১১:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
এসএনএলে সাব্রিনা কারপেন্টার: ইমেজ, রসিকতা আর ভাইরাল কৌশল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা: বিশ্বে উন্নতির সুযোগ, সতর্কতার সাথে পরিচালনা জরুরি – প্রেসিডেন্ট থারমান বালি পাচার নিয়ে তল্লাশি ইডি-র, ভোটের আগে সক্রিয়তার অভিযোগ যেখানে ভয়ই নিয়ম—করাচি চিড়িয়াখানার অদৃশ্য কর্মীদের গল্প -পঞ্চম পর্ব ঢাকার আরমানিটোলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতার মরদেহ উদ্ধার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে সোমবার থেকে আমরণ অনশন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪২) শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন নিয়ন্ত্রণে ২৭ ঘণ্টা পর কার্গো ভিলেজে আগুনের পর পণ্য সংরক্ষণে বিকল্প স্থান নির্ধারণ করল সিভিল অ্যাভিয়েশন অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়িক আস্থার ক্ষতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকির আশঙ্কা

ভারতের ‘লুক ওয়েস্ট’ নীতি কি ইরানি বন্দর প্রকল্পে হুমকির মুখে?

কৌশলগত গুরুত্ব সত্ত্বেও চাবাহার প্রকল্পে নতুন অনিশ্চয়তা

ভারত ইরানের চাবাহার বন্দরের উন্নয়ন চালিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বন্দর মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য প্রবেশদ্বার। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নিষেধাজ্ঞা প্রকল্পটিকে গুরুতর হুমকির মুখে ফেলেছে।

ওয়াশিংটন চাবাহার প্রকল্পের ওপর থেকে ছাড় তুলে নেওয়ায় নির্মাণ ও বিনিয়োগে দেরি হতে পারে। এতে আফগানিস্তানসহ ওই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য জোরদারের পরিকল্পনা কঠিন হয়ে উঠবে এবং ভারত হয়তো আবার প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের স্থলপথের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হবে।

মার্কিন ছাড় বাতিল ও তার প্রভাব

২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম দফায় ইরানের অবকাঠামোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে চাবাহারকে ছাড় দিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সেই ছাড় তুলে নেয়, যা সোমবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, চাবাহার পরিচালনা বা সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত যে কেউ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে।

প্রথমদিকে এই ছাড় মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য ও পুনর্গঠনের কাজে সহায়তা করার জন্য দেওয়া হয়েছিল।

বন্দরটির অবস্থান ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব

ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে, ওমান উপসাগরের পাশে অবস্থিত চাবাহার দুটি অংশে বিভক্ত—শাহিদ কালান্তারি ও শাহিদ বেহেশ্তি। এটি ইরানের একমাত্র ভারত মহাসাগরীয় প্রবেশপথ। একই সঙ্গে এটি ভারত, রাশিয়া ও ইরানকে সংযুক্তকারী ৭,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে ভারতের বড় বিনিয়োগে বন্দরের সম্প্রসারণ কাজ চলছে।

ভারতের অবস্থান ও চুক্তি

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত বন্দরের উন্নয়নকে ধীর করবে। তবে ভারত এই প্রকল্প ছাড়বে না, কারণ মাত্র এক বছর আগে ভারত ও ইরানের মধ্যে ১০ বছরের চুক্তি সই হয়েছে। এই বন্দরের মাধ্যমে আফগানিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে ভারতের বাণিজ্য বাড়ার কথা। ভারতের শিপিং মন্ত্রী সারবানন্দ সোনোয়ালও বলেছেন, চাবাহার হবে ভারতের জন্য একটি “প্রাণবাহী বাণিজ্য ধমনী”।

আফগানিস্তানের বিকল্প পথ হিসেবে চাবাহার

ভারতের “লুক ওয়েস্ট” নীতির অংশ হিসেবে চাবাহার বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব বেড়েছে। আফগানিস্তানের তালেবান কর্মকর্তারাও বন্দরে সফর করেছেন এবং পাকিস্তানের করাচি বন্দরের বিকল্প হিসেবে এটিকে বিবেচনা করছেন। কাবুল-ইসলামাবাদ সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় আফগানিস্তান চাবাহারের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

মার্কিন চাপ ও ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রতীক জোশীর মতে, নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে ভারত-আফগানিস্তান বাণিজ্যে। আবারও ভারত পাকিস্তানের স্থলপথ বা দুবাই হয়ে পণ্য পরিবহনে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। ফলে ভারতের হয়তো ১২ কোটি ডলারের বন্দর প্রকল্প ও ২৫ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

জোশীর মতে, দিল্লি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা করে কিছু ছাড় চাইবে। হয়তো ওয়াশিংটনের উদ্বেগ মোকাবিলায় বন্দরের ওপর বিশেষ নজরদারির শর্ত মেনে নিতে হবে।

অতীত অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির সময় ভারত ইরান থেকে তেলের আমদানি কমিয়েছিল মার্কিন অবস্থানের সঙ্গে মিলিয়ে চলার জন্য। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প চুক্তি বাতিল করার পর ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্লেষক কাবীর তানেজার মতে, সেই অভিজ্ঞতা থেকে দিল্লি এখন অনেক শিক্ষা নিয়েছে।

দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কে টানাপোড়েন

চাবাহার ইস্যুর পাশাপাশি ভারত-আমেরিকার সম্পর্কে আরও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা ও মার্কিন ভিসা ফি বৃদ্ধির কারণে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এইচ-১বি ভিসা ফি ২,০০০–৫,০০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে এক লাফে ১ লাখ ডলার করেছে। ভারতীয়রা এই ভিসার সবচেয়ে বড় অংশীদার।

প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

বিশ্লেষক সাহেবজাদা এম. উসমানের মতে, এখনই প্রকল্প পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তবে এটি গুরুতর অনিশ্চয়তায় আছে। বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলো দ্রুত দ্বিধায় পড়বে। ভারত যদি অর্থায়ন অব্যাহত রাখে, তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে।

চাবাহার প্রকল্প আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিল। এখন সেই ছাড় চলে যাওয়ায় ভারত মনে করছে, ওয়াশিংটন তাকে প্রকৃত সহযোগী হিসেবে দেখছে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

এসএনএলে সাব্রিনা কারপেন্টার: ইমেজ, রসিকতা আর ভাইরাল কৌশল

ভারতের ‘লুক ওয়েস্ট’ নীতি কি ইরানি বন্দর প্রকল্পে হুমকির মুখে?

১১:৩২:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কৌশলগত গুরুত্ব সত্ত্বেও চাবাহার প্রকল্পে নতুন অনিশ্চয়তা

ভারত ইরানের চাবাহার বন্দরের উন্নয়ন চালিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বন্দর মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য প্রবেশদ্বার। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নিষেধাজ্ঞা প্রকল্পটিকে গুরুতর হুমকির মুখে ফেলেছে।

ওয়াশিংটন চাবাহার প্রকল্পের ওপর থেকে ছাড় তুলে নেওয়ায় নির্মাণ ও বিনিয়োগে দেরি হতে পারে। এতে আফগানিস্তানসহ ওই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য জোরদারের পরিকল্পনা কঠিন হয়ে উঠবে এবং ভারত হয়তো আবার প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের স্থলপথের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হবে।

মার্কিন ছাড় বাতিল ও তার প্রভাব

২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম দফায় ইরানের অবকাঠামোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে চাবাহারকে ছাড় দিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সেই ছাড় তুলে নেয়, যা সোমবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, চাবাহার পরিচালনা বা সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত যে কেউ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে।

প্রথমদিকে এই ছাড় মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য ও পুনর্গঠনের কাজে সহায়তা করার জন্য দেওয়া হয়েছিল।

বন্দরটির অবস্থান ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব

ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে, ওমান উপসাগরের পাশে অবস্থিত চাবাহার দুটি অংশে বিভক্ত—শাহিদ কালান্তারি ও শাহিদ বেহেশ্তি। এটি ইরানের একমাত্র ভারত মহাসাগরীয় প্রবেশপথ। একই সঙ্গে এটি ভারত, রাশিয়া ও ইরানকে সংযুক্তকারী ৭,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে ভারতের বড় বিনিয়োগে বন্দরের সম্প্রসারণ কাজ চলছে।

ভারতের অবস্থান ও চুক্তি

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত বন্দরের উন্নয়নকে ধীর করবে। তবে ভারত এই প্রকল্প ছাড়বে না, কারণ মাত্র এক বছর আগে ভারত ও ইরানের মধ্যে ১০ বছরের চুক্তি সই হয়েছে। এই বন্দরের মাধ্যমে আফগানিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে ভারতের বাণিজ্য বাড়ার কথা। ভারতের শিপিং মন্ত্রী সারবানন্দ সোনোয়ালও বলেছেন, চাবাহার হবে ভারতের জন্য একটি “প্রাণবাহী বাণিজ্য ধমনী”।

আফগানিস্তানের বিকল্প পথ হিসেবে চাবাহার

ভারতের “লুক ওয়েস্ট” নীতির অংশ হিসেবে চাবাহার বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব বেড়েছে। আফগানিস্তানের তালেবান কর্মকর্তারাও বন্দরে সফর করেছেন এবং পাকিস্তানের করাচি বন্দরের বিকল্প হিসেবে এটিকে বিবেচনা করছেন। কাবুল-ইসলামাবাদ সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় আফগানিস্তান চাবাহারের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

মার্কিন চাপ ও ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রতীক জোশীর মতে, নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে ভারত-আফগানিস্তান বাণিজ্যে। আবারও ভারত পাকিস্তানের স্থলপথ বা দুবাই হয়ে পণ্য পরিবহনে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। ফলে ভারতের হয়তো ১২ কোটি ডলারের বন্দর প্রকল্প ও ২৫ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

জোশীর মতে, দিল্লি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা করে কিছু ছাড় চাইবে। হয়তো ওয়াশিংটনের উদ্বেগ মোকাবিলায় বন্দরের ওপর বিশেষ নজরদারির শর্ত মেনে নিতে হবে।

অতীত অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির সময় ভারত ইরান থেকে তেলের আমদানি কমিয়েছিল মার্কিন অবস্থানের সঙ্গে মিলিয়ে চলার জন্য। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প চুক্তি বাতিল করার পর ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্লেষক কাবীর তানেজার মতে, সেই অভিজ্ঞতা থেকে দিল্লি এখন অনেক শিক্ষা নিয়েছে।

দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কে টানাপোড়েন

চাবাহার ইস্যুর পাশাপাশি ভারত-আমেরিকার সম্পর্কে আরও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা ও মার্কিন ভিসা ফি বৃদ্ধির কারণে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এইচ-১বি ভিসা ফি ২,০০০–৫,০০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে এক লাফে ১ লাখ ডলার করেছে। ভারতীয়রা এই ভিসার সবচেয়ে বড় অংশীদার।

প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

বিশ্লেষক সাহেবজাদা এম. উসমানের মতে, এখনই প্রকল্প পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তবে এটি গুরুতর অনিশ্চয়তায় আছে। বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলো দ্রুত দ্বিধায় পড়বে। ভারত যদি অর্থায়ন অব্যাহত রাখে, তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে।

চাবাহার প্রকল্প আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিল। এখন সেই ছাড় চলে যাওয়ায় ভারত মনে করছে, ওয়াশিংটন তাকে প্রকৃত সহযোগী হিসেবে দেখছে না।