০৩:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি গাজীপুরে ট্রেনের ধাক্কায় দুই নারী ও এক কিশোরীর মৃত্যু মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশায় দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত চার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮) রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন তারেক রহমান নরওয়ের বড়দিনে বিতর্কিত খাবার লুটেফিস্কের প্রত্যাবর্তন, ঐতিহ্যেই ফিরছে স্বাদ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৫) নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব?

পাকিস্তানে বিচারপতি জাহাঙ্গীরের আইন ডিগ্রি বাতিলের বিতর্ক আদালতে

আদালতের আদেশ

সিন্ধু হাইকোর্ট শুক্রবার করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই নোটিশ স্থগিত করেছে, যেখানে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক মাহমুদ জাহাঙ্গীরির আইন ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছিল।
এই সিদ্ধান্ত আসে বিচারপতি জাহাঙ্গীরির করা এক রিট আবেদনের শুনানির সময়। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যায় উপায় কমিটি ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

শুনানিতে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, সিন্ধু অ্যাডভোকেট জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টরা হাজির হন এবং সময় চেয়ে নেন। এ সময় বিচারপতি ইকবাল কালহোরো প্রশ্ন তোলেন—যদি এই সময়ে বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে তার দায় কে নেবে?

তিনি আরও বলেন, ৩০-৩৫ বছর পর যদি ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তবে আগে নোটিশ দেওয়া উচিত ছিল।

আদালতের পর্যবেক্ষণ

বিচারপতি কালহোরো উল্লেখ করেন,
“আমরা বলছি না যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। আইন সে সুযোগ দেয়। কিন্তু কারও সারা জীবনের সম্মান ও অর্জনকে এভাবে ঝুঁকিতে ফেলা যায় না।”

আদালত শুনানি ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করে এবং ওই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের জবাব দিতে নির্দেশ দেয়।

জাহাঙ্গীরির দাবি

আবেদনে বিচারপতি জাহাঙ্গীরির দাবি, তার ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছে অবৈধ ও অসৎ উদ্দেশ্যে।
তিনি অভিযোগ করেন, সুপ্রিম বিচারিক কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে অপসারণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে নতুন কৌশল হিসেবে সরকারি প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, ডিগ্রি বাতিলের কারণে তাকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়।
অন্যায় উপায় কমিটির সিদ্ধান্তকে তিনি অপ্রত্যাশিত ও চমকপ্রদ বলে অভিহিত করেন, কারণ ৩২ বছর পর তাকে কোনো নোটিশ বা যুক্তি ছাড়াই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ভুয়া ডিগ্রি বিতর্কের শুরু

গত বছর সামাজিক মাধ্যমে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চিঠি ভাইরাল হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, তারিক মাহমুদ ১৯৯১ সালে আইন বিভাগ থেকে ডিগ্রি পান (ভর্তি নং ৫৯৬৮)। কিন্তু ওই ভর্তি নম্বর ১৯৮৭ সালে ইমতিয়াজ আহমদ নামে আরেক ছাত্রের নামে ব্যবহৃত হয়েছিল।

একইসঙ্গে দেখা যায়, তারিক জাহাঙ্গীরির নামে নম্বরপত্র ইস্যু করা হয়েছে এবং আরেক নম্বর (৭১২৪) ব্যবহার করে তিনি প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় এটিকে জাল নয় বরং অবৈধ ঘোষণা করে, কারণ একই ডিগ্রির জন্য দুটি ভর্তি নম্বর থাকা নিয়মবিরুদ্ধ।

আইনি জটিলতা ও আদালতের অবস্থান

  • ১০ জুলাই ২০২৪: ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এই প্রচারণাকে আদালতকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা বলে রায় দেয়।
  • সেপ্টেম্বর মাসে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট জাহাঙ্গীরির ডিগ্রি বাতিল করে, তবে তার অনুপস্থিতিতে।
  • ওই সময় সিন্ডিকেটের সদস্য অধ্যাপক রিয়াজ আহমদকে পুলিশ আটক করেছিল, যাতে তিনি বৈঠকে যোগ দিতে না পারেন।
  • কয়েকদিন পর সিন্ধু হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে, কারণ জাহাঙ্গীরিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।

পরে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট বিচারপতি জাহাঙ্গীরিকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে বিরত রাখে, যতক্ষণ না সুপ্রিম বিচারিক কাউন্সিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়।

বিচারপতি জাহাঙ্গীরির ডিগ্রি বিতর্ক এখনো আদালতে ঝুলে আছে। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করছে পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে, অন্যদিকে জাহাঙ্গীরির বক্তব্য—এটি তার স্বাধীন বিচারিক অবস্থান দুর্বল করার কৌশল।
আগামী ২৪ অক্টোবর আদালতের পরবর্তী শুনানি এই জটিল মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

পাকিস্তানে বিচারপতি জাহাঙ্গীরের আইন ডিগ্রি বাতিলের বিতর্ক আদালতে

০২:৩১:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

আদালতের আদেশ

সিন্ধু হাইকোর্ট শুক্রবার করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই নোটিশ স্থগিত করেছে, যেখানে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক মাহমুদ জাহাঙ্গীরির আইন ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছিল।
এই সিদ্ধান্ত আসে বিচারপতি জাহাঙ্গীরির করা এক রিট আবেদনের শুনানির সময়। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যায় উপায় কমিটি ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

শুনানিতে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, সিন্ধু অ্যাডভোকেট জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টরা হাজির হন এবং সময় চেয়ে নেন। এ সময় বিচারপতি ইকবাল কালহোরো প্রশ্ন তোলেন—যদি এই সময়ে বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে তার দায় কে নেবে?

তিনি আরও বলেন, ৩০-৩৫ বছর পর যদি ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তবে আগে নোটিশ দেওয়া উচিত ছিল।

আদালতের পর্যবেক্ষণ

বিচারপতি কালহোরো উল্লেখ করেন,
“আমরা বলছি না যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। আইন সে সুযোগ দেয়। কিন্তু কারও সারা জীবনের সম্মান ও অর্জনকে এভাবে ঝুঁকিতে ফেলা যায় না।”

আদালত শুনানি ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করে এবং ওই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের জবাব দিতে নির্দেশ দেয়।

জাহাঙ্গীরির দাবি

আবেদনে বিচারপতি জাহাঙ্গীরির দাবি, তার ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছে অবৈধ ও অসৎ উদ্দেশ্যে।
তিনি অভিযোগ করেন, সুপ্রিম বিচারিক কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে অপসারণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে নতুন কৌশল হিসেবে সরকারি প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, ডিগ্রি বাতিলের কারণে তাকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়।
অন্যায় উপায় কমিটির সিদ্ধান্তকে তিনি অপ্রত্যাশিত ও চমকপ্রদ বলে অভিহিত করেন, কারণ ৩২ বছর পর তাকে কোনো নোটিশ বা যুক্তি ছাড়াই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ভুয়া ডিগ্রি বিতর্কের শুরু

গত বছর সামাজিক মাধ্যমে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চিঠি ভাইরাল হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, তারিক মাহমুদ ১৯৯১ সালে আইন বিভাগ থেকে ডিগ্রি পান (ভর্তি নং ৫৯৬৮)। কিন্তু ওই ভর্তি নম্বর ১৯৮৭ সালে ইমতিয়াজ আহমদ নামে আরেক ছাত্রের নামে ব্যবহৃত হয়েছিল।

একইসঙ্গে দেখা যায়, তারিক জাহাঙ্গীরির নামে নম্বরপত্র ইস্যু করা হয়েছে এবং আরেক নম্বর (৭১২৪) ব্যবহার করে তিনি প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় এটিকে জাল নয় বরং অবৈধ ঘোষণা করে, কারণ একই ডিগ্রির জন্য দুটি ভর্তি নম্বর থাকা নিয়মবিরুদ্ধ।

আইনি জটিলতা ও আদালতের অবস্থান

  • ১০ জুলাই ২০২৪: ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এই প্রচারণাকে আদালতকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা বলে রায় দেয়।
  • সেপ্টেম্বর মাসে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট জাহাঙ্গীরির ডিগ্রি বাতিল করে, তবে তার অনুপস্থিতিতে।
  • ওই সময় সিন্ডিকেটের সদস্য অধ্যাপক রিয়াজ আহমদকে পুলিশ আটক করেছিল, যাতে তিনি বৈঠকে যোগ দিতে না পারেন।
  • কয়েকদিন পর সিন্ধু হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে, কারণ জাহাঙ্গীরিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।

পরে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট বিচারপতি জাহাঙ্গীরিকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে বিরত রাখে, যতক্ষণ না সুপ্রিম বিচারিক কাউন্সিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়।

বিচারপতি জাহাঙ্গীরির ডিগ্রি বিতর্ক এখনো আদালতে ঝুলে আছে। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করছে পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে, অন্যদিকে জাহাঙ্গীরির বক্তব্য—এটি তার স্বাধীন বিচারিক অবস্থান দুর্বল করার কৌশল।
আগামী ২৪ অক্টোবর আদালতের পরবর্তী শুনানি এই জটিল মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।