মিউনিখ বিমানবন্দরে ড্রোন আতঙ্ক
মিউনিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার রাতে ড্রোন সাইটিংয়ের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, যা ইউরোপে ড্রোন আতঙ্কের এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০:১৮ থেকে জার্মান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বিমান চলাচল সীমাবদ্ধ করতে শুরু করে এবং পরে তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ঘটনার ফলে ১৭টি ফ্লাইট বাতিল হয় এবং প্রায় ৩,০০০ যাত্রী প্রভাবিত হন। এছাড়া ১৫টি আসন্ন ফ্লাইট অন্য শহরে স্থানান্তরিত হয়।
ভোর ৫টা থেকে বিমান চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
ইউরোপে ড্রোনের হামলার হুমকি
এই ঘটনা ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে নতুন করে ড্রোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করেছে। ইউরোপীয় Union পূর্ব সীমান্তে একটি “ড্রোন ওয়াল” তৈরি করার প্রস্তাব করেছে, যা মূলত সেন্সর, সিগনাল জামার এবং অন্যান্য সামরিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্রোন শনাক্ত ও আটক করবে। রাশিয়ার আক্রমণের অংশ হিসেবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ড্রোন ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার পর, এই প্রকল্পে তীব্র মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।
ড্রোন প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য ইউরোপীয় নেতাদের মতামত
ইউরোপীয় নেতারা সম্মত হয়েছেন যে, ড্রোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা প্রয়োজন, তবে কিছু নেতার মধ্যে এই প্রকল্পের আর্থিক সমর্থন এবং পরিচালনা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, “ড্রোন এবং অ্যান্টি-ড্রোন আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকারের মধ্যে একটি,” তবে তিনি সতর্কতা প্রকাশ করেছেন যে, ইউরোপের ৩,০০০ কিলোমিটার সীমান্তে একটি পারফেক্ট ড্রোন ওয়াল তৈরি করা সম্ভব নয়।
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বোরিস পিস্টোরিয়াসও বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “আমরা এমন একটি ধারণা নিয়ে কথা বলছি যা পরবর্তী তিন বা চার বছরে বাস্তবায়িত হবে না।”
প্রতিবেশী দেশগুলির মতামত
ইস্টার্ন ইউরোপের দেশগুলো, যেমন পোল্যান্ড এবং বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো, ড্রোন শিল্ড পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে, কিন্তু পশ্চিম এবং দক্ষিণ ইউরোপের প্রতিবেশী দেশগুলো এই পরিকল্পনা নিয়ে সন্দিহান। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, “প্রতিরক্ষা প্রকল্পগুলির জন্য পূর্ববর্তী সীমান্তের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত, তবে অন্যান্য অঞ্চলের নিরাপত্তাও উপেক্ষিত করা যাবে না।”
ফিনল্যান্ড, যা রাশিয়ার সাথে দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে, তাদের নিরাপত্তার প্রতি সচেতনতা প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে, তারা তাদের প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়িয়েছে, এবং এখন তাদের সহযোগিতা আশা করে।
রাশিয়ার ড্রোন হামলার প্রভাব
নেটো সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা পোল্যান্ডের আকাশে ড্রোন হামলা প্রতিহত করেছে, যা কিছু ইউরোপীয় নেতা রাশিয়ার পক্ষ থেকে একটি উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন। ডেনমার্কেও কিছু ড্রোন সাইটিংয়ের খবর পাওয়া গেছে, যা বিমানবন্দর বন্ধের কারণ হয়েছে, যদিও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই ড্রোনগুলির উৎস নির্ধারণ করতে পারেনি।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন বলেছেন, “আমরা ড্রোন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে, যা কার্যকর হতে পারে।”
এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের নতুন ড্রোন প্রতিরোধ পরিকল্পনার গুরুত্ব এবং এর বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার প্রতিফলন।