০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

বিশ্বজুড়ে বন্দর কার্যকারিতা: সংকটের মাঝেও উন্নতির নজির

বিশ্বব্যাপী বন্দর কার্যকারিতা কমেছে

২০২৫ — ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বন্দর কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছে। এর পেছনে রয়েছে লোহিত সাগর সংকট, পানামা খালের জটিলতা এবং মহামারীজনিত ধাক্কা। তবে সব অঞ্চলে এই ধারা একই রকম ছিল না। অঞ্চলভেদে এবং আয়ের স্তরের ভিত্তিতে কার্যকারিতার পার্থক্য দেখা গেছে।

পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নতি

নতুন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পূর্ব এশিয়ার বন্দরগুলো উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে এবং ২০২৪ সালের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বন্দরগুলোও গত এক বছরে চমকপ্রদভাবে পুনরুদ্ধার করেছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বন্দরগুলোও স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে এবং ২০২৩ সালের সমান মান ধরে রাখতে পেরেছে।

প্রতিবেদন ও এর গুরুত্ব

এই বার্ষিক প্রতিবেদনটি (Container Port Performance Index – CPPI) বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স যৌথভাবে প্রকাশ করেছে। এটি পঞ্চম সংস্করণ, যেখানে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বন্দরের কার্যকারিতার প্রবণতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

Port congestion and delays: causes and solutions

উন্নত দেশ ছাড়াও উন্নয়নশীল দেশের সাফল্য

কেবল ধনী দেশের বড় বন্দর নয়, বরং কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের বন্দরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ডাকর (সেনেগাল), জওহরলাল নেহরু (ভারত), মারসিন (তুরস্ক), পোর্ট সাঈদ (মিসর) এবং পোসোরজা (ইকুয়েডর)।

প্রতিবেদন বলছে, এসব উন্নতি এসেছে রাজনৈতিক অঙ্গীকার, বৈশ্বিক টার্মিনাল অপারেটরদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ থেকে।

বিশ্বব্যাংকের মন্তব্য

বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ট্রান্সপোর্ট ডিরেক্টর নিকোলাস পেলটিয়ে-থিবার্জ বলেন, “বিভিন্ন ধাক্কার মাঝেও উন্নয়নশীল দেশের বন্দরগুলো মানিয়ে নেওয়ার পথ খুঁজে নিচ্ছে। পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ও লজিস্টিকস শৃঙ্খলে সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব।”

তথ্য ও বিশ্লেষণ

সিপিপিআই প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে ৪০৩টি কনটেইনার বন্দরকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি জাহাজ ভিড়ানো এবং ২৪ কোটি ৭০ লাখ কনটেইনার স্থানান্তরের তথ্য।
এতে জাহাজের বন্দরে অবস্থানের মোট সময়কে কার্যকারিতার মূল সূচক হিসেবে ধরা হয়েছে। এই বছর প্রথমবারের মতো বহু বছরের প্রবণতা বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা দেখাচ্ছে কোন বন্দর উন্নতি করেছে, কোনটি পিছিয়েছে আর কোনটি স্থিতিশীল রয়েছে।

Container Port Performance Index: Crises have shaken global trade - SAFETY4SEA

প্রযুক্তি ও প্রতিযোগিতা

প্রতিবেদন বলছে, ২৪ ঘণ্টা ক্রেন পরিচালনা, ক্রেনের সঠিক ব্যবহার এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে শুল্ক ও লজিস্টিকস অংশীদারদের সঙ্গে সংযুক্ত করার মতো পদক্ষেপ বন্দরগুলোর প্রতিযোগিতা ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে কার্যকর।

এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের গ্লোবাল হেড অব পোর্ট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স টারলক মুনি বলেন, “সিপিপিআই একটি বিশ্লেষণমূলক হাতিয়ার। এটি কাঠামোগত দুর্বলতা শনাক্ত করে কার্যকারিতা উন্নয়নের কৌশল তৈরি করতে সাহায্য করে। বৈশ্বিক শিপিং পরিবেশ যত জটিল হচ্ছে, বন্দরের কার্যকারিতা উন্নত করা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠছে।”

বিশ্বব্যাংক ও এস অ্যান্ড পি গ্লোবালের যৌথ এই সূচকটি দেখাচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও বন্দরগুলো অভিযোজন ও উন্নতির পথ তৈরি করছে। এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতার রূপরেখা স্পষ্ট হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বজুড়ে বন্দর কার্যকারিতা: সংকটের মাঝেও উন্নতির নজির

০৯:০৬:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশ্বব্যাপী বন্দর কার্যকারিতা কমেছে

২০২৫ — ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বন্দর কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছে। এর পেছনে রয়েছে লোহিত সাগর সংকট, পানামা খালের জটিলতা এবং মহামারীজনিত ধাক্কা। তবে সব অঞ্চলে এই ধারা একই রকম ছিল না। অঞ্চলভেদে এবং আয়ের স্তরের ভিত্তিতে কার্যকারিতার পার্থক্য দেখা গেছে।

পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নতি

নতুন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পূর্ব এশিয়ার বন্দরগুলো উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে এবং ২০২৪ সালের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বন্দরগুলোও গত এক বছরে চমকপ্রদভাবে পুনরুদ্ধার করেছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বন্দরগুলোও স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে এবং ২০২৩ সালের সমান মান ধরে রাখতে পেরেছে।

প্রতিবেদন ও এর গুরুত্ব

এই বার্ষিক প্রতিবেদনটি (Container Port Performance Index – CPPI) বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স যৌথভাবে প্রকাশ করেছে। এটি পঞ্চম সংস্করণ, যেখানে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বন্দরের কার্যকারিতার প্রবণতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

Port congestion and delays: causes and solutions

উন্নত দেশ ছাড়াও উন্নয়নশীল দেশের সাফল্য

কেবল ধনী দেশের বড় বন্দর নয়, বরং কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের বন্দরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ডাকর (সেনেগাল), জওহরলাল নেহরু (ভারত), মারসিন (তুরস্ক), পোর্ট সাঈদ (মিসর) এবং পোসোরজা (ইকুয়েডর)।

প্রতিবেদন বলছে, এসব উন্নতি এসেছে রাজনৈতিক অঙ্গীকার, বৈশ্বিক টার্মিনাল অপারেটরদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ থেকে।

বিশ্বব্যাংকের মন্তব্য

বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ট্রান্সপোর্ট ডিরেক্টর নিকোলাস পেলটিয়ে-থিবার্জ বলেন, “বিভিন্ন ধাক্কার মাঝেও উন্নয়নশীল দেশের বন্দরগুলো মানিয়ে নেওয়ার পথ খুঁজে নিচ্ছে। পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ও লজিস্টিকস শৃঙ্খলে সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব।”

তথ্য ও বিশ্লেষণ

সিপিপিআই প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে ৪০৩টি কনটেইনার বন্দরকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি জাহাজ ভিড়ানো এবং ২৪ কোটি ৭০ লাখ কনটেইনার স্থানান্তরের তথ্য।
এতে জাহাজের বন্দরে অবস্থানের মোট সময়কে কার্যকারিতার মূল সূচক হিসেবে ধরা হয়েছে। এই বছর প্রথমবারের মতো বহু বছরের প্রবণতা বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা দেখাচ্ছে কোন বন্দর উন্নতি করেছে, কোনটি পিছিয়েছে আর কোনটি স্থিতিশীল রয়েছে।

Container Port Performance Index: Crises have shaken global trade - SAFETY4SEA

প্রযুক্তি ও প্রতিযোগিতা

প্রতিবেদন বলছে, ২৪ ঘণ্টা ক্রেন পরিচালনা, ক্রেনের সঠিক ব্যবহার এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে শুল্ক ও লজিস্টিকস অংশীদারদের সঙ্গে সংযুক্ত করার মতো পদক্ষেপ বন্দরগুলোর প্রতিযোগিতা ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে কার্যকর।

এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের গ্লোবাল হেড অব পোর্ট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স টারলক মুনি বলেন, “সিপিপিআই একটি বিশ্লেষণমূলক হাতিয়ার। এটি কাঠামোগত দুর্বলতা শনাক্ত করে কার্যকারিতা উন্নয়নের কৌশল তৈরি করতে সাহায্য করে। বৈশ্বিক শিপিং পরিবেশ যত জটিল হচ্ছে, বন্দরের কার্যকারিতা উন্নত করা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠছে।”

বিশ্বব্যাংক ও এস অ্যান্ড পি গ্লোবালের যৌথ এই সূচকটি দেখাচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও বন্দরগুলো অভিযোজন ও উন্নতির পথ তৈরি করছে। এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতার রূপরেখা স্পষ্ট হচ্ছে।