চিড়িয়াখানা ও অ্যাকোয়ারিয়ামে নতুন উদ্যোগ
শিকাগোর ব্রুকফিল্ড চিড়িয়াখানার ক্লিনিক্যাল ভেটেরিনারিয়ান ড. লিলি পার্কিনসন কাজ করছেন একটি বিশেষ উদ্যোগে—চিড়িয়াখানা ও অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য প্রাণীদের রক্তের ব্যাংক গড়ে তোলা। তাঁর লক্ষ্য হলো বিরল ও বন্য প্রাণীদের রক্ত সঞ্চালনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ পদ্ধতি তৈরি করা।
মহামারীর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় তিনি জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সেবায় কাজ করছিলেন। সে সময় স্নো লেপার্ড বা তুষার চিতাবাঘদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেক প্রাণী মারাত্মক রক্তস্বল্পতায় ভুগছিল। মানুষের মতো তাদের জন্য রক্তব্যাংক ছিল না, ফলে দ্রুত সঞ্চালন সম্ভব হয়নি। অনেক প্রাণী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায় বা ইউথানেশিয়া করতে হয়।
রক্ত সংরক্ষণের চ্যালেঞ্জ
মানুষের মতো প্রাণীর রক্তও বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গঠিত। প্লাজমা সহজে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায় এবং তা অনেক সময় নবজাতক জিরাফের চিকিৎসায় কাজে লাগে। কিন্তু লোহিত কণিকা বা রেড ব্লাড সেল ফ্রিজে রাখলে সহজে নষ্ট হয়ে যায়। মানুষের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হলেও তা ব্যয়বহুল ও জটিল। চিড়িয়াখানার জন্য নিয়মিত বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর রক্ত সংগ্রহ করে ফ্রিজে রাখা প্রায় অসম্ভব।
গবেষণার নতুন ধাপ
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব জু ভেটেরিনারিয়ানস থেকে গবেষণা অনুদান পাওয়ার পর ড. পার্কিনসন নতুন ধাপে কাজ শুরু করেছেন। তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় প্রাণীদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করছেন। একটি ক্লাউডেড লেপার্ড ‘রিভার’-এর কাছ থেকে সংগৃহীত রক্ত সেন্ট্রিফিউজে ঘুরিয়ে প্লাজমা ও লোহিত কণিকা আলাদা করা হয়। পরে সেগুলোকে বিশেষ দ্রবণে মিশিয়ে গভীর ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়।
বৈচিত্র্যময় প্রাণীর রক্ত সংগ্রহ
এখন পর্যন্ত গরিলা, ডলফিন, ওরাংওটাং, মেরু ভল্লুক, প্যাঙ্গোলিনসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর রক্ত তিনি সংগ্রহ করেছেন। ছোট প্রাণীর জন্য ক্ষুদ্র ব্যাগ ব্যবহার করতে হয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠান থেকেও তিনি রক্ত পেয়েছেন—শিকাগোর শেড অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে বেলুগা তিমির রক্ত, নেব্রাস্কার হেনরি ডুরলি জু থেকে হাতির রক্ত এবং কলোরাডোর চেয়েন মাউন্টেন জু থেকে জিরাফের রক্ত।
পরীক্ষার পরবর্তী ধাপ
সংরক্ষণের ছয় মাস পর প্রতিটি রক্তের নমুনা গলানো হবে। তখন দেখা হবে কতটুকু কোষ টিকে আছে, সেগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে কি না। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে জিরাফ ও হাতির রক্ত সহজে নষ্ট হয় না। এটি বিশেষভাবে হাতিদের জন্য আশার কথা, কারণ তারা একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে ভোগে। ভবিষ্যতে ছোট হাতির নিজের রক্ত সংরক্ষণ করে প্রয়োজনে আবার সেটি তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হতে পারে।
ভবিষ্যতের আশা
ড. পার্কিনসনের আশা, একদিন চিড়িয়াখানা ও অ্যাকোয়ারিয়ামের চিকিৎসকেরা যখন সিংহ, লেমুর বা অন্য কোনো প্রাণীর চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকবেন, তখন রক্তের জন্য আর দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। একটি কেন্দ্রীয় রক্তব্যাংক সেগুলো সরবরাহ করবে। তিনি বলেন, “তখন চিকিৎসকেরা শুধু অসুস্থ প্রাণীর দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন, বাকি বিষয়গুলো রক্তব্যাংক সামলে নেবে।”