০৩:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি গাজীপুরে ট্রেনের ধাক্কায় দুই নারী ও এক কিশোরীর মৃত্যু মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশায় দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত চার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮) রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন তারেক রহমান নরওয়ের বড়দিনে বিতর্কিত খাবার লুটেফিস্কের প্রত্যাবর্তন, ঐতিহ্যেই ফিরছে স্বাদ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৫) নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব?

অবসরপ্রাপ্তদের নতুন কর্মসংস্থান আকাশচুম্বী ভবনে খাবার পৌঁছে দেওয়া

চীনের শেনঝেন শহরের বিখ্যাত আকাশচুম্বী ভবন এসইজি প্লাজায় খাবার পৌঁছে দেওয়ার শেষ ধাপের দায়িত্ব পালন করেন মূলত অবসরপ্রাপ্ত ও কিশোর-কিশোরীরা। ডেলিভারি রাইডাররা ভবনের ভিড় ও লিফটের দীর্ঘ লাইনে পড়ে সময় নষ্ট না করে তাঁদের হাতে ব্যাগ তুলে দেন। এর বিনিময়ে তাঁরা পান মাত্র ২ ইউয়ান (প্রায় ২৮ সেন্ট)।


লাঞ্চ টাইমের দৌড়ঝাঁপ

৭০ তলা বিশাল এই ভবনে দুপুরের ব্যস্ত সময়ে লিফটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় আধা ঘণ্টা পর্যন্ত। ফলে খাবার সরবরাহে রাইডারদের সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণেই গড়ে উঠেছে এই “লাস্ট-মাইল রানার” পেশা।

উদাহরণস্বরূপ, ১৬ বছর বয়সী লি লিনশিং দুপুরের আগেই ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন। রাইডার আসামাত্র তিনি হাত তুলে চিৎকার করেন: ‘ডেলিভারি স্ট্যান্ড-ইন!’ রাইডার ব্যাগ তাঁর হাতে দিয়ে কিউআর কোড স্ক্যান করেন, সঙ্গে সঙ্গেই অর্থ চলে আসে লিনশিংয়ের কাছে। এরপর লিফটের ভিড় পেরিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়ে আবার নিচে নেমে আসেন। এই কাজ চলে রাত ৮টা পর্যন্ত।


কেন করছে তাঁরা এই কাজ?

এসইজি প্লাজার সামনে প্রতিদিন ভিড় জমে থাকে ডজনখানেক রানারের। বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত, তবে গ্রীষ্মকালে স্কুল-ছুট কিশোররাও যোগ দেয়। কারও জন্য এটি আয়ের প্রয়োজন, আবার কেউ করেন ব্যায়াম বা সময় কাটানোর জন্য।

লিনশিং প্রথমে কৌতূহলবশত এসেছিলেন, পরে আয়ের জন্য কাজ শুরু করেন। তিনি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ ইউয়ান (প্রায় ১৪ ডলার) আয় করেন। শেনঝেনের বেসরকারি খাতের গড় মজুরি দৈনিক ৩৭ ডলার হলেও তাঁর মতো কিশোরদের জন্য এটি পকেট মানি হিসেবে যথেষ্ট। আর অবসরপ্রাপ্তদের জন্য এটি বাড়তি আয়ের সুযোগ।


প্রতিযোগিতা ও কৌশল

রানাররা দ্রুত রাইডারকে থামাতে প্রতিযোগিতা করেন। অনেকে একসঙ্গে ৬ থেকে ৭টি ব্যাগ নিয়ে উপরে ওঠেন, যাতে সময় বাঁচে।

এক অবসরপ্রাপ্ত নারী, মিসেস ঝোউ, আগে ক্যাফেটেরিয়ায় কাজ করতেন। অবসরের পর তিনি এই কাজ শুরু করেন। তাঁর মতে, “এটি শরীরচর্চা। বাড়িতে বসে থাকলে বরং শরীর খারাপ হয়।”

আরেকজন, শিয়াও জিউ এবং তাঁর স্ত্রী, এত বেশি অর্ডার পান যে তাঁরা নিজেদের অধীনে ডজনখানেক রানারকে কাজ দেন। প্রতি ব্যাগে তাঁরা নেন ১ ইউয়ান, আর বাকিটা পান রানাররা।


একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগে রূপান্তর

শিয়াও জানান, কয়েক বছর আগে এক ডেলিভারি রাইডার তাঁকে ভবনের জটিলতায় অভিযোগ করেন। তখন তিনি মজা করে ডেলিভারি করতে রাজি হন। পরবর্তীতে করোনা মহামারির সময় যখন ইলেকট্রনিকস মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনি পুরোপুরি ডেলিভারির কাজে যুক্ত হন। ধীরে ধীরে আরও অবসরপ্রাপ্ত ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এ কাজে যোগ দেন।

প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকলেও চাহিদা এত বেশি ছিল যে সবাই আয় করতে পারছিলেন। একদিনে শিয়াও ও তাঁর স্ত্রী প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ অর্ডার তাঁদের সহকারীদের মাধ্যমে পাঠান। তবে ভুল ডেলিভারির অভিযোগ এলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। ফলে মাঝে মাঝেই তর্ক-বিতর্ক হয়, যদিও পরিবেশ সাধারণত সৌহার্দ্যপূর্ণ থাকে।


শিশুদের প্রবেশ ও নিষেধাজ্ঞা

সাম্প্রতিককালে সামাজিক মাধ্যমে শিশুরা এই কাজে যুক্ত হওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলে স্থানীয় সরকার নিরাপত্তার কারণে শিশুদের ডেলিভারি নিষিদ্ধ করেছে।


উপসংহার

শেনঝেনের এই অনানুষ্ঠানিক “লাস্ট-মাইল রানার” ব্যবস্থা আসলে এক গিগ অর্থনীতির ভেতর আরেক গিগ অর্থনীতি। অবসরপ্রাপ্ত ও কিশোররা নগণ্য পারিশ্রমিকে হলেও এক বিশাল কর্মচাহিদা পূরণ করছে। তাঁদের জন্য এটি একদিকে আয়ের উৎস, অন্যদিকে ব্যস্ত সময় কাটানোর মাধ্যম। আর কর্মব্যস্ত শহরের হাজারো কর্মীর জন্য এরা হয়ে উঠেছেন দুপুরের খাবার পৌঁছে দেওয়ার নীরব নায়ক।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

অবসরপ্রাপ্তদের নতুন কর্মসংস্থান আকাশচুম্বী ভবনে খাবার পৌঁছে দেওয়া

০৫:৪৯:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

চীনের শেনঝেন শহরের বিখ্যাত আকাশচুম্বী ভবন এসইজি প্লাজায় খাবার পৌঁছে দেওয়ার শেষ ধাপের দায়িত্ব পালন করেন মূলত অবসরপ্রাপ্ত ও কিশোর-কিশোরীরা। ডেলিভারি রাইডাররা ভবনের ভিড় ও লিফটের দীর্ঘ লাইনে পড়ে সময় নষ্ট না করে তাঁদের হাতে ব্যাগ তুলে দেন। এর বিনিময়ে তাঁরা পান মাত্র ২ ইউয়ান (প্রায় ২৮ সেন্ট)।


লাঞ্চ টাইমের দৌড়ঝাঁপ

৭০ তলা বিশাল এই ভবনে দুপুরের ব্যস্ত সময়ে লিফটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় আধা ঘণ্টা পর্যন্ত। ফলে খাবার সরবরাহে রাইডারদের সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণেই গড়ে উঠেছে এই “লাস্ট-মাইল রানার” পেশা।

উদাহরণস্বরূপ, ১৬ বছর বয়সী লি লিনশিং দুপুরের আগেই ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন। রাইডার আসামাত্র তিনি হাত তুলে চিৎকার করেন: ‘ডেলিভারি স্ট্যান্ড-ইন!’ রাইডার ব্যাগ তাঁর হাতে দিয়ে কিউআর কোড স্ক্যান করেন, সঙ্গে সঙ্গেই অর্থ চলে আসে লিনশিংয়ের কাছে। এরপর লিফটের ভিড় পেরিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়ে আবার নিচে নেমে আসেন। এই কাজ চলে রাত ৮টা পর্যন্ত।


কেন করছে তাঁরা এই কাজ?

এসইজি প্লাজার সামনে প্রতিদিন ভিড় জমে থাকে ডজনখানেক রানারের। বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত, তবে গ্রীষ্মকালে স্কুল-ছুট কিশোররাও যোগ দেয়। কারও জন্য এটি আয়ের প্রয়োজন, আবার কেউ করেন ব্যায়াম বা সময় কাটানোর জন্য।

লিনশিং প্রথমে কৌতূহলবশত এসেছিলেন, পরে আয়ের জন্য কাজ শুরু করেন। তিনি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ ইউয়ান (প্রায় ১৪ ডলার) আয় করেন। শেনঝেনের বেসরকারি খাতের গড় মজুরি দৈনিক ৩৭ ডলার হলেও তাঁর মতো কিশোরদের জন্য এটি পকেট মানি হিসেবে যথেষ্ট। আর অবসরপ্রাপ্তদের জন্য এটি বাড়তি আয়ের সুযোগ।


প্রতিযোগিতা ও কৌশল

রানাররা দ্রুত রাইডারকে থামাতে প্রতিযোগিতা করেন। অনেকে একসঙ্গে ৬ থেকে ৭টি ব্যাগ নিয়ে উপরে ওঠেন, যাতে সময় বাঁচে।

এক অবসরপ্রাপ্ত নারী, মিসেস ঝোউ, আগে ক্যাফেটেরিয়ায় কাজ করতেন। অবসরের পর তিনি এই কাজ শুরু করেন। তাঁর মতে, “এটি শরীরচর্চা। বাড়িতে বসে থাকলে বরং শরীর খারাপ হয়।”

আরেকজন, শিয়াও জিউ এবং তাঁর স্ত্রী, এত বেশি অর্ডার পান যে তাঁরা নিজেদের অধীনে ডজনখানেক রানারকে কাজ দেন। প্রতি ব্যাগে তাঁরা নেন ১ ইউয়ান, আর বাকিটা পান রানাররা।


একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগে রূপান্তর

শিয়াও জানান, কয়েক বছর আগে এক ডেলিভারি রাইডার তাঁকে ভবনের জটিলতায় অভিযোগ করেন। তখন তিনি মজা করে ডেলিভারি করতে রাজি হন। পরবর্তীতে করোনা মহামারির সময় যখন ইলেকট্রনিকস মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনি পুরোপুরি ডেলিভারির কাজে যুক্ত হন। ধীরে ধীরে আরও অবসরপ্রাপ্ত ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এ কাজে যোগ দেন।

প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকলেও চাহিদা এত বেশি ছিল যে সবাই আয় করতে পারছিলেন। একদিনে শিয়াও ও তাঁর স্ত্রী প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ অর্ডার তাঁদের সহকারীদের মাধ্যমে পাঠান। তবে ভুল ডেলিভারির অভিযোগ এলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। ফলে মাঝে মাঝেই তর্ক-বিতর্ক হয়, যদিও পরিবেশ সাধারণত সৌহার্দ্যপূর্ণ থাকে।


শিশুদের প্রবেশ ও নিষেধাজ্ঞা

সাম্প্রতিককালে সামাজিক মাধ্যমে শিশুরা এই কাজে যুক্ত হওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলে স্থানীয় সরকার নিরাপত্তার কারণে শিশুদের ডেলিভারি নিষিদ্ধ করেছে।


উপসংহার

শেনঝেনের এই অনানুষ্ঠানিক “লাস্ট-মাইল রানার” ব্যবস্থা আসলে এক গিগ অর্থনীতির ভেতর আরেক গিগ অর্থনীতি। অবসরপ্রাপ্ত ও কিশোররা নগণ্য পারিশ্রমিকে হলেও এক বিশাল কর্মচাহিদা পূরণ করছে। তাঁদের জন্য এটি একদিকে আয়ের উৎস, অন্যদিকে ব্যস্ত সময় কাটানোর মাধ্যম। আর কর্মব্যস্ত শহরের হাজারো কর্মীর জন্য এরা হয়ে উঠেছেন দুপুরের খাবার পৌঁছে দেওয়ার নীরব নায়ক।