গোয়েন্দা কাহিনির মতো ঘটনা
ঘটনাটি যেন গোয়েন্দা উপন্যাস থেকে উঠে আসা। কাহিনী এমন—একজন গোয়েন্দা সন্দেহ করে বসেন একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর। ধারণা করেন, ওই কর্মকর্তা ঘুষ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করছেন, কারণ তার এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি উচ্চপদে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তখন গোয়েন্দা নিজেকে ব্যবসায়ী সেজে গোপনে যোগাযোগ করেন। হাতে থাকে ট্রেঞ্চকোট, টুপি আর লুকানো মাইক্রোফোন। তিনি ঘুষ হিসেবে ৫০ হাজার ডলার একটি ফাস্ট ফুডের ব্যাগে ভরে দেন। সাবেক পুলিশ তা গ্রহণ করেন। ধরা পড়েন ফাঁদে।
কিন্তু এটি কোনো উপন্যাস নয়, বাস্তব ঘটনা। মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সীমান্ত উপদেষ্টা টম হোম্যানের বিরুদ্ধে এই তদন্ত চালিয়েছে এফবিআই। অভিযোগ, তিনি ভবিষ্যতে সরকারি চুক্তি নিশ্চিত করতে ছদ্মবেশী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ গ্রহণ করেছেন।
অভিযোগ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এমএসএনবিসি ও নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিকে হোম্যানের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানো ও ঘুষ নেওয়ার তথ্য পায় এফবিআই এবং টেক্সাসের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রসিকিউটরের কার্যালয়। তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর মামলা বন্ধ হয়ে যায়।
হোম্যান দাবি করেছেন, তিনি কোনো বেআইনি কাজ করেননি। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ও বলেন, তিনি কোনো নগদ অর্থ নেননি। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চাচ্ছেন। কংগ্রেসের বিচার বিভাগীয় কমিটিগুলো ইতিমধ্যেই বিচার বিভাগকে (DOJ) বৈঠকের কোনো অডিও বা ভিডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করার অনুরোধ করেছে।
হোম্যানের কর্মজীবন ও ব্যবসা
হোম্যান পরিবারে বহু প্রজন্ম ধরেই পুলিশ পেশায়। তিনি নিজেও ১৯৮০-এর দশকে বর্ডার প্যাট্রোলে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় প্রশাসনে অভিবাসন দমন কার্যক্রমে কাজ করেছেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই-এর) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হন।
জো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি অবসর নিয়ে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এখান থেকেই জটিলতা শুরু হয়। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, তার ব্যবসা কোনো স্বার্থের সংঘাত তৈরি করবে না। কিন্তু বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করেন, ঘুষ ষড়যন্ত্রে তার সম্পৃক্ততা প্রমাণের মতো তথ্য তাদের হাতে ছিল।
দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা
এই তদন্ত বন্ধ হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। বিশেষজ্ঞ জ্যাকব আইসলার বলেন, গত দুই দশকে সুপ্রিম কোর্ট দুর্নীতিবিরোধী আইনের সীমা সংকুচিত করেছে। ফলে অনেক লবিং কার্যক্রম ঘুষের মতোই মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্টরা সরকার পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক বরখাস্ত করছেন এবং ন্যায়বিচার বিভাগের দুর্নীতিবিরোধী শাখাকে অকার্যকর করে তুলছেন।
দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের এই অন্ধকারময় রাজনৈতিক কাহিনিতে হোম্যানের স্টিং অপারেশন কেবল একটি ছোট অধ্যায় মাত্র।