ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) শতবর্ষ উদযাপনে নাগপুরে প্রধান সংগঠক মোহন ভাগবত বৃহস্পতিবার বক্তব্য দেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী ‘শস্ত্র পূজা’ করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা ড. কেশব বালিরাও হেডগেওয়ারকে শ্রদ্ধা জানান। বক্তব্যে তিনি সন্ত্রাসবাদ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক সংকট ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুদ্ধসহ সমসাময়িক নানা চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গ তোলেন। ভাগবত আত্মনির্ভরশীলতা, সামাজিক ঐক্য ও কূটনৈতিক সতর্কতার ওপর জোর দেন।
বিশ্ব ও ভারতের ভূমিকা
ভাগবতের মতে, বিশ্ব এখন ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ভারতকে উদাহরণ তৈরি করতে হবে এবং মানবতার জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করতে হবে।
সরকার ও জনগণের সম্পর্ক
ভাগবত সতর্ক করেন, সরকার যদি জনগণের সমস্যার থেকে দূরে সরে যায় এবং নীতিনির্ধারণে সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়, তবে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। তবে তিনি সহিংস আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বলেন, এসব কখনো লক্ষ্য পূরণ করে না, বরং বিদেশি শক্তির সুযোগ সৃষ্টি করে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও হিমালয়ের সংকেত
তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূমিধস ও অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত বেড়ে গেছে। হিমালয়কে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা প্রাচীর ও পানির উৎস হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান উন্নয়নের ধারা যদি এই বিপর্যয় বাড়ায় তবে তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। হিমালয়ের পরিস্থিতি সতর্কবার্তা দিচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আত্মনির্ভরতা
ভাগবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, প্রতিটি দেশ নিজের স্বার্থ দেখে। কিন্তু বিশ্ব পারস্পরিক নির্ভরতার ওপর চলে। কোনো দেশ একা টিকে থাকতে পারে না। তবে এই নির্ভরশীলতা যেন বাধ্যবাধকতায় পরিণত না হয়। এজন্য স্বদেশি নীতি ও আত্মনির্ভরশীলতার ওপর জোর দিতে হবে, পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
সন্ত্রাসবাদ ও অপারেশন সিন্ধুর শিক্ষা
ভাগবত স্মরণ করান, সীমান্তপারের সন্ত্রাসীরা ধর্ম জিজ্ঞেস করে ২৬ জন ভারতীয়কে হত্যা করে। এই ঘটনায় গোটা দেশ শোকাহত ও ক্ষুব্ধ হয়। তিনি বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনী যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে পাল্টা জবাব দেয়। এই অভিযানের মাধ্যমে ভারতের প্রকৃত বন্ধু কোন দেশ তা প্রকাশ পায়। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করেন, দেশের ভেতরেও অসাংবিধানিক উপাদান সক্রিয় রয়েছে।
পাহলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ
এ বছর শুরুর দিকে জম্মু-কাশ্মীরের পাহলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরপরাধ মানুষ নিহত হন। ভাগবত বলেন, এই ঘটনায় দেশব্যাপী শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দিলেও তিনি সতর্ক করে দেন যে, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ বজায় রাখলেও দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক ও শক্তিশালী হতে হবে।
চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়া
তিনি বলেন, শাসনব্যবস্থার দুর্বলতায় মানুষ হতাশ হয়ে চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটি ঠেকাতে রাষ্ট্র ও সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে মানুষের আস্থা বজায় থাকে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিতি
শতবর্ষ উদযাপনে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গडकরি ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মোহন ভাগবত ‘শস্ত্র পূজায়’ আধুনিক অস্ত্রের প্রতীক হিসেবে পিনাকা রকেট ও ড্রোনের প্রতিকৃতি প্রদর্শন করেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দও তার সঙ্গে আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা ড. হেডগেওয়ারের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লিতে আরএসএসের শতবর্ষ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সংগঠনের জাতি গঠনে ভূমিকা ও নাগরিক দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধির প্রশংসা করেন।