্ত্রাসবাদকে অর্থায়ন বা সমর্থন করে, তাদের জন্য এর ফল ভয়াবহ হতে পারে। তিনি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন বন্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ ও সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়দাতাদের নিন্দা করার আহ্বান জানান।

শরিফের দাবি ও ভারতের প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘে ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তির দূত হিসেবে প্রশংসা করেন এবং দাবি করেন, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল। তিনি বলেন, ট্রাম্প হস্তক্ষেপ না করলে যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিত।

শরিফ আরও দাবি করেন, মে মাসের চার দিনের সংঘাতে পাকিস্তান সাতটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারতকে ‘শত্রু’ আখ্যা দিয়ে তিনি কাশ্মীরসহ সব ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব দেন এবং ভারতের ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিতের নিন্দা করেন।

ভারত শরিফের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া কোনো আলোচনার সুযোগ নেই।

ভারতীয় কূটনীতিকদের পাল্টা জবাব

ভারতের কূটনীতিক অশোক গেহলট শুক্রবার রাতেই শরিফের ভাষণের জবাবে বলেন, পাকিস্তান তার নাটকীয় বক্তৃতার মাধ্যমে আসলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকেই রক্ষা করছে, যারা ভারতীয় নাগরিকদের হত্যার জন্য দায়ী।

তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাস রপ্তানি করছে এবং একসময় ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল, অথচ সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অংশীদার সেজেছিল।

গেহলট বিশেষভাবে পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন ‘রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের সংগঠনকে সমর্থন দেওয়ার জন্য, যারা পাহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছিল এবং যার ফলে ভারত ‘অপারেশন সিন্দূর’ চালায়।

পাকিস্তানের বিজয়ের দাবি ভেঙে দিল ভারত

গেহলট জানান, পাকিস্তান দাবি করলেও বাস্তবে তাদের বিমানঘাঁটিগুলো ধ্বংস হওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা নিজেরাই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানায়। তাঁর ভাষায়, ৯ মে পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতের ওপর আরও হামলার হুমকি দিচ্ছিল। কিন্তু ১০ মে তাদের সামরিক বাহিনী সরাসরি যুদ্ধ থামানোর আবেদন করে, কারণ ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণে একাধিক বিমানঘাঁটি ভস্মীভূত হয়েছিল।

তিনি কটাক্ষ করে বলেন, যদি ভাঙা রানওয়ে আর পুড়ে যাওয়া বিমানঘাঁটি পাকিস্তানের কাছে বিজয় মনে হয়, তবে তারা সেই ‘বিজয়’ উপভোগ করতেই পারে।

হিন্দুত্ব’ নিয়ে পাকিস্তানের সমালোচনার জবাব

শরিফের ‘হিন্দুত্ব চরমপন্থা’ নিয়ে অভিযোগেরও জবাব দেন গেহলট। তিনি বলেন, ঘৃণা, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতায় নিমজ্জিত একটি দেশ জাতিসংঘে এসে ধর্মের নামে জ্ঞান দিচ্ছে—এটা নিজেই এক ধরনের বিদ্রূপ।

ভারত কাশ্মীর বা ইন্দাস জলচুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের সমালোচনার জবাব না দিলেও সন্ত্রাসবাদকে মূল ইস্যু করে জাতিসংঘে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ভারতের বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে, সন্ত্রাসবাদ দমন ছাড়া কোনো আলোচনার সুযোগ নেই এবং পাকিস্তানের ‘বিজয়ের দাবি’ বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্থির আবহাওয়া: বৃষ্টি ও দুর্ঘটনায় দুবাই–শারজাহজুড়ে সন্ধ্যায় তীব্র যানজট

পাকিস্তান বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল: জয়শঙ্কর

১২:১৩:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘে জয়শঙ্করের কড়া বক্তব্য

শনিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পাকিস্তানকে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল এবং যারা সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়, তারা শেষ পর্যন্ত এর ফল ভোগ করে।

ভারতীয় কূটনীতিকরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের আগের দিনের ভাষণের পাল্টা জবাব দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই জয়শঙ্কর এই বক্তব্য রাখেন। তিনি উল্লেখ করেন, কয়েক দশক ধরে বড় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হামলার সূত্র পাকিস্তানেই খুঁজে পাওয়া গেছে। এমন দেশগুলোতে সন্ত্রাসের ঘাঁটি শিল্পোৎপাদনের মতো চলছে এবং সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে মহিমান্বিত করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সীমান্তপারের সন্ত্রাসের সাম্প্রতিক উদাহরণ

জয়শঙ্কর পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে এপ্রিল মাসের পাহেলগাম হামলার কথা বলেন। তিনি একে সীমান্তপারের বর্বরতার সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে নিরীহ পর্যটক নিহত হন। তাঁর ভাষায়, যখন কোনো দেশ প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রনীতির অংশ করে তোলে, তখন তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়।

তিনি আরও বলেন, ভারত তার নাগরিকদের রক্ষায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি মে মাসে পরিচালিত ‘অপারেশন সিন্দূর’-এর উল্লেখ করেন।

সন্ত্রাসবাদে সমর্থকদের জন্য সতর্কবার্তা

জয়শঙ্কর সতর্ক করেন, যারা সন্ত্রাসবাদকে অর্থায়ন বা সমর্থন করে, তাদের জন্য এর ফল ভয়াবহ হতে পারে। তিনি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন বন্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ ও সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়দাতাদের নিন্দা করার আহ্বান জানান।

শরিফের দাবি ও ভারতের প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘে ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তির দূত হিসেবে প্রশংসা করেন এবং দাবি করেন, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল। তিনি বলেন, ট্রাম্প হস্তক্ষেপ না করলে যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিত।

শরিফ আরও দাবি করেন, মে মাসের চার দিনের সংঘাতে পাকিস্তান সাতটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারতকে ‘শত্রু’ আখ্যা দিয়ে তিনি কাশ্মীরসহ সব ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব দেন এবং ভারতের ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিতের নিন্দা করেন।

ভারত শরিফের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া কোনো আলোচনার সুযোগ নেই।

ভারতীয় কূটনীতিকদের পাল্টা জবাব

ভারতের কূটনীতিক অশোক গেহলট শুক্রবার রাতেই শরিফের ভাষণের জবাবে বলেন, পাকিস্তান তার নাটকীয় বক্তৃতার মাধ্যমে আসলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকেই রক্ষা করছে, যারা ভারতীয় নাগরিকদের হত্যার জন্য দায়ী।

তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাস রপ্তানি করছে এবং একসময় ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল, অথচ সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অংশীদার সেজেছিল।

গেহলট বিশেষভাবে পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন ‘রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের সংগঠনকে সমর্থন দেওয়ার জন্য, যারা পাহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছিল এবং যার ফলে ভারত ‘অপারেশন সিন্দূর’ চালায়।

পাকিস্তানের বিজয়ের দাবি ভেঙে দিল ভারত

গেহলট জানান, পাকিস্তান দাবি করলেও বাস্তবে তাদের বিমানঘাঁটিগুলো ধ্বংস হওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা নিজেরাই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানায়। তাঁর ভাষায়, ৯ মে পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতের ওপর আরও হামলার হুমকি দিচ্ছিল। কিন্তু ১০ মে তাদের সামরিক বাহিনী সরাসরি যুদ্ধ থামানোর আবেদন করে, কারণ ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণে একাধিক বিমানঘাঁটি ভস্মীভূত হয়েছিল।

তিনি কটাক্ষ করে বলেন, যদি ভাঙা রানওয়ে আর পুড়ে যাওয়া বিমানঘাঁটি পাকিস্তানের কাছে বিজয় মনে হয়, তবে তারা সেই ‘বিজয়’ উপভোগ করতেই পারে।

হিন্দুত্ব’ নিয়ে পাকিস্তানের সমালোচনার জবাব

শরিফের ‘হিন্দুত্ব চরমপন্থা’ নিয়ে অভিযোগেরও জবাব দেন গেহলট। তিনি বলেন, ঘৃণা, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতায় নিমজ্জিত একটি দেশ জাতিসংঘে এসে ধর্মের নামে জ্ঞান দিচ্ছে—এটা নিজেই এক ধরনের বিদ্রূপ।

ভারত কাশ্মীর বা ইন্দাস জলচুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের সমালোচনার জবাব না দিলেও সন্ত্রাসবাদকে মূল ইস্যু করে জাতিসংঘে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ভারতের বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে, সন্ত্রাসবাদ দমন ছাড়া কোনো আলোচনার সুযোগ নেই এবং পাকিস্তানের ‘বিজয়ের দাবি’ বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।