বিশ্বজুড়ে মাচার জনপ্রিয়তা
মাচা আজ বিশ্বব্যাপী এক বড় প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। লাটে, আইসক্রিম থেকে শুরু করে চিজকেক—সব জায়গায়ই মাচার ছোঁয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ক্যাফেগুলোতে এই সবুজ চায়ের দাপট ক্রমেই বাড়ছে।
গত এক বছরে বিদেশে মাচা কেনা ও খাওয়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও উৎপাদকদের বয়সজনিত কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাহিদা মেটাতে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
চা-অনুষ্ঠান: সংস্কৃতির আসল মর্ম
অনেকে মনে করেন, বাণিজ্যিক প্রবণতার কারণে জাপানি চা-অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক মান হারিয়ে যেতে পারে। তবে চা-সংস্কৃতির অভিভাবকরা এটিকে হুমকি নয়, বরং এক বিরল সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
কিয়োটোর কামেলিয়া টি সেরিমনির প্রতিষ্ঠাতা আতসুকো মরি ২০২৪ সালে একাই ৩০ হাজারের বেশি অতিথি পেয়েছেন, যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। তিনি মনে করেন, মাচা হয়তো অন্য ট্রেন্ডের মতো ক্ষণস্থায়ী হবে ভেবেছিলেন, কিন্তু এখন দেখছেন এটি স্থায়ীভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
টোকিওভিত্তিক চা-সালন চেইন ‘চাজেন’-এর প্রতিষ্ঠাতা রিয়ে তাকেদা বলেন, “হ্যাঁ, কিছু উদ্বেগ আছে। কিন্তু যদি এই প্রবণতা মানুষের মধ্যে জাপানি সংস্কৃতি ও চা-অনুষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়, তবে এটিকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের লক্ষ্য মানুষকে ট্রেন্ডের বাইরে নিয়ে গিয়ে চায়ের আসল আত্মার সঙ্গে যুক্ত করা।”
সাপ্পোরোর ‘ওয়া নো কোকোরো’-এর মালিক শিহোরি সুজুকিও মনে করেন, অতিরিক্ত বাণিজ্যিকীকরণ মাচার মান কমিয়ে দিতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রবণতা যদি মানুষকে চা-অনুষ্ঠানের দিকে নিয়ে যায়, তবে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, যখন চা-অভ্যাসকারীর সংখ্যা দ্রুত কমছে, তখন উৎপাদকদের জন্য স্থিতিশীল আয় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।
ব্যবসা বনাম সংস্কৃতি: ভারসাম্যের খোঁজ
চা-অভ্যাসকারীরা বিশ্বাস করেন, চা-অনুষ্ঠান ও মাচা লাটে বা মিষ্টির মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য একেবারেই আলাদা। তাই তারা বাণিজ্যিক ট্রেন্ড নিয়ে বিচলিত নন।
তবুও বড় প্রশ্ন হলো—কীভাবে বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা আগ্রহকে কাজে লাগানো যায়, যাতে আসল চা-সংস্কৃতির মর্যাদা হারিয়ে না যায়। তাকেদা বলেন, তার টিম সচেতনভাবে চেষ্টা করছে চায়ের গভীর তাৎপর্য—“একটি বাটিতে হৃদয় ঢেলে দেওয়া”—বিশ্বের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে।
সুজুকি বলেন, অর্থনৈতিক বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক মূল্য ধরে রাখা জরুরি।
বিদেশি অতিথিদের আগ্রহে পরিবর্তন
আগে অনেক বিদেশি কেবল নতুনত্বের জন্য চা-অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। কিন্তু এখন, যেহেতু মাচা সর্বত্র পাওয়া যায়, যারা অনুষ্ঠানে আসেন তারা মূলত এর গভীরতর দিক—মনোসংযোগ, প্রশান্তি ও বর্তমানকে উপলব্ধি—অনুভব করতে আসেন।
তাকেদা বলেন, এখন অনেকেই অনুষ্ঠানে এসে জানান: “আমি মাচা সম্পর্কে জানতে চাই” বা “আমি এটি সঠিকভাবে অভিজ্ঞতা করতে চাই।”
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যটন ওঠানামা করতে পারে, তবে সুস্থতা ও দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে মাচা দীর্ঘস্থায়ী হবে।
তবে সরবরাহ সংকট বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাকেদা জানান, হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন চা-পাতা সংগ্রহ করা আগের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক দোকান সময়মতো পাতা দিতে পারছে না।
সুজুকি জানান, আগে সহজেই যেসব দোকান থেকে চা-পাতা পাওয়া যেত, সেগুলো এখন খালি। তাই নতুন উৎস খুঁজে বের করতে হচ্ছে। দাম বাড়ায় খরচও বেড়েছে। এর ফলে ক্লাস পরিচালনায়ও চাপ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও উৎপাদকদের বয়সজনিত সমস্যা অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। তাই মাচা বুম একমাত্র কারণ নয়। এগুলো কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ, যা সহজে মিটবে না।
বিশ্বজুড়ে প্রসারের পরিকল্পনা
তবুও সবাই আশাবাদী। তাকেদা চান, তার প্রতিষ্ঠান চাজেন বিদেশেও শাখা খোলুক, যাতে সেখানকার মানুষ তাদের দেশেই চা-অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।
সুজুকি বড় আকারের স্থাপনা চান, যেখানে তার শিক্ষার্থীরা পর্যটকদের সামনে পরিবেশন করতে পারবে। আর মরি স্বপ্ন দেখেন লন্ডন, নিউইয়র্ক বা প্যারিসে চা-ঘর খোলার।
সবাই একমত—মাচার বিশ্বব্যাপী উত্থান কোনো হুমকি নয়, বরং সেতুবন্ধন। এটি মানুষকে জাপানি চা-সংস্কৃতির গভীর মর্মে পৌঁছে দেওয়ার এক অনন্য সুযোগ।