ইউরোপীয় হাইড্রোজেন সপ্তাহে চীনের সাফল্যের স্বীকৃতি
ব্রাসেলসে চলমান ইউরোপীয় হাইড্রোজেন সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা হাইড্রোজেন খাতে চীনের অগ্রগতিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, সুসংগঠিত পরিকল্পনা ও পরিপূর্ণ শিল্পব্যবস্থার কারণে চীন বৈশ্বিক নেতৃত্বে উঠে এসেছে।
ইভেন্টটিতে নীতিনির্ধারণী বৈঠক, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ফোরাম ও উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করা হয়, যেখানে হাইড্রোজেন শিল্পের উন্নয়ন এবং নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হয়।
যাত্রীবাহী যানবাহনে ধাপে ধাপে হাইড্রোজেন ব্যবহার
এয়ার লিকুইড কোম্পানির গ্লোবাল হাইড্রোজেন এনার্জি ব্যবসার সহ-সভাপতি এরউইন পেনফরনিস জানান, চীন ধাপে ধাপে হাইড্রোজেন প্রযুক্তি প্রয়োগের কৌশল নিয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা করা, প্রতিযোগিতা তৈরি করা এবং সর্বোত্তম সমাধান বের করা সম্ভব হয়েছে।
বিনিয়োগ ও উৎপাদনে বৈশ্বিক শীর্ষে চীন
হাইড্রোজেন ইউরোপের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে হাইড্রোজেনে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশ চীন। এশিয়া তো বটেই, বিশ্বব্যাপী হাইড্রোজেন উৎপাদনেও দেশটি শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
চীনের প্রকাশিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২২ সাল নাগাদ বার্ষিক হাইড্রোজেন উৎপাদন পৌঁছায় প্রায় ৩৩ মিলিয়ন টনে।
মানসম্মত প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
ইজিপ্ট হাইড্রোজেনের সিইও খালেদ নাজিব বলেন, হাইড্রোজেন উৎপাদনের মূল যন্ত্র “ইলেক্ট্রোলাইজার”-এ চীন এখন বিশ্বমানের প্রযুক্তি তৈরি করছে। এর মান ইউরোপীয় যন্ত্রপাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম, তবে দাম অনেক বেশি সাশ্রয়ী। এজন্য মিশর চীনা নির্মাতাদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করছে।
তিনি আরও জানান, চীনে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পক্ষেত্রের মধ্যে সহজ সংযোগ থাকায় দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সম্ভব হচ্ছে।
শিল্পভিত্তিক “ভ্যালি” মডেল
নেদারল্যান্ডসের ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি ক্লিয়ারের ব্যবস্থাপনা অংশীদার উইলেম-জেরুন স্টিভেন্স বলেন, চীন “ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভ্যালি” মডেলে কাজ করছে। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট শহর বা অঞ্চলে পুরো সরবরাহ শৃঙ্খলা সক্রিয় থাকে, খরচ কমে যায় এবং গবেষণা ও উৎপাদন কার্যক্রম আরও কার্যকর হয়।
২০৩০ সালের লক্ষ্য: নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে হাইড্রোজেন
চীনের পরিকল্পনা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদনকে আরও বিস্তৃত করা এবং একটি সুসংগঠিত শিল্প কাঠামো গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানো ও জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশটি এগিয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের আহ্বান
জনসন ম্যাথের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউজিন ম্যাককেনা ইউরোপীয়দের উদ্দেশে বলেন, চীন সফর করা উচিত। কারণ সেখানে বাস্তবে দেখা যাবে কীভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন একসঙ্গে কার্যকরভাবে চলছে।
তিনি বলেন, “আমি সত্যিই সবাইকে চীন ভ্রমণের পরামর্শ দেব। এটি যেন কৌশল ও বাস্তবায়নের এক পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র।”