নৌবাহিনীর অভিযানে শেষ নৌকা আটক
শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার অবরুদ্ধ উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করা মানবিক সহায়তা বহরের শেষ নৌকা আটক করেছে। এর আগের দিন আটক হয়েছিল প্রায় ৪৫০ জন কর্মীসহ একাধিক নৌযান, যেখানে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন।
গ্লোবাল ফ্লোটিলা জানায়, “মারিনেট” নামের নৌযানটি গাজা থেকে প্রায় ৪২.৫ নটিক্যাল মাইল (৭৯ কিলোমিটার) দূরে আটকানো হয়। ইসরায়েলি নৌবাহিনী নৌযানটি দখলে নিয়ে সেটিকে আশদোদ বন্দরে নিয়ে যায়।
সংগঠনের দাবি, এ পর্যন্ত তাদের সবগুলো ৪২টি নৌকা ইসরায়েল বেআইনিভাবে আটক করেছে। প্রতিটি নৌকায় মানবিক সহায়তা, স্বেচ্ছাসেবক এবং গাজার অবরোধ ভাঙার অঙ্গীকার ছিল।
সরাসরি সম্প্রচারে যুদ্ধজাহাজের দেখা
“মারিনেট” থেকে লাইভ ক্যামেরায় সম্প্রচারে দেখা গিয়েছিল, কেউ একটি কাগজ ধরে রেখেছে, যাতে লেখা— “আমরা একটি জাহাজ দেখছি! এটি একটি যুদ্ধজাহাজ।” এরপর ইসরায়েলি সৈন্যরা নৌকায় উঠে যাত্রীদের হাত উঁচু করতে নির্দেশ দেয়।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি মন্তব্য না করলেও আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, শেষ নৌকাটিও গাজার অবরোধ ভাঙতে পারবে না। তারা প্রস্তাব দিয়েছিল— সহায়তা সামগ্রী ইসরায়েল গ্রহণ করে গাজায় পাঠাবে।
বহিষ্কার শুরু, নিরাপত্তার আশ্বাস
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানায়, ইতালির চার নাগরিককে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকিদেরও দ্রুত বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “সব অংশগ্রহণকারী নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন।”
বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ ও সংহতি
ফ্লোটিলা আটক হওয়ার প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন শহরসহ করাচি, বুয়েনোস আইরেস ও মেক্সিকো সিটিতেও বিক্ষোভ হয়েছে। শুক্রবার ইতালিতে লক্ষাধিক মানুষ ধর্মঘট পালন করে ফ্লোটিলার প্রতি সংহতি জানায়।
‘সন্ত্রাসী’ মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা
বৃহস্পতিবার রাতে আশদোদে গিয়ে ইসরায়েলের অতি-দক্ষিণপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির আটক কর্মীদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের “সন্ত্রাসী” বলে অভিহিত করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি হিব্রু ভাষায় বলেন— “এরা ফ্লোটিলার সন্ত্রাসী।” কর্মীদের মধ্যে অনেকে স্লোগান দেন— “ফ্রি প্যালেস্টাইন।”
সাইপ্রাসে থামানো আরেকটি নৌযান
সাইপ্রাস সরকার জানায়, ২১ জন বিদেশি নাগরিক নিয়ে ফ্লোটিলার একটি নৌযান লারনাকায় জ্বালানি ও মানবিক কারণে থামার অনুমতি পেয়েছে। তবে এটি ইসরায়েলি নৌবাহিনীর আটক করা নৌযানগুলোর মধ্যে ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।
যুদ্ধ, সমালোচনা ও আন্তর্জাতিক আদালত
গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল ব্যাপক বৈশ্বিক সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগে বিচারাধীন। তবে ইসরায়েল দাবি করে, তারা আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করছে।
প্যালেস্টাইনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ইসরায়েলি অভিযানে ইতিমধ্যে ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যুদ্ধের সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর, যেখানে প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শান্তি প্রস্তাব
এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে হামাসকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি অস্থায়ীভাবে গাজা শাসন তদারকি করবেন। হামাসকে কয়েকদিন সময় দেওয়া হয়েছে। বাইডেন সতর্ক করেছেন, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল অবরোধ চালিয়ে যাবে।