০৬:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৩.৯% নাকি ৩.৫% এ নামবে?

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB)–এর সর্বশেষ আউটলুক বলছে, ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩.৯ শতাংশ হতে পারে। তবে যদি বৈশ্বিক শুল্কনীতি কঠোর হয়, জ্বালানি সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয় বা ব্যাংক খাতের সংস্কারে দেরি হয়, তাহলে প্রবৃদ্ধি নেমে যেতে পারে ৩.৫ শতাংশে। ADB বলছে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দুর্বল দেশীয় চাহিদা, জ্বালানি সংকট ও রাজনৈতিক চাপ এই পূর্বাভাসের পেছনে বড় কারণ। ২০২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২ শতাংশ।

ADB–এর বিশ্লেষণ: কেন কমছে প্রবৃদ্ধি

  • দেশীয় চাহিদা দুর্বল: উচ্চ দামের কারণে মানুষের আয় কার্যত কমে গেছে। ফলে খরচও কমছে। এই ধারা ২০২৫ সালেও চলবে।
  • জ্বালানি ও শিল্পখাতের ঝুঁকি: বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অনিশ্চয়তা, সরবরাহ সমস্যার জটিলতা এবং শ্রম অস্থিরতা শিল্পে চাপ তৈরি করছে।
  • নীতিগত কড়াকড়ি: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর আর্থিক ও রাজস্ব নীতি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তুলছে। এতে স্বল্পমেয়াদে প্রবৃদ্ধি সীমিত হচ্ছে।

তথ্যপ্রেক্ষিত
২০২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই–সেপ্টেম্বর ২০২৪)–এ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ১.৮ শতাংশে। অথচ আগের বছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ। এটিই আগামী দিনের পূর্বাভাসের মূল ভিত্তি।

মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক খাত

  • মুদ্রাস্ফীতি: ২০২৫ সালে ১২ মাসের গড় মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশে থাকার সম্ভাবনা। এর পেছনে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ সমস্যা ও টাকার দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৬ সালে ধীরে ধীরে কমার ইঙ্গিত রয়েছে।
  • চলতি হিসাব: বাণিজ্য ঘাটতি কমা ও রেমিট্যান্স বাড়ার ফলে ঘাটতি আরও সংকুচিত হতে পারে। তবে বৈশ্বিক শুল্কনীতি রপ্তানিতে নতুন চাপ তৈরি করতে পারে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
ADB–এর মতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় অর্থনীতির নতুন শুল্কনীতি এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। ফলে ২০২৫–২৬ সালের আঞ্চলিক পূর্বাভাসও নিচে নামানো হয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খুব সংবেদনশীল খাত। নতুন শুল্ক চাপ এলে অর্ডার, দাম এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

খাতভিত্তিক চিত্র

  • সেবা খাত: দাম কিছুটা কমলে ভোক্তা সেবা বাড়তে পারে। তবে আয় না বাড়লে পুরোপুরি পুনরুদ্ধার কঠিন।
  • কৃষি খাত: মৌসুম স্বাভাবিক থাকলে ও নীতিগত সহায়তা অব্যাহত থাকলে কৃষি খাত স্থিতিশীল থাকবে। তবে বন্যা ও আবহাওয়ার ঝুঁকি বড় অনিশ্চয়তা।
  • শিল্প খাত: জ্বালানি সংকট, বৈশ্বিক চাহিদার দুর্বলতা ও শুল্ক সমস্যার কারণে ২০২৫–এ শিল্প খাত ধীরগতিতে চলবে। তবে ২০২৬ সালে কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা আছে।

দুই ধরনের পূর্বাভাস (২০২৫ অর্থবছর)

  • বেসলাইন: প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩.৯ শতাংশ, গড় মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে ভোগ ও বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা সামলানো যাবে।
  • বিকল্প: নতুন শুল্ক, জ্বালানি বিপর্যয় বা ব্যাংক খাতের সংস্কারে দেরি হলে প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ৩.৫ শতাংশে।

২০২৬ সালের সম্ভাবনা
মূল্যচাপ কমা, জ্বালানি সরবরাহে উন্নতি, সতর্ক মুদ্রা–রাজস্ব নীতি বজায় রাখা এবং রপ্তানি ঝুঁকি কিছুটা সামলাতে পারলে ২০২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের ওপরে ওঠা সম্ভব।

জনপ্রিয় সংবাদ

২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৩.৯% নাকি ৩.৫% এ নামবে?

০১:২৪:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB)–এর সর্বশেষ আউটলুক বলছে, ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩.৯ শতাংশ হতে পারে। তবে যদি বৈশ্বিক শুল্কনীতি কঠোর হয়, জ্বালানি সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয় বা ব্যাংক খাতের সংস্কারে দেরি হয়, তাহলে প্রবৃদ্ধি নেমে যেতে পারে ৩.৫ শতাংশে। ADB বলছে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দুর্বল দেশীয় চাহিদা, জ্বালানি সংকট ও রাজনৈতিক চাপ এই পূর্বাভাসের পেছনে বড় কারণ। ২০২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২ শতাংশ।

ADB–এর বিশ্লেষণ: কেন কমছে প্রবৃদ্ধি

  • দেশীয় চাহিদা দুর্বল: উচ্চ দামের কারণে মানুষের আয় কার্যত কমে গেছে। ফলে খরচও কমছে। এই ধারা ২০২৫ সালেও চলবে।
  • জ্বালানি ও শিল্পখাতের ঝুঁকি: বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অনিশ্চয়তা, সরবরাহ সমস্যার জটিলতা এবং শ্রম অস্থিরতা শিল্পে চাপ তৈরি করছে।
  • নীতিগত কড়াকড়ি: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর আর্থিক ও রাজস্ব নীতি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তুলছে। এতে স্বল্পমেয়াদে প্রবৃদ্ধি সীমিত হচ্ছে।

তথ্যপ্রেক্ষিত
২০২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই–সেপ্টেম্বর ২০২৪)–এ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ১.৮ শতাংশে। অথচ আগের বছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ। এটিই আগামী দিনের পূর্বাভাসের মূল ভিত্তি।

মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক খাত

  • মুদ্রাস্ফীতি: ২০২৫ সালে ১২ মাসের গড় মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশে থাকার সম্ভাবনা। এর পেছনে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ সমস্যা ও টাকার দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৬ সালে ধীরে ধীরে কমার ইঙ্গিত রয়েছে।
  • চলতি হিসাব: বাণিজ্য ঘাটতি কমা ও রেমিট্যান্স বাড়ার ফলে ঘাটতি আরও সংকুচিত হতে পারে। তবে বৈশ্বিক শুল্কনীতি রপ্তানিতে নতুন চাপ তৈরি করতে পারে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
ADB–এর মতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় অর্থনীতির নতুন শুল্কনীতি এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। ফলে ২০২৫–২৬ সালের আঞ্চলিক পূর্বাভাসও নিচে নামানো হয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খুব সংবেদনশীল খাত। নতুন শুল্ক চাপ এলে অর্ডার, দাম এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

খাতভিত্তিক চিত্র

  • সেবা খাত: দাম কিছুটা কমলে ভোক্তা সেবা বাড়তে পারে। তবে আয় না বাড়লে পুরোপুরি পুনরুদ্ধার কঠিন।
  • কৃষি খাত: মৌসুম স্বাভাবিক থাকলে ও নীতিগত সহায়তা অব্যাহত থাকলে কৃষি খাত স্থিতিশীল থাকবে। তবে বন্যা ও আবহাওয়ার ঝুঁকি বড় অনিশ্চয়তা।
  • শিল্প খাত: জ্বালানি সংকট, বৈশ্বিক চাহিদার দুর্বলতা ও শুল্ক সমস্যার কারণে ২০২৫–এ শিল্প খাত ধীরগতিতে চলবে। তবে ২০২৬ সালে কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা আছে।

দুই ধরনের পূর্বাভাস (২০২৫ অর্থবছর)

  • বেসলাইন: প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩.৯ শতাংশ, গড় মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে ভোগ ও বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা সামলানো যাবে।
  • বিকল্প: নতুন শুল্ক, জ্বালানি বিপর্যয় বা ব্যাংক খাতের সংস্কারে দেরি হলে প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ৩.৫ শতাংশে।

২০২৬ সালের সম্ভাবনা
মূল্যচাপ কমা, জ্বালানি সরবরাহে উন্নতি, সতর্ক মুদ্রা–রাজস্ব নীতি বজায় রাখা এবং রপ্তানি ঝুঁকি কিছুটা সামলাতে পারলে ২০২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের ওপরে ওঠা সম্ভব।