গুলশানে ফখরুলের সঙ্গে জাতিসংঘ দূত গুইন লুইসের বৈঠক
জাতিসংঘের বাংলাদেশে নিযুক্ত আবাসিক সমন্বয়ক গুইন লুইস রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচন, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়। এক ঘণ্টা দীর্ঘ এই বৈঠকটি সকাল ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের ভূমিকা ও গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও গণতান্ত্রিক অনুশীলন অপরিহার্য।
আমির খসরু আরও বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সবার প্রধান দাবি। এটি কেবল একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব। আমরা আলোচনায় ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের সুষ্ঠু আয়োজন নিয়েও কথা বলেছি।”
আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু
বিএনপি নেতারা বৈঠকে রোহিঙ্গাদের দুরবস্থার বিষয়েও আলোচনা করেন। তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের সহায়তা অব্যাহত রাখা জরুরি। এ প্রসঙ্গে গুইন লুইস আশ্বাস দেন যে, রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে না পারা পর্যন্ত জাতিসংঘ তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

আমির খসরু বলেন, “আমরা গুইন লুইসের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করেছি। তিনি বাংলাদেশের কঠিন সময়গুলোতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ সনদের আওতায় সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন।”
নির্বাচন ও রাজনৈতিক অগ্রগতিতে জাতিসংঘের সহায়তা
বৈঠক শেষে গুইন লুইস সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির সঙ্গে তাঁর ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। জাতিসংঘ নির্বাচন কমিশনকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যা যা করা সম্ভব, তা করবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, “সব রাজনৈতিক দলই ঐক্যমতের ভিত্তি গড়ে তুলতে কাজ করছে। আমরা সবাই আশা করছি, আগামী মাস ও বছরগুলোতে এই প্রক্রিয়া আরও এগিয়ে যাবে।”
রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের ভূমিকা
গুইন লুইস বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। সম্প্রতি জাতিসংঘে মালয়েশিয়া, ফিনল্যান্ড ও বাংলাদেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সংকট, বাংলাদেশের আর্থিক প্রয়োজন এবং শরণার্থীদের প্রতি দেশের অসাধারণ আতিথেয়তার কথা তুলে ধরা হয়।

তিনি বলেন, “আমরা পুরো বাংলাদেশকে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বকে এবং পরবর্তী সরকারের মানবিক সহায়তার ভূমিকা প্রশংসা করি। আমরা উন্নয়ন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যৎ শক্তিশালী করার বিষয়েও আলোচনা করেছি।”
গুইন লুইসের বিদায়ী বার্তা
জাতিসংঘ প্রতিনিধি হিসেবে নিজের মেয়াদকাল প্রসঙ্গে গুইন লুইস বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য সৌভাগ্যের। আমি জানি, আমি এমন এক সময়ে বিদায় নিচ্ছি যখন দেশ আশাবাদ ও প্রত্যাশায় ভরপুর। জাতিসংঘ বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে এবং সাম্প্রতিক অর্জনগুলোর প্রশংসা করছে। ভবিষ্যতেও সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইতিবাচক পথে এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
বৈঠকে উপস্থিত অন্যরা
বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, সংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম এবং জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয়ের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনবি থেকে অনূদিত 



















