১০০ বিলিয়ন ডলারের এআই-চিপ বিনিয়োগ
সেপ্টেম্বর ২২ তারিখে ঘোষণা করা হয় যে, এনভিডিয়া ওপেনএআই-এ প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। এই অর্থ দিয়ে ওপেনএআই প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ এনভিডিয়ার এআই চিপ কিনবে। এই পদক্ষেপে বোঝা যাচ্ছে যে, সিলিকন ভ্যালির বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে।
এর কিছুদিন আগে এনভিডিয়া ঘোষণা করেছিল যে, তারা ইন্টেলে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, যাতে সমস্যায় পড়া প্রতিদ্বন্দ্বী চিপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করা যায়। ওপেনএআই-এর সঙ্গে আসন্ন অংশীদারিত্ব, যা ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়ার কথা, প্রযুক্তি দুনিয়ায় আরও এক নজিরবিহীন চুক্তি।
মাইক্রোসফটের সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক
এই চুক্তির ফলে আজকের এআই-নির্ভর শেয়ারবাজারের উত্থান আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠছে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া এবং আমেরিকার বৃহত্তম বেসরকারি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-এর ভাগ্যের উপর। ওপেনএআই আবার মাইক্রোসফটের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি।
ওপেনএআই-এর সঙ্গে বিনিয়োগের খবর প্রকাশের পর এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছায়। যদিও পরে কিছুটা কমে আসে। এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং জানান, এই চুক্তি গ্রাফিক্স-প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) বিক্রি বাড়াবে। তিনি আরও বলেন, বাড়তি ৫০ লাখ জিপিইউ প্রায় সমান হবে পুরো বছরের শিপমেন্টের পরিমাণের।
বিনিয়োগের কাঠামো
এই চুক্তির আরেকটি বড় দিক হলো, ওপেনএআই এনভিডিয়ার চিপের উপর আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠবে, ফলে নিজস্ব চিপ তৈরি করার প্রণোদনা কমে যাবে। বিনিয়োগ কাঠামো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, এনভিডিয়া ওপেনএআই-এর প্রতিটি ১ গিগাওয়াট ডাটা সেন্টার নির্মাণে ১০ বিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগ করবে—সর্বোচ্চ ১০ গিগাওয়াট পর্যন্ত।
আইটি বিশ্লেষক পিয়ের ফেরাগুর মতে, কার্যত এনভিডিয়া প্রতি ৩৫ বিলিয়ন ডলারের চিপ বিক্রির বিপরীতে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। ফলে ওপেনএআইকে ৭১ শতাংশ নগদ এবং ২৯ শতাংশ শেয়ার দিয়ে মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
উদ্বেগ ও সমালোচনা
তবে সবাই এ নিয়ে আশাবাদী নন। বার্নস্টেইনের বিনিয়োগ বিশ্লেষক স্টেসি রাসগন সিএনবিসিকে বলেন, এই ধরনের ‘চক্রাকার সম্পর্ক’ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ এনভিডিয়া এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছে যাদেরকে তারা আবার চিপ সরবরাহ করে। চুক্তির বিশাল অঙ্ক অনেক প্রশ্ন তুলছে।
ওপেনএআই নগদের বদলে শেয়ার ব্যবহার করছে, যা তাদের অর্থ সংকটের ইঙ্গিত দেয়। তারা ইতোমধ্যেই ওরাকলের সঙ্গে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে, যাতে ২০২৭ থেকে পাঁচ বছরে ৪.৫ গিগাওয়াট ডাটা সেন্টার নির্মাণ হবে। এর ফলে ওরাকল নতুন আয় অনুমানের ঘোষণা দিয়েছে এবং অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য ১৮ বিলিয়ন ডলারের বন্ড বিক্রি করেছে।
ওপেনএআই-এর আয় বনাম খরচ
ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান বলেছেন, প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে। তবে কোম্পানির পরিশোধক্ষমতা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। চ্যাটজিপিটির ৭০০ মিলিয়নের বেশি সাপ্তাহিক সক্রিয় ব্যবহারকারী থাকলেও, নতুন জিপিটি-৫ মডেলের প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশার তুলনায় কম। ওপেনএআই বর্তমানে বছরে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে, যা তাদের ব্যয় প্রতিশ্রুতির তুলনায় নগণ্য।
এছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহের বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অতিরিক্ত ১০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ১০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমান। যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি অর্ধ বছরে মোট ২২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যোগ হয়েছে, সেখানে এত বড় প্রকল্প কয়েক বছর সময় নিতে পারে।
টেক্সাসে নতুন প্রকল্প
সবকিছু সত্ত্বেও অল্টম্যান আশাবাদী। ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি টেক্সাসের অ্যাবিলিন শহরে ওরাকলের সহ-প্রধান নির্বাহী ক্লে ম্যাগুয়ার্কের সঙ্গে স্টারগেট প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন। এক বছরের মধ্যেই বিশাল সমতল এলাকা ৬,০০০ কর্মীর একটি ডাটা সেন্টার কমপ্লেক্সে পরিণত হয়েছে। প্রথম ভবনটি ইতোমধ্যেই ১০০ মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতা নিয়ে চালু হয়েছে।
২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে আরও আটটি ভবন চালু হবে, যার মোট ক্ষমতা হবে প্রায় ৯০০ মেগাওয়াট। এরই মধ্যে কয়েকটি ভবনের কংক্রিট ভিত্তি এবং ইস্পাত কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। প্রথমে গ্যাস টারবাইন থেকে বিদ্যুৎ আসবে, পরে পশ্চিম টেক্সাসের বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অল্টম্যান জানিয়েছেন, এটি কেবল শুরু। কাছাকাছি আরও জমিতে নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা অতিরিক্ত ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা যোগ করবে। এছাড়া জাপানের সফটব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় আরও পাঁচটি স্থানে বড় ডাটা সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৭ গিগাওয়াট ক্ষমতা যোগ হবে।
তিনি এনভিডিয়ার সঙ্গে চুক্তি ঘোষণার সময় তিনটি অগ্রাধিকার তুলে ধরেন—এআই গবেষণায় অগ্রগতি, ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করার মতো পণ্য তৈরি এবং নজিরবিহীন অবকাঠামো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা।
অ্যাবিলিন প্রকল্পে অগ্রগতি দৃশ্যমান হলেও চিপ ও বিদ্যুতের মতো বড় চ্যালেঞ্জগুলো এখনও জটিল। অল্টম্যানের সিলিকন ভ্যালির ধনী বন্ধুদের কাছে প্রতিশ্রুতি সহজেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেও, বাস্তবে এগুলো বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন।