বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসায় উন্নয়ন ও আধুনিক কর্মসংস্থানের উদ্যোগে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, ব্যবসায় আপগ্রেড বা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে বিনিয়োগ করলে সাধারণত দুই বছরের মধ্যেই খরচ উঠে আসে। নাইজেরিয়ার উদাহরণে দেখা গেছে, বিশেষায়িত সেবা আউটসোর্স করার পর মাসিক আয় প্রায় একশ ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। এতে কয়েক হাজার ডলারের পুরো প্রোগ্রামের খরচ দুই বছরেরও কম সময়ে উঠে এসেছে।
তবে বাস্তব পরিস্থিতি এতটা সহজ নয়। ব্যবসা উন্নয়নের জন্য বেসরকারি বাজার অনেক জায়গায় ধীরগতিতে গড়ে উঠছে। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষণের জন্য খরচ করতে অনিচ্ছুক। জ্যামাইকায় দেখা গেছে, যখন প্রশিক্ষণের খরচের এক-চতুর্থাংশের বেশি প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে বলা হয়, তখনই অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা হঠাৎ কমে যায়।
নানা প্রতিবন্ধকতা
ব্যবসায় উন্নয়ন উদ্যোগের পথে প্রধান বাধা অনিশ্চিত মুনাফা। অনেক প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত নয়, খরচের তুলনায় লাভ হবে কতটা। এ অবস্থায় ভর্তুকি বা ভাউচার চালু করলে উদ্যোক্তারা বেশি আগ্রহী হন।
আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাজারের অস্পষ্টতা। স্পষ্ট বাজার সুযোগ না থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেক উদ্যোক্তা আবার নিজেদের দুর্বলতা শনাক্ত করতে পারেন না। কোথায় ঘাটতি আছে তা বুঝতে না পারায় তারা বিনিয়োগে পিছিয়ে যান।
তথ্যের ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। অনেক প্রতিষ্ঠান জানে না কোন সেবা কোথায় পাওয়া যাবে, কিংবা কোন সরবরাহকারী নির্ভরযোগ্য। অনুমোদিত সেবাদাতার তালিকা প্রকাশ করলে খরচ কমে আসে এবং আস্থা বাড়ে।
তাছাড়া, উদ্যোক্তাদের আচরণগত সীমাবদ্ধতাও অনেক সময় প্রভাব ফেলে। দেরি করার প্রবণতা বা মনোযোগের অভাব তাদের পিছিয়ে দেয়। নিয়মিত অনুস্মারক ও নমনীয় প্রশিক্ষণ সূচি এ সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
কার্যকর প্রোগ্রামের অভিজ্ঞতা
যেসব দেশে স্থানীয় বাজার ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রোগ্রাম সাজানো হয়েছে, সেখানেই সাফল্য বেশি মিলেছে। যেমন, ইন্দোনেশিয়ার খুচরা ব্যবসায়ী কিংবা জর্ডানের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, উচ্চ প্রবৃদ্ধি প্রতিষ্ঠানের জন্য হাতে-কলমে নিবিড় প্রশিক্ষণ এবং ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য হালকা সহায়তা কার্যকর হয়েছে। কলম্বিয়ায় উচ্চ প্রবৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের পুঁজিনির্ভর প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফলে তাদের ব্যবসা দ্রুত এগিয়েছে।

ভারতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাস্টমাইজড পরামর্শ উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থান বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ মেন্টরের নেতৃত্বে পরিচালিত নিবিড় প্রোগ্রাম স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। বিপরীতে, স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্থায়ী হয়ে থাকে।
তানজানিয়া ও উগান্ডায় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অনুদান দেওয়ার ফলে টেকসই ফল পাওয়া গেছে। স্টার্টআপ চিলির অংশগ্রহণকারীরা অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র পাঁচ বছরে তিনগুণ মূলধন বৃদ্ধি, দ্বিগুণ কর্মসংস্থান এবং ২১ শতাংশ বেশি অর্থায়ন নিশ্চিত করেছেন।
প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন
শুধু মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণ নয়, প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসায় উন্নয়নের ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। গুয়াতেমালায় ৫০০ ফ্র্যাঞ্চাইজি স্টোর মালিকের জন্য চালু করা স্ব-নিয়ন্ত্রিত অনলাইন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বিক্রি ৬ থেকে ১৩ শতাংশ এবং লাভ ১৬ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
ভিডিও প্রশিক্ষণ, ভার্চুয়াল পরামর্শ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত চ্যাটবট ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক দেশ ইতিমধ্যে বাস্তব ফলাফল পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ ভবিষ্যতের ব্যবসাকে শুধু আধুনিক করবে না, কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্তও খুলে দেবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















