১১:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫
প্রিন্স উইলিয়াম ঘোষণা দিলেন: রাজা হলে রাজতন্ত্রে আসবে বড় পরিবর্তন ভারত-রাশিয়া বাণিজ্যে নতুন অধ্যায় — কৃষিপণ্য ও ওষুধে বাড়ছে রপ্তানি-আমদানির পরিকল্পনা মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৪৯) যুক্তরাজ্যে ইয়ম কিপুর হামলায় কাঁপন: নিহত ২, দেশজুড়ে ইহুদি উপাসনালয়ে কঠোর নিরাপত্তা বিন্দি আর্ভিনের হৃদস্পন্দন আমাদের সুন্দর গ্রহকে রক্ষার জন্য ইসলামাবাদ প্রেসক্লাবে পুলিশের অভিযান সিন্ধুতে বাঁধ ভাঙা নয়, ভৌগোলিক বাস্তবতাই পাকিস্তানের ভরসা  পাকিস্তানে বন্যা ও পশুর জন্যে জীবন মরণ লড়াই বন্য হাতির তাণ্ডব — থাইল্যান্ডের মুদি দোকানে ঢুকে নাশতা লুটপাট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-২৬)

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় চাবাহার প্রকল্প: ভারতের সামনে নতুন সংকট

ভারতের জন্য বড় ধাক্কা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চাবাহার বন্দর এখন অনিশ্চয়তার মুখে। এই প্রকল্পটি ভারতের জন্য আফগানিস্তান ও জ্বালানিসম্পদে সমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ায় পৌঁছানোর একমাত্র বিকল্প পথ ছিল, যা পাকিস্তানকে এড়িয়ে যেতে সহায়তা করত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিদ্ধান্তে ভারতের আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা বড় ধাক্কা খেল।


ছাড় প্রত্যাহার ও নতুন পরিস্থিতি

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চাবাহার বন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনার অনুমতি দিয়েছিল। সেই ছাড়ের ভিত্তিতে ভারত ও ইরান গত বছর ১০ বছরের চুক্তি করে, যেখানে ভারত প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই ছাড় প্রত্যাহার করেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মতে, এটি ট্রাম্পের “সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ নীতি”-এর অংশ, যার লক্ষ্য ইরানকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করা। আগে ছাড়ের যুক্তি ছিল আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নকে সহায়তা করা। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে—২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগানিস্তানের বাস্তবতা ভিন্ন।


ভারত-মার্কিন সম্পর্কের টানাপোড়েন

ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বর্তমানে চাপের মুখে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনার ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, নতুন এইচ-১বি ভিসার ফিতে যুক্ত করেছে ১ লাখ ডলার এবং অন্যান্য পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্ক বসিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চাবাহার ছাড় প্রত্যাহারও এই বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগ কৌশলের অংশ, যাতে ভারত কৃষি ও সংবেদনশীল খাতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে নেয়।


চীনের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা

ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে চীন। ভারতের মতো দেশগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ মেনে চললেও চীন তুলনামূলকভাবে ছাড় পাচ্ছে।

ভারত ইতিমধ্যে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে ইরানের সস্তা তেল কেনার সুযোগ চীন এককভাবে কাজে লাগায়। বিশ্লেষক ব্রহ্ম চেলানির মতে, ট্রাম্পের “সর্বোচ্চ চাপ” নীতি আসলে চীনের জন্য সর্বোচ্চ সুফল বয়ে এনেছে, আর ভারতকে দিয়েছে ক্ষতির বোঝা।


কৌশলগত প্রতিযোগিতা: গ্বাদর বনাম চাবাহার

চাবাহার বন্দর শুধু বাণিজ্য নয়, কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে তৈরি গ্বাদর বন্দরের মোকাবিলায় ভারত চাবাহারকে প্রতিরোধক হিসেবে দেখছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞায় ভারতের পরিকল্পনা বিলম্বিত হচ্ছে, যা অঞ্চলে চীনের প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলবে।


ভারতের সতর্ক প্রতিক্রিয়া

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বিষয়টি সতর্কভাবে পর্যালোচনা করছে। এখনই তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাই তাদের অগ্রাধিকার।

বর্তমানে ভারতের মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের মতো, তাই তাৎক্ষণিক ক্ষতি খুব বেশি হবে না। তবে দীর্ঘমেয়াদে পাকিস্তানকে এড়িয়ে সংযোগ স্থাপন এবং আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখার ভারতীয় স্বপ্নে এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।


চাবাহার বন্দর ভারতের জন্য ছিল আঞ্চলিক কৌশল ও বাণিজ্যের প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সেই কৌশলকে থামিয়ে দিয়েছে। ভারত এখনো আশা করছে, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি পাল্টাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবতা বুঝে নতুনভাবে আলোচনায় আসবে। তবে আপাতত এই স্থবিরতা চীনের জন্য কৌশলগত সুবিধা তৈরি করছে, আর ভারতকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রিন্স উইলিয়াম ঘোষণা দিলেন: রাজা হলে রাজতন্ত্রে আসবে বড় পরিবর্তন

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় চাবাহার প্রকল্প: ভারতের সামনে নতুন সংকট

০৮:৫৪:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

ভারতের জন্য বড় ধাক্কা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চাবাহার বন্দর এখন অনিশ্চয়তার মুখে। এই প্রকল্পটি ভারতের জন্য আফগানিস্তান ও জ্বালানিসম্পদে সমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ায় পৌঁছানোর একমাত্র বিকল্প পথ ছিল, যা পাকিস্তানকে এড়িয়ে যেতে সহায়তা করত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিদ্ধান্তে ভারতের আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা বড় ধাক্কা খেল।


ছাড় প্রত্যাহার ও নতুন পরিস্থিতি

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চাবাহার বন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনার অনুমতি দিয়েছিল। সেই ছাড়ের ভিত্তিতে ভারত ও ইরান গত বছর ১০ বছরের চুক্তি করে, যেখানে ভারত প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই ছাড় প্রত্যাহার করেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মতে, এটি ট্রাম্পের “সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ নীতি”-এর অংশ, যার লক্ষ্য ইরানকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করা। আগে ছাড়ের যুক্তি ছিল আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নকে সহায়তা করা। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে—২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগানিস্তানের বাস্তবতা ভিন্ন।


ভারত-মার্কিন সম্পর্কের টানাপোড়েন

ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বর্তমানে চাপের মুখে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনার ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, নতুন এইচ-১বি ভিসার ফিতে যুক্ত করেছে ১ লাখ ডলার এবং অন্যান্য পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্ক বসিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চাবাহার ছাড় প্রত্যাহারও এই বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগ কৌশলের অংশ, যাতে ভারত কৃষি ও সংবেদনশীল খাতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে নেয়।


চীনের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা

ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে চীন। ভারতের মতো দেশগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ মেনে চললেও চীন তুলনামূলকভাবে ছাড় পাচ্ছে।

ভারত ইতিমধ্যে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে ইরানের সস্তা তেল কেনার সুযোগ চীন এককভাবে কাজে লাগায়। বিশ্লেষক ব্রহ্ম চেলানির মতে, ট্রাম্পের “সর্বোচ্চ চাপ” নীতি আসলে চীনের জন্য সর্বোচ্চ সুফল বয়ে এনেছে, আর ভারতকে দিয়েছে ক্ষতির বোঝা।


কৌশলগত প্রতিযোগিতা: গ্বাদর বনাম চাবাহার

চাবাহার বন্দর শুধু বাণিজ্য নয়, কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে তৈরি গ্বাদর বন্দরের মোকাবিলায় ভারত চাবাহারকে প্রতিরোধক হিসেবে দেখছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞায় ভারতের পরিকল্পনা বিলম্বিত হচ্ছে, যা অঞ্চলে চীনের প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলবে।


ভারতের সতর্ক প্রতিক্রিয়া

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বিষয়টি সতর্কভাবে পর্যালোচনা করছে। এখনই তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাই তাদের অগ্রাধিকার।

বর্তমানে ভারতের মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের মতো, তাই তাৎক্ষণিক ক্ষতি খুব বেশি হবে না। তবে দীর্ঘমেয়াদে পাকিস্তানকে এড়িয়ে সংযোগ স্থাপন এবং আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখার ভারতীয় স্বপ্নে এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।


চাবাহার বন্দর ভারতের জন্য ছিল আঞ্চলিক কৌশল ও বাণিজ্যের প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সেই কৌশলকে থামিয়ে দিয়েছে। ভারত এখনো আশা করছে, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি পাল্টাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবতা বুঝে নতুনভাবে আলোচনায় আসবে। তবে আপাতত এই স্থবিরতা চীনের জন্য কৌশলগত সুবিধা তৈরি করছে, আর ভারতকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য।