নদীর প্রবাহ নিয়ে বিভ্রান্তি
পূর্ব দিকের ফুলে ওঠা নদীগুলো পাঞ্জাব হয়ে সিন্ধুর দিকে প্রবাহিত হতে থাকায় গুড্ডু ব্যারাজে কতটা পানি প্রবেশ করছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা প্রচারিত হওয়ায় বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে।
গত মাসে নদীগুলো উপচে পড়তে শুরু করলে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) অনুমান করেছিল গুড্ডুতে ১৩ লাখ কিউসেক পানি পৌঁছাবে। পরে খদিরাবাদ ব্যারাজ দিয়ে ১০ লাখ কিউসেকের বেশি পানি প্রবাহিত হওয়ার পর এ ধারণা দেওয়া হয়েছিল।
গুড্ডুতে ৩০ জুলাই ৩ লাখ ৯০ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হয়ে মাঝারি বন্যা দেখা দেয়। ২৩ আগস্ট দুপুরে তা ৫ লাখ কিউসেক অতিক্রম করে। পরদিন দুপুরে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ১০ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হয়।
এদিকে চেনাব নদীতে ‘সুপার ফ্লাড’ এবং পাঞ্জাবে একাধিক বাঁধ ভাঙার খবর সিন্ধুতে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। শুরুতে অনুমান করা হয়েছিল সিন্ধুর দিকে মোট ৯ লাখ কিউসেক পানি প্রবাহিত হবে। পরে হিসাব কমিয়ে বলা হয় গুড্ডুতে সর্বোচ্চ ৬.৫ থেকে ৭ লাখ কিউসেক পানি আসবে।
সিন্ধুর অভিযোগ: পাঞ্জাবের তথ্য বিভ্রান্তিকর
৭ সেপ্টেম্বর সিন্ধুর সেচ কর্মকর্তারা পাঞ্জনদ এলাকায় গিয়ে পানিপ্রবাহের তথ্য যাচাই করেন। তারা দাবি করেন, পাঞ্জাবের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির অমিল রয়েছে।
রহিম ইয়ার খানের চাচরান ব্রিজে স্থাপিত গেজ থেকে পাওয়া তথ্য সিন্ধুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানকার হিসাব গুড্ডুর আগে সিন্ধুকে প্রবাহ সম্পর্কে ধারণা দেয়। সিন্ধুর কর্মকর্তারা ১১.৩ ফুট উচ্চতা মাপেন, অথচ পাঞ্জাব দেখায় ১১.৭ ফুট। বিষয়টি জানানো হলে পাঞ্জাব পরে সংশোধন করে।
ফেডারেল সরকারের এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, ব্যারাজগুলোতে ‘রেটিং টেবিল’ হালনাগাদ না থাকায় পানি প্রবাহ সঠিকভাবে মাপা যায়নি। বিশেষ করে পাঞ্জনদ, ইসলাম ও সিধনাই ব্যারাজে ৬ লাখ কিউসেকের বেশি প্রবাহের তথ্য বহু বছর মাপা হয়নি। এতে কিছু ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।
আরেক কর্মকর্তা জানান, পাঞ্জনদে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র (SCADA) ও হাতে নেওয়া তথ্যের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ হাজার কিউসেকের পার্থক্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রবাহ ৬ লাখ কিউসেক ছাড়ালে এ পার্থক্য ঠিক হয়ে যায়।
পাঞ্জাবের দাবি: সব তথ্য সঠিক
পাঞ্জাবের সেচ বিভাগ সিন্ধুর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়াল উভয় ব্যবস্থাই সঠিকভাবে কাজ করছে।
পাঞ্জাব সেচ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রযুক্তি) খুররম আমিন বলেন, “যদি সিন্ধুর কাছে প্রমাণ থাকে তবে কেন তারা এখনো লিখিতভাবে জানায়নি? কেবল মুখে বলার চেয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করা উচিত।”
তিনি আরও জানান, সিন্ধুর মন্ত্রী ও সচিবসহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি পাঞ্জনদে গিয়ে স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়াল উভয় ব্যবস্থাই পরীক্ষা করেছেন। উচ্চ বন্যার সময় স্বয়ংক্রিয় হিসাব কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তাই ম্যানুয়াল তথ্যই বেশি নির্ভরযোগ্য ধরা হয়।
বাহাওয়ালপুর সেচ অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফয়সাল মুশতাকও একই দাবি করেন। তিনি বলেন, “পাঞ্জনদ থেকে চাচরান শরীফ, তারপর গুড্ডু পর্যন্ত প্রবাহের হিসাব মিলিয়ে দেখা খুব সহজ। যদি বড় কোনো পার্থক্য থাকে তবে দায় আমাদের। না হলে সমস্যা সিন্ধুর।”
বন্যার পানির প্রবাহ নিয়ে সিন্ধু ও পাঞ্জাবের মধ্যে অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে। সিন্ধু বলছে তথ্য ভিন্ন ও বিভ্রান্তিকর, পাঞ্জাব দাবি করছে তাদের ব্যবস্থা সঠিক। একদিকে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, অন্যদিকে প্রাদেশিক অবিশ্বাস—সব মিলিয়ে দুই প্রদেশের সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠছে।