নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা
লন্ডন— ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার ঘোষণা দিয়েছেন, দেশটিতে অবৈধ অভিবাসন রোধ করতে এবং কর্মক্ষেত্র আরও সুরক্ষিত করতে নাগরিক ও বাসিন্দাদের জন্য বাধ্যতামূল্যে ডিজিটাল পরিচয়পত্র চালু করা হবে। আগামী সংসদীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এটি কার্যকর হবে।
স্টার্মার ২৬ সেপ্টেম্বর গ্লোবাল প্রগ্রেস অ্যাকশন সামিটে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও আইসল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই ঘোষণা দেন। তিনি স্বীকার করেন, অভিবাসন নিয়ে জনগণের উদ্বেগে লেবার সরকার এতদিন যথেষ্ট সাড়া দেয়নি। এর সুযোগ নিয়েছে ডানপন্থী পপুলিস্ট দল রিফর্ম ইউকে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
স্টার্মার বলেন, ব্রেক্সিটপন্থী নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন রিফর্ম ইউকে আগামী ২০২৯ সালের নির্বাচনে লেবারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে। তাই এই নতুন ডিজিটাল পরিচয়পত্রের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলা এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করা হবে।
তার ভাষায়, “আজ আমি ঘোষণা করছি, এই সরকার কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য নতুন, বিনামূল্যে ডিজিটাল পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করছে। যুক্তরাজ্যে আমরা এক ধরনের ডানপন্থী প্রস্তাবনার মুখোমুখি হয়েছি, যা আগে ছিল না। আমাদের সময়ের লড়াই হলো দেশপ্রেমিক জাতীয় পুনর্গঠনের পক্ষে থাকা বনাম সমাজকে বিভাজিত করার বিষাক্ততার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।”
জনমত ও সমালোচনা
ব্রিটেনে জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, অভিবাসন এখন ভোটারদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়। ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকায় অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের ঠেকাতে স্টার্মার চাপে রয়েছেন।
তবে পরিকল্পনাটি সমালোচনার মুখে পড়েছে। রিফর্ম ইউকের এক মুখপাত্র বলেন, “যারা ইতিমধ্যেই আইন ভাঙছে, তারা হঠাৎ ডিজিটাল আইডি মানবে— এটি হাস্যকর। নগদ অর্থে কাজ করাই অবৈধ শ্রমের মূল ভরসা, আর ডিজিটাল পরিচয়পত্রে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।”
উত্তর আয়ারল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার ও শিন ফেইনের নেতা মিশেল ও’নিল-ও একে “অযৌক্তিক ও দুর্বল পরিকল্পনা” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার মতে, এটি জনগণের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর আঘাত হানতে পারে।
ডিজিটাল আইডির ব্যবহার
সরকার জানিয়েছে, এই ডিজিটাল পরিচয়পত্র মোবাইল ফোনে রাখা যাবে এবং কর্মী নিয়োগের সময় নিয়োগকর্তাদের যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়, তার বাধ্যতামূলক অংশ হবে। ধীরে ধীরে এটি শিশু যত্ন, সামাজিক নিরাপত্তা এবং ট্যাক্স সংক্রান্ত সেবাতেও ব্যবহার করা যাবে।
সমর্থন ও আশঙ্কা
ইপসোসের জুলাই মাসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৭ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র পরিকল্পনাকে সমর্থন করছে। তবে প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছে, এই তথ্য অনুমতি ছাড়া ব্যবহার হতে পারে, বেসরকারি কোম্পানির কাছে বিক্রি হয়ে যেতে পারে বা নিরাপত্তা ভঙ্গের শিকার হতে পারে।
ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
২০০০-এর দশকে লেবার সরকার পরিচয়পত্র চালুর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নাগরিক স্বাধীনতার উদ্বেগে সেটি বাতিল হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনে জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল করা হয়েছিল। বর্তমানে নাগরিকেরা পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করে নিজেদের পরিচয় প্রমাণ করে।