পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর (পিওজেকে)-এ সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আন্দোলন ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় মানুষদের অধিকার ও সম্পদ দাবির প্রশ্নে আন্দোলন জোরদার হয়েছে। এ পরিস্থিতি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদেও (ইউএনএইচআরসি) আলোচনায় উঠে এসেছে।
প্রতিবাদের সূত্রপাত
মুজাফফরাবাদসহ বিভিন্ন জেলায় জম্মু কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি (জেকজেএএসি)-এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়।
প্রথমে শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট ও অবরোধ দিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত ও ২২ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
আন্দোলনের মূল দাবি হলো সরকারের প্রতি দেওয়া ৩৮ দফা চার্টার বাস্তবায়ন। এর মধ্যে শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ১২টি আসন বাতিল করা এবং অভিজাত শ্রেণির বিশেষ সুবিধা বন্ধ করার বিষয়ও রয়েছে।
সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান সরকার আন্দোলন দমনে কঠোর অবস্থান নেয়। মুজাফফরাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও রেঞ্জার্স মোতায়েন করা হয়।
টেলিফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করে দেওয়া হয়, যার ফলে প্রায় ৩০ লাখ কাশ্মীরি কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বিদেশে থাকা আরও প্রায় ২০ লাখ কাশ্মীরির সঙ্গে তাদের পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও সহিংসতা থামেনি। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, অন্তত তিনজন পুলিশ নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সাধারণ মানুষও রয়েছেন।
জাতিসংঘে ইস্যুটি তোলা
জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৬০তম অধিবেশনে বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করেন ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টির মুখপাত্র নাসির আজিজ খান।
তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, পাকিস্তানের দমননীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। খান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি ও ভিয়েনা ডিক্লারেশনের দিকেও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও ভবিষ্যৎ
মিরপুর, কোটলি ও মুজাফফরাবাদসহ একাধিক জেলায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। দোকানপাট, হোটেল ও পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুল খোলা থাকলেও শ্রেণিকক্ষ ছিল প্রায় ফাঁকা।
আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের দাবিগুলো পূরণ না হলে প্রতিবাদ আরও তীব্র হবে।
পিওজেকে বর্তমানে এক গভীর অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার, সম্পদের ভাগাভাগি ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তা আরও বড় মানবিক সংকটে রূপ নিতে পারে।