হামাসের সামনে বড় চাপ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন গাজা পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য হামাসকে চাপ দিচ্ছে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারা। তাদের মতে, যুদ্ধ বন্ধ করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যদিও প্রস্তাবের কিছু অংশে মতভেদ রয়ে গেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরের হামাস হামলার পর থেকে প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান গাজাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। আরব নেতাদের মতে, ইসরায়েলের এই অভিযান কেবল গাজাকেই নয়, বরং গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
প্রস্তাবের মূল দিক
ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘোষিত ২০ দফা প্রস্তাবের কয়েকটি অংশে আগে হওয়া আলোচনার সঙ্গে অমিল থাকলেও, এতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে:
- যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি
- গাজার জনগণকে তাদের ভূখণ্ডে থাকার নিশ্চয়তা
- গাজা পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
- ইসরায়েলের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার
এছাড়া আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও সহায়তায় একটি স্থিতিশীলতা বাহিনী (ISF) গঠন করে ফিলিস্তিনি পুলিশকে সহযোগিতা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রের অবস্থান
সৌদি আরব, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, কাতার ও মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইতোমধ্যেই প্রস্তাবটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি গাজার জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনাকে রোধ করেছে, যা আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি বড় সাফল্য।
হামাসের জন্য তাই এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা কঠিন হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে যখন মিসর, কাতার ও তুরস্কের মতো ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলো এটি গ্রহণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যদিও প্রস্তাবে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের দাবি জানানো হয়েছে, তবে যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সম্মত হবে তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ও নিরাপদ বহির্গমনের নিশ্চয়তাও রাখা হয়েছে।
কাতারের ভূমিকা ও হামাসের প্রতিক্রিয়া
কাতার ও মিসর সোমবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাব হামাসের হাতে তুলে দিয়েছে। মঙ্গলবার দোহায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে হামাস নেতারা জানিয়েছেন, তারা পরিকল্পনাটি খতিয়ে দেখছে এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত অবস্থান জানাবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, হামাসের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য “তিন থেকে চার দিন” সময় আছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি জানিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ করা এবং রক্তপাত বন্ধ করাই মূল লক্ষ্য, তবে কিছু বিষয় আরও স্পষ্টীকরণ ও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
অস্পষ্ট প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ
প্রস্তাবের কিছু অংশ এখনো অস্পষ্ট, যেমন:
- আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর দায়িত্ব ও কার্যকাল
- ইসরায়েলের সামরিক প্রত্যাহারের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা
- কবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট সংস্কার করা হয়েছে বলে গণ্য করা হবে
- ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনিশ্চয়তা
তবুও অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, যে কোনো পরিকল্পনা যা অন্তত যুদ্ধ বন্ধ করবে, তা নেতানিয়াহুর ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে অনেক ভালো সমাধান।
আঞ্চলিক কূটনীতি ও স্বার্থ
গালফের তেলসমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলো দ্রুত সংঘাত থেকে বেরিয়ে এসে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিনিয়োগে মনোযোগ দিতে চায়। একই সঙ্গে, তারা মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পরিকল্পনায় সমর্থন দিলে ওয়াশিংটনে নিজেদের স্বার্থ আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রস্তাব তৈরিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানও এ পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন থেকে কূটনৈতিক ও আঞ্চলিক সুবিধা নিতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজার জন্য প্রস্তাবিত এ শান্তি পরিকল্পনা এখন হামাসের হাতে। আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ বন্ধের জন্য একসাথে চাপ সৃষ্টি করছে। তবে হামাস কীভাবে নিরস্ত্রীকরণ ও শর্তগুলো মেনে নেবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।