ছোটদের টার্গেট করছে মাদক ব্যবসায়ীরা
মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আহমদ জাহিদ হামিদি জানিয়েছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাত্র ১০ বছর বয়সী শিশুরাও এখন মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ব্যবসায়ীরা শিশুদের টানতে মাদক মেশানো মিষ্টি বিনামূল্যে বিতরণ করছে।
তিনি বলেন, এই বিপজ্জনক প্রবণতা ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাক-প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় শিক্ষক, অভিভাবক এবং সমাজের সবার যৌথ প্রচেষ্টা জরুরি।
মাদক দমনে নতুন কৌশল প্রয়োজন
ড. জাহিদ, যিনি মাদক নির্মূল সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রধান, জানান: মাদক প্রতিরোধ, পাচার রোধ এবং পুনর্বাসন জোরদার করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় মাদকবিরোধী সংস্থা (AADK)-কে আরও সৃজনশীল হতে হবে, বিশেষ করে পাচার শনাক্তকরণে এবং নতুন প্রবণতা মোকাবিলায়।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কখনো অনলাইন কেনাকাটার প্যাকেটের আড়ালে মাদক পাঠানো হয়। এসব চতুর কৌশল ভাঙতে আমাদের সংস্থাগুলোকেও আরও কল্পনাপ্রবণ হতে হবে।
আসক্তির হার দ্রুত বাড়ছে
ড. জাহিদ বলেন, মাদক সমস্যা মালয়েশিয়ার সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। কেলান্তান, তেরেঙ্গানু, পেরলিস ও কেদাহ রাজ্যে আসক্তির হার সবচেয়ে বেশি। তার মতে, বড় পাচারকারীদের মধ্যে চীনা, সংগঠিত বিতরণে ভারতীয় এবং খুচরা পর্যায়ে মালয় জাতিগোষ্ঠী জড়িত।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আসক্তির হার আগের বছরের তুলনায় ৩২.৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালে প্রতি এক লাখে ৪৩৬ জন আসক্ত থাকলেও ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮৬ জনে। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯৬ জনে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
২০২৬-২০৩০ কৌশলগত পরিকল্পনা
ড. জাহিদ জানান, কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে AADK নতুন কৌশলগত পরিকল্পনা (২০২৬-২০৩০) করছে। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মদক্ষতা সূচক এবং ২০২০-২০২৫ পরিকল্পনার অভিজ্ঞতা অনুসরণ করা হবে।
২০২৪ সালে ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ার এক গবেষণায় মাদকবিরোধী সূচক ছিল ৬৮.৩ শতাংশ। এর পাশাপাশি সফলতার মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে:
- আসক্তদের পুনরুদ্ধারের হার
- চাকরি পাওয়া পুনর্বাসিত ব্যক্তির সংখ্যা
- জনগণের সচেতনতার মাত্রা (সম্প্রদায় ক্ষমতায়ন পুনরুদ্ধার সূচক)
- সরকারি সংস্থা, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও এনজিওর সহযোগিতা।
কারাগার থেকে পুনর্বাসনের অভিজ্ঞতা
ড. জাহিদ তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়কার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তখন কারাগারের বন্দির সংখ্যা ৭৮ হাজার থেকে কমে ৪২ হাজারে নেমে আসে। কারণ, বন্দিদের শাস্তি দেওয়ার বদলে দক্ষতা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
এর মাধ্যমে ৩৫ মিলিয়ন রিঙ্গিত (এস $১০.৭ মিলিয়ন) আয় হয়েছিল এবং পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ার হার ৪৮ শতাংশ থেকে নেমে আসে মাত্র ২.৬ শতাংশে।
তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে: সৃজনশীলতা, প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক সুযোগের মাধ্যমে মাদক ও সংশ্লিষ্ট অপরাধ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।