অর্থনীতির বর্তমান চিত্র
ব্রিটেনের অর্থনীতি বড় ধরনের চাপে রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি কমছে না, ঋণ ও বাজেট ঘাটতি বাড়ছে, আর উৎপাদনশীলতা নেমে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি সরকারি ঋণের সুদের হার ধনী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজন মনে করেন সরকার অর্থনীতি সঠিকভাবে চালাতে পারছে না।
মার্কিন বিনিয়োগকারী রে ডালিওও সতর্ক করে বলেছেন, ব্রিটেন এখন “ঋণের ফাঁদে আটকে আছে।” অবকাঠামো ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সবই নেতিবাচক নয়। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ব্রিটেন। খুচরা বাজার স্থিতিশীল, বেকারত্ব কম, সেবাখাত ভালো করছে। উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডনের অর্থনৈতিক কেন্দ্র এবং ইংরেজি ভাষার মতো শক্তি এখনো টিকে আছে। জন্মহার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার ক্ষেত্রেও ব্রিটেন ইউরোপের তুলনায় এগিয়ে।
ঋণ ও আর্থিক সংকট
সবচেয়ে বড় দুর্বলতা সরকারি ঋণ। ২০০৫ সালে ব্রিটেনের নিট ঋণ ছিল জিডিপির ৩৫ শতাংশ, যা এখন প্রায় ৯৫ শতাংশে পৌঁছেছে। আর্থিক সংকট ও মহামারি এর মূল কারণ হলেও বর্তমানে জরুরি অবস্থা না থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছর জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি ধার করতে হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ ব্যয় কমানো গেলে ঋণ স্থিতিশীল হবে। ইতালি ও কানাডার মতো দেশ অতীতে এমন উদ্বৃত্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
রাজনৈতিক দুর্বলতা
অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে হলে রাজনৈতিক দৃঢ়তা দরকার। অথচ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও লেবার সরকার বাজেট সংস্কারে ব্যর্থ হচ্ছে। পেনশন ও কল্যাণ খাত সবচেয়ে বড় চাপ তৈরি করছে। বর্তমানে জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে পেনশনে, যা এক শতকে এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে। ভাতা গ্রহণকারীর সংখ্যাও অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে। সরকার পদক্ষেপ নিতে চাইলেও জনমতের চাপে বারবার পিছিয়েছে।
কর ও রাজস্ব
সরকার ইতিমধ্যেই কর বাড়িয়েছে। আগামী বছরগুলোতে রাজস্ব জিডিপির ৩৮ শতাংশে পৌঁছাবে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে নির্বাচনের আগে লেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে আয় ও ভোগের ওপর বড় কর চাপাবে না। তাই বিকল্প খোঁজা হচ্ছে, তবে অনেক প্রস্তাব ঝুঁকিপূর্ণ—যেমন পেনশন অবদানে কর বা বাসস্থানের মূলধনী মুনাফায় কর। এগুলো বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে।
অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, আর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা সক্রিয় হচ্ছে।
ভবিষ্যতের ঝুঁকি
যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে—বৃদ্ধ জনসংখ্যা, প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি, এবং ঋণের বোঝা সামলানো। নতুন কোনো বড় সংকট এলে ব্রিটেনের জন্য তা ভয়াবহ হতে পারে।
আন্তর্জাতিক তুলনা
কেউ কেউ বলছেন, ব্রিটেন হয়তো আবারও আইএমএফের সাহায্য নিতে বাধ্য হবে। তবে ১৯৭৬ সালের মতো বিদেশি মুদ্রার তীব্র সংকট নেই। বরং ২০২২ সালে লিজ ট্রাসের “মিনি বাজেট”–এর পর বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার কাছাকাছি।
যদি সরকার বাজেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, বাজার নিজেই চাপ সৃষ্টি করবে—আর সেই চাপ পুরো অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেবে।