ভূমিকা
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরজুড়ে সহিংস বিক্ষোভের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উচ্চপর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধি দল যৌথ অ্যাকশন কমিটির (জেএএসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে নানা দাবি নিয়ে আলোচনা হয় এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।
বিক্ষোভ ও প্রাণহানি
বুধবারের সহিংসতায় অন্তত নয়জন নিহত হন—এর মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য ও ছয়জন সাধারণ মানুষ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৭২ জন পুলিশ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া প্রায় ৫০ জন সাধারণ মানুষও আহত হয়েছেন।
সরকারের প্রতিনিধি দলের বৈঠক
সরকারের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিনেটর রানা সানাউল্লাহ, ফেডারেল মন্ত্রী সারদার ইউসুফ, তারিক ফজল চৌধুরী, আহসান ইকবাল, সাবেক আজাদ কাশ্মীর প্রেসিডেন্ট মাসউদ খান এবং পিপিপির কায়রা। বৈঠকের পর নেতারা জানান, বহু বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে এবং আলোচনা হয়েছে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে।
ফেডারেল মন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো শান্তি প্রতিষ্ঠা। তিনি সতর্ক করেন, দেশের শত্রুরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে।
পিপিপি নেতা কায়রা জানান, প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সমাধানে আন্তরিক।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি স্বচ্ছ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিক সাহায্য দেওয়ার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করা উচিত নয়। পাশাপাশি কাশ্মীরের জনগণের সমস্যার সমাধানে সরকারের সদা প্রস্তুতির আশ্বাস দেন।
দাবিগুলো
অ্যাকশন কমিটি মোট ৩৮ দফা দাবি জানিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—শরণার্থীদের জন্য রাখা ১২টি সংরক্ষিত আসন বাতিল এবং অভিজাত শ্রেণির বিশেষ সুবিধা কমানো।
মন্ত্রী তারিক ফজল চৌধুরী জানান, ৯০ শতাংশ দাবি ইতোমধ্যেই মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে দুটি দাবি সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় সময়সাপেক্ষ।
আজাদ কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী আনোয়ার-উল-হকও বলেন, অধিকাংশ দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে এবং বাকি বিষয়েও আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিক্ষোভ নয়, আলোচনাই সমস্যার একমাত্র সমাধান।
শান্তি ও আলোচনার ডাক
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধৈর্য ধরার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আলোচনার কমিটিকে আরও সম্প্রসারণ করেছেন এবং প্রতিনিধিদের মুজাফফরাবাদে পাঠিয়েছেন তাৎক্ষণিক সমাধানের খোঁজে।
তিনি আরও ঘোষণা করেন, দেশে ফিরে তিনি নিজে আলোচনার প্রক্রিয়া তদারকি করবেন। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থেকে আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানান, যাতে দ্রুত সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়।