১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
পাবনায় আধিপত্যের সংঘর্ষে ‘নকশাল’ নেতা গুলি ও ধারালো অস্ত্রে নিহত কাঠবিড়ালিদের ছবি তুলে কষ্ট ভুলে থাকেন নিকি পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে বিপর্যয়ে সংঘাত মানুষ ও বন্যপ্রাণীর চীনে খ্রিষ্টানদের ওপর দমন-পীড়ন আরও বাড়ার শঙ্কা সোনা: ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বেশি, মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী এইচএসসির ফল: উচ্চ মাধ্যমিকে ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফলাফলের পেছনে কারণ কী? বগুড়ার রক্তদাহ নদী: ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বাংলাদেশের ইন্টারিমকে সংবিধান মানতে হবে জুলাই নেতাদের কণ্ঠে কেন “সেইফ এক্সিট” শব্দ পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১১০) নাৎসি জার্মানি থেকে অবাধ্যের পাঠ

সোনার জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশ, লাগামহীন দামে বিপর্যস্ত বাজার

  • Sarakhon Report
  • ০৫:১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
  • 37

ইউএনবি থেকে অনূদিত

সোনার দামে রেকর্ড উল্লম্ফন

বাংলাদেশে সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ খাত থেকে শুরু করে স্থানীয় গয়নার বাজার পর্যন্ত।

গত বছরের শেষে ২২ ক্যারেট সোনার ভরি প্রতি দাম ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৮৮ টাকা। মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৪ টাকায়। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৯ টাকায়।

শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ভরি প্রতি ২১ হাজার টাকা বেড়েছে। সর্বশেষ ২ হাজার ৪১৫ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

চাহিদা কমেছেবিপাকে স্বর্ণকাররা

দাম বাড়ার কারণে গহনার চাহিদা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেক স্বর্ণকার দিনভর বসে থাকেন অলস সময় নিয়ে। ক্রেতারা এখন মূলত পুরোনো সোনা বিক্রি করতে বা সোনার জামানতে ঋণ নিতে দোকানে আসছেন।

তান্তিবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোবিন্দ হালদার বলেন, “২০০০ সালে ভরি প্রতি সোনার দাম ছিল ১০ হাজার টাকারও কম। কিন্তু এখন লাগামহীন দাম বাড়তে বাড়তে আমাদের অর্ধেক ক্রেতা হারাতে হয়েছে।”

দাম সমন্বয়: বাড়ে বেশিকমে সামান্য

বাজুসের তথ্যানুসারে, এ বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪১ বার দাম বেড়েছে, আর কমেছে মাত্র ১৭ বার। গত বছর পুরো বছরে ৬২ বার দাম সমন্বয় করা হয়, যার মধ্যে ৩৫ বারই ছিল দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত।

ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, ২০০০ সালে ভরি প্রতি ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ৬,৯০০ টাকা, ২০১০ সালে ৪২,১৬৫ টাকা, আর ২০২০ সালে দাঁড়ায় ৫৯,১৯৫ টাকায়। গত পাঁচ বছরে দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ, গত দশকে ৩৬১ শতাংশ এবং গত ২৫ বছরে বেড়েছে ২,৭১৯ শতাংশ।

বৈশ্বিক কারণেই দাম বাড়ছে

বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বুলিয়ন বাজারের ওপর নির্ভর করেই দাম ওঠানামা করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের অবমূল্যায়ন এবং চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনার মজুত বৃদ্ধিই দামের উল্লম্ফনের প্রধান কারণ।

বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ৩,৭৪২ ডলার, যা প্রায় ২.৪৩ ভরি সমান। হিসাব করলে প্রতি ভরি দাম দাঁড়ায় ১,৫৪০ ডলার বা ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৮০ টাকা—যা স্থানীয় বাজারের সঙ্গে প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ।

Why is gold market so unstable?

বিক্রি কমেছে দেশে-বিদেশে

বাজুস জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে সোনার বিক্রি কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। ভারতেও বিক্রি কমেছে ৪০ শতাংশ, আর দুবাইয়ে প্রায় ২০ শতাংশ।

মাসুদুর রহমান আশঙ্কা করছেন, দাম বাড়তে থাকলে বিক্রি আরও কমতে পারে।

সামাজিক ও পারিবারিক চাপে সোনার গুরুত্ব

বাংলাদেশে বিয়ে-সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে সোনার অলংকার এখনো অপরিহার্য। একসময় নবজাতক সন্তান জন্ম নিলে পরিবারে আত্মীয়রা স্বর্ণালঙ্কার উপহার দিতেন। এমনকি সোনা দিতে না পারা অনেক বিয়ের ভাঙনেরও কারণ হয়েছে।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। মুদ্রাস্ফীতিতে সঞ্চয় ক্ষয় হচ্ছে, আর এক টুকরো সাধারণ আংটি বা কানের দুল কিনতেও খরচ হচ্ছে ১ লাখ টাকা—যা দেশের মাথাপিছু বার্ষিক আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

Gold price hits record high of Tk1.91 lakh per bhori

একজন বেসরকারি কর্মচারী আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমি মেয়ের বিয়েতে নতুন কিছু কিনতে পারিনি, মায়ের গয়নাতেই কাজ চালিয়েছি।” গড়পড়তা এক মধ্যবিত্ত বিয়ের বাজেট এখন প্রায় ৫ লাখ টাকা।

অস্থির বাজার ও বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ

বাজারের এ দোলাচালে ক্রেতাদের আস্থা কমছে। তবে বাজুসের নেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখেই দাম সমন্বয় করা হয়।

বিশ্ব সোনা পরিষদের (World Gold Council) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক সোনার চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৪,৯৭৪ টন, যার আর্থিক মূল্য ৬০০ বিলিয়ন ডলার। এ চাহিদার ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ, ৩৩ শতাংশ অলংকার, ২০ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মজুত এবং ৭ শতাংশ চিপ তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে।

বাংলাদেশে সোনার চাহিদা বা মাথাপিছু ব্যবহার নিয়ে সরকারি কোনো তথ্য নেই। তবে দেশে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

জনপ্রিয় সংবাদ

পাবনায় আধিপত্যের সংঘর্ষে ‘নকশাল’ নেতা গুলি ও ধারালো অস্ত্রে নিহত

সোনার জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশ, লাগামহীন দামে বিপর্যস্ত বাজার

০৫:১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

ইউএনবি থেকে অনূদিত

সোনার দামে রেকর্ড উল্লম্ফন

বাংলাদেশে সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ খাত থেকে শুরু করে স্থানীয় গয়নার বাজার পর্যন্ত।

গত বছরের শেষে ২২ ক্যারেট সোনার ভরি প্রতি দাম ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৮৮ টাকা। মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৪ টাকায়। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৯ টাকায়।

শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ভরি প্রতি ২১ হাজার টাকা বেড়েছে। সর্বশেষ ২ হাজার ৪১৫ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

চাহিদা কমেছেবিপাকে স্বর্ণকাররা

দাম বাড়ার কারণে গহনার চাহিদা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেক স্বর্ণকার দিনভর বসে থাকেন অলস সময় নিয়ে। ক্রেতারা এখন মূলত পুরোনো সোনা বিক্রি করতে বা সোনার জামানতে ঋণ নিতে দোকানে আসছেন।

তান্তিবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোবিন্দ হালদার বলেন, “২০০০ সালে ভরি প্রতি সোনার দাম ছিল ১০ হাজার টাকারও কম। কিন্তু এখন লাগামহীন দাম বাড়তে বাড়তে আমাদের অর্ধেক ক্রেতা হারাতে হয়েছে।”

দাম সমন্বয়: বাড়ে বেশিকমে সামান্য

বাজুসের তথ্যানুসারে, এ বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪১ বার দাম বেড়েছে, আর কমেছে মাত্র ১৭ বার। গত বছর পুরো বছরে ৬২ বার দাম সমন্বয় করা হয়, যার মধ্যে ৩৫ বারই ছিল দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত।

ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, ২০০০ সালে ভরি প্রতি ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ৬,৯০০ টাকা, ২০১০ সালে ৪২,১৬৫ টাকা, আর ২০২০ সালে দাঁড়ায় ৫৯,১৯৫ টাকায়। গত পাঁচ বছরে দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ, গত দশকে ৩৬১ শতাংশ এবং গত ২৫ বছরে বেড়েছে ২,৭১৯ শতাংশ।

বৈশ্বিক কারণেই দাম বাড়ছে

বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বুলিয়ন বাজারের ওপর নির্ভর করেই দাম ওঠানামা করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের অবমূল্যায়ন এবং চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনার মজুত বৃদ্ধিই দামের উল্লম্ফনের প্রধান কারণ।

বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ৩,৭৪২ ডলার, যা প্রায় ২.৪৩ ভরি সমান। হিসাব করলে প্রতি ভরি দাম দাঁড়ায় ১,৫৪০ ডলার বা ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৮০ টাকা—যা স্থানীয় বাজারের সঙ্গে প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ।

Why is gold market so unstable?

বিক্রি কমেছে দেশে-বিদেশে

বাজুস জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে সোনার বিক্রি কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। ভারতেও বিক্রি কমেছে ৪০ শতাংশ, আর দুবাইয়ে প্রায় ২০ শতাংশ।

মাসুদুর রহমান আশঙ্কা করছেন, দাম বাড়তে থাকলে বিক্রি আরও কমতে পারে।

সামাজিক ও পারিবারিক চাপে সোনার গুরুত্ব

বাংলাদেশে বিয়ে-সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে সোনার অলংকার এখনো অপরিহার্য। একসময় নবজাতক সন্তান জন্ম নিলে পরিবারে আত্মীয়রা স্বর্ণালঙ্কার উপহার দিতেন। এমনকি সোনা দিতে না পারা অনেক বিয়ের ভাঙনেরও কারণ হয়েছে।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। মুদ্রাস্ফীতিতে সঞ্চয় ক্ষয় হচ্ছে, আর এক টুকরো সাধারণ আংটি বা কানের দুল কিনতেও খরচ হচ্ছে ১ লাখ টাকা—যা দেশের মাথাপিছু বার্ষিক আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

Gold price hits record high of Tk1.91 lakh per bhori

একজন বেসরকারি কর্মচারী আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমি মেয়ের বিয়েতে নতুন কিছু কিনতে পারিনি, মায়ের গয়নাতেই কাজ চালিয়েছি।” গড়পড়তা এক মধ্যবিত্ত বিয়ের বাজেট এখন প্রায় ৫ লাখ টাকা।

অস্থির বাজার ও বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ

বাজারের এ দোলাচালে ক্রেতাদের আস্থা কমছে। তবে বাজুসের নেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখেই দাম সমন্বয় করা হয়।

বিশ্ব সোনা পরিষদের (World Gold Council) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক সোনার চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৪,৯৭৪ টন, যার আর্থিক মূল্য ৬০০ বিলিয়ন ডলার। এ চাহিদার ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ, ৩৩ শতাংশ অলংকার, ২০ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মজুত এবং ৭ শতাংশ চিপ তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে।

বাংলাদেশে সোনার চাহিদা বা মাথাপিছু ব্যবহার নিয়ে সরকারি কোনো তথ্য নেই। তবে দেশে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।