ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা
২০১৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে, এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মধ্যপন্থী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তার প্রতিশ্রুতি ছিল যে তিনি ডান-বাম উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলবেন। ম্যাক্রোঁ নিজেকে একটি নতুন রাজনীতির প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যেখানে বাম ও ডানপন্থী দলগুলোকে একত্রিত করার মাধ্যমে নতুন পথের সন্ধান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ, ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় প্রকল্প হুমকির মুখে।
ফ্রান্সের রাজনৈতিক পরিস্থিতি
ম্যাক্রোঁ গত ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। একটিতে তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ঘোষণা করেন, অন্যটিতে তিনি বহুপাক্ষিকতার পক্ষে বক্তব্য দেন। তবে বিদেশে তার কার্যকলাপ সত্ত্বেও, ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, আরও খারাপ হচ্ছে। সেবাস্টিয়েন লেকর্নু, ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটি কার্যকর সরকার গঠনের চেষ্টা করছেন, কিন্তু এটি গত দুই বছরে দেশটির পঞ্চম সরকার হতে যাচ্ছে। ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিপর্যস্ত সংসদ এবং আর্থিক সংকট ইউরোপের কেন্দ্রের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপন্থার পতন
২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ম্যাক্রোঁ “একমাত্র কেন্দ্রই উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে পারে” এমন বার্তা দিয়ে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ২০১৭ সালে মেরিন লে পেনের জাতীয়তাবাদী দল ছিল মাত্র ৮টি আসনে, যা এখন বেড়ে ১২৩টি আসনে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে, জন-লুক মেলেনচনের বামপন্থী দলও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ম্যাক্রোঁর নিজস্ব দলের আসন সংখ্যা বর্তমানে কেবল ১৫%।
অস্থিরতা ও ভুল হিসাব
ফ্রান্সের মধ্যপন্থী দলের পতনের পেছনে রয়েছে একাধিক ভুল হিসাব। ২০২২ সালে ম্যাক্রোঁ আবারও নির্বাচিত হন, কিন্তু তিনি যথাযথভাবে সংসদীয় নির্বাচন পরিচালনা করেননি এবং তার সরকার সংসদের সম্মতি ছাড়া পেনশন সংস্কার অনুমোদন করেছিল। এর ফলে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ম্যাক্রোঁর বাজেট সংকট এবং সরকারি খরচের প্রবৃদ্ধি।
পাল্টানো রাজনীতির প্রভাব
ইউরোপের রাজনৈতিক পরিবর্তনও ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পতনে অবদান রেখেছে। যেমন, যুক্তরাজ্যে নাইজেল ফারাজের পার্টি এবং ফ্রান্সে লে পেনের জাতীয়তাবাদী দল শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এদের উত্থান কেন্দ্রীয় রাজনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলেছে।
আর্থিক সংকট ও কেন্দ্রীয় দায়িত্ব
ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি বর্তমানে জিডিপির ৫.৪% এ পৌঁছেছে এবং বন্ড বাজার উদ্বিগ্ন। জনগণ ম্যাক্রোঁর সরকারকে এখন আর “বিশ্বস্ত” হিসেবে দেখতে পাচ্ছে না, যা তার রাজনৈতিক দুর্বলতার পরিচায়ক। তবে, এখনও অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে, এবং ফ্রান্সের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও বদলে যেতে পারে।
ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় রাজনীতি এখন অত্যন্ত সংকটাপন্ন। যদিও এখনও কিছু আশা রয়েছে, তবে এই মুহূর্তে এটি একটি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে, যা কেবল সময়ের ব্যাপার।