মামলার নিষ্পত্তি ও আর্থিক জরিমানা
অ্যামাজন তাদের প্রাইম গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে সাবস্ক্রিপশন বাড়ানোর অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) সঙ্গে দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মীমাংসায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার ভুক্তভোগী গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হবে এবং এক বিলিয়ন ডলার জরিমানা হিসেবে এফটিসিকে প্রদান করবে। কোম্পানিটি কোনো অপরাধ স্বীকার করেনি।
প্রায় তিন কোটি পঞ্চাশ লাখ প্রাইম গ্রাহক এ অর্থ ফেরতের আওতায় আসবেন। যাঁরা ২৩ জুন ২০১৯ থেকে ২৩ জুন ২০২৫-এর মধ্যে প্রাইমে যুক্ত হয়েছিলেন এবং পরে সেবা কম ব্যবহার করেছেন, তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে একান্ন ডলার পাবেন। এছাড়া, যাঁরা সাবস্ক্রিপশন বাতিল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন, তাঁরাও দাবি দাখিল করতে পারবেন।
গ্রাহকদের জন্য নতুন শর্ত ও পরিবর্তন
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, অ্যামাজনকে সাবস্ক্রিপশন বাতিল সহজ করতে হবে এবং স্পষ্টভাবে “প্রাইম গ্রহণ করতে চাই না” বোতাম যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি, সাবস্ক্রিপশনে যোগ দেওয়ার সময় শর্তগুলো আরও পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে এবং একটি স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান এসব বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবে।
অ্যামাজনের দাবি, তারা ইতোমধ্যে এসব পরিবর্তন বাস্তবায়ন করেছে এবং এখন কেবল তা বজায় রাখতে হবে। কোম্পানির বক্তব্য অনুযায়ী, তারা গ্রাহকদের স্বচ্ছ ও সহজ সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং এই সমঝোতা তাদেরকে সামনে এগোতে সাহায্য করবে।
এফটিসির অভিযোগ ও তদন্ত প্রক্রিয়া
এফটিসি অভিযোগ করে যে, ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অ্যামাজন ইচ্ছাকৃতভাবে এমন প্রক্রিয়া বজায় রেখেছিল যা গ্রাহকদের জন্য প্রাইমে যোগ দেওয়া ও বাতিল করা কঠিন করেছিল। তদন্ত চলাকালে জানা যায়, কোম্পানির কিছু নির্বাহী পরিবর্তনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ২০২২ সালে, তদন্তের চাপে পড়ে তারা পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়।
এফটিসির ভাষায়, এটি সংস্থার ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রাহক ক্ষতিপূরণ। এফটিসি চেয়ার অ্যান্ড্রু ফার্গুসন একে “রেকর্ড ভঙ্গকারী বিজয়” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এটি এমন আমেরিকানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যারা বছরের পর বছর প্রতারণামূলক সাবস্ক্রিপশনের শিকার হয়েছেন।
রাজনৈতিক ও আইনি প্রেক্ষাপট
এফটিসির তদন্ত শুরু হয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে। মামলা দায়ের হয় জো বাইডেনের সময়কালে। সাবেক এফটিসি চেয়ার লিনা খান মন্তব্য করেন, দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার অ্যামাজনের জন্য সামান্য অর্থ হলেও, এটি নির্বাহীদের জন্য বড় স্বস্তি যারা জেনেও গ্রাহকদের ক্ষতি করেছেন।
মামলাটি সিয়াটলের ফেডারেল কোর্টে চলছিল, যেখানে এফটিসি যুক্তি দেয়, অ্যামাজন গ্রাহকের ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক, তাদের প্রাইমে যুক্ত করতে চাইত।
প্রাইমের বাজার আধিপত্য অটুট
অ্যামাজন ২০০৫ সালে বার্ষিক ঊনআশি ডলারে প্রাইম চালু করে। বর্তমানে সাবস্ক্রিপশন ফি বেড়ে একশত ঊনচল্লিশ ডলার হয়েছে (২০২২)। শুধু ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই প্রাইম থেকে তেইশ দশমিক নয় বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব এসেছে।
এফটিসি জানায়, গ্রাহকদের ফ্রি ট্রায়ালের মাধ্যমে আকৃষ্ট করতে অ্যামাজন নানা প্রচারণা চালায় যেমন “ফ্রি সেম-ডে ডেলিভারি”। তবে শর্তগুলো যথাযথভাবে জানানো হয়নি, ফলে অনেক গ্রাহক অজান্তেই সাবস্ক্রিপশনে যুক্ত হন।
তবুও বিশ্লেষকদের ধারণা, এই নিষ্পত্তি প্রাইমের জনপ্রিয়তায় তেমন প্রভাব ফেলবে না। ইমার্কেটার বিশ্লেষক জ্যাক স্ট্যামবর বলেন, “প্রাইম বাতিল করা সহজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এটি এখনো মার্কিন গৃহস্থালির একটি গভীরভাবে প্রোথিত অভ্যাস।”