পাঞ্জাবের কৌশল বনাম সিন্ধুর ভৌগোলিক বাস্তবতা
পাঞ্জাবের মতো নদীর পানি সরাতে সিন্ধুতে বাঁধ ভাঙা সম্ভব নয়, এমন ঘোষণা দিয়েছে সিন্ধু প্রাদেশিক সরকার। পাঞ্জাবে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রধান শহরগুলো বাঁচাতে একাধিক বাঁধ কেটে পানি সরানো হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সিন্ধুও কি একই কৌশল নেবে?
সিন্ধুর সেচমন্ত্রী জাম খান শোরো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এটি তাদের জন্য কোনো বিকল্প নয়। তিনি বলেন, সিন্ধুর ভৌগোলিক গঠন সম্পূর্ণ আলাদা। ইন্দাস নদীর তুলনায় আশেপাশের জমির ঢাল নিচু, ফলে বাঁধ ভাঙলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
নদীর প্রবাহ ও সম্ভাব্য ঝুঁকি
রাভি, চেনাব ও শতদ্রু নদী পাঞ্জনদ হয়ে ইন্দাসে মিশে সিন্ধুতে প্রবেশ করে। এ মৌসুমে জুলাই-আগস্টে গুড্ডু ও সুক্কুর ব্যারাজ দিয়ে মধ্যম থেকে উচ্চ মাত্রার বন্যা প্রবাহিত হয়েছে। এখনো গুড্ডুতে কত পানি পৌঁছাবে তা অনিশ্চিত, কারণ প্রবাহের ধারা জটিল।
চেনাব নদী আগস্টের শেষ সপ্তাহে ১০ লাখ কিউসেকের বেশি পানি ছেড়েছিল। এই প্রবাহসহ রাভি ও শতদ্রুর পানি মিলিত হয়ে গুড্ডুতে নামবে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) জানিয়েছে, গুড্ডু ব্যারাজে ১২ লাখ কিউসেক ধারণক্ষমতার বিপরীতে ১৩ লাখ কিউসেক পানি পৌঁছাতে পারে।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য: কেন ভাঙা সম্ভব নয়
সিন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলতাফ সিয়াল ব্যাখ্যা করেছেন, পাঞ্জাব ও সিন্ধুর জমির ঢাল ভিন্ন। পাঞ্জাবে বাঁধ ভাঙলে পানি সহজে সরে যায়, কিন্তু সিন্ধুতে বাঁধ ভাঙলে পানি জমে ভয়াবহ প্লাবন ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, ডান তীরের বাঁধ ভাঙলে পানি পশ্চিম দিকে গিয়ে বড় নিম্নাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। আর বাম তীরে বাঁধ ভাঙলে প্রথমেই সুক্কুর ব্যারাজের নারো খাল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পরে তা আরও নিচে নেমে আসবে।
২০১০ সালের সুপার ফ্লাডে গুড্ডুর নিচে তোরি বাঁধ ভেঙে গেলে সাতটি জেলার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। পানি শেষ পর্যন্ত মানচার হ্রদে গিয়ে জমা হয়। আবার ২০২২ সালে কীরথার পর্বতমালায় ভারী বর্ষণে ডান তীরের কয়েক জেলা তলিয়ে যায়, পরে মানচার হ্রদ ভেঙে পানি ইন্দাসে ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল।
অতীতের শিক্ষা
২০১০ সালে গুড্ডু ব্যারাজের প্রকৌশলী ও সেচ সচিবকে তোরি বাঁধ ভাঙনের জন্য দায়ী করা হয়েছিল। তদন্তে দেখা গিয়েছিল, প্রায় ১.৪৭ মিলিয়ন একর ফুট পানি ওই বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসে। এর ফলে ১৫০ কিমি দীর্ঘ বেগারি সেচ খালের ৭০% ধ্বংস হয়েছিল।
তৎকালীন দুর্যোগের অভিজ্ঞতা থেকেই এবার সিন্ধু সরকার বাঁধ ভাঙাকে বিকল্প হিসেবে সম্পূর্ণ বাতিল করেছে।
সরকারের প্রস্তুতি
সেচ সচিব জারিফ খেরো জানিয়েছেন, এবার ২০১৪ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তবে সরকার ৯ লাখ কিউসেক প্রবাহকেও সুপার ফ্লাড হিসেবে ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি বলেন, পাঞ্জনদ থেকে গুড্ডুতে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রবাহে অনেক হ্রাস ঘটেছিল, সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
সেচমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেছেন, “মানুষকে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সিন্ধুতে বাঁধ ভাঙা কোনো বিকল্প নয়। সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত।”
পাঞ্জাবে শহর রক্ষায় বাঁধ ভাঙা সম্ভব হলেও সিন্ধুর ভূপ্রকৃতির কারণে এটি ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতা, বিশেষত ২০১০ সালের সুপার ফ্লাড, সিন্ধুকে এবার আরও সতর্ক করেছে। তাই সরকার এখন বিকল্প পদক্ষেপ নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে, তবে বাঁধ ভাঙা তাদের তালিকায় নেই।