অক্টোবরের আকাশে উঠছে বছরের প্রথম সুপারমুন—যাকে বলা হয় ‘হারভেস্ট মুন’। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত দেখা যাবে এই বিশেষ পূর্ণচাঁদ, যা পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে থেকে আকারে বড় ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
আকাশে বছরের প্রথম সুপারমুন
অক্টোবর মাসের পূর্ণচাঁদ, যাকে ‘হারভেস্ট মুন’ বলা হয়, দেখা যাবে সোমবার রাতে থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত। পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বছরের প্রথম সুপারমুন — অর্থাৎ চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে থাকে, ফলে আকারে কিছুটা বড় ও উজ্জ্বল দেখায়।
পৃথিবী পর্যবেক্ষণ বিষয়ক ওয়েবসাইট আর্থস্কাই জানিয়েছে, সোমবার রাত ১১টা ৪৮ মিনিটে (ইস্টার্ন টাইম) চাঁদ পূর্ণ অবস্থায় থাকবে।
মেঘ থাকলেও দেখা যাবে
নাসার আর্টেমিস-৩ মিশনের প্রকল্পবিজ্ঞানী নোয়া পেট্রো বলেন, “পূর্ণিমার আসল সৌন্দর্য হলো — যদি সোমবার রাতে মেঘে আকাশ ঢেকে যায়, তাহলে মঙ্গলবারও চাঁদ প্রায় পূর্ণ দেখা যাবে।”
আর্টেমিস-৩ মিশন ২০২৭ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে নভোচারীদের অবতরণের লক্ষ্য নিয়েছে।
‘হারভেস্ট মুন’-এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য
‘হারভেস্ট মুন’ বা ফসল তোলার চাঁদ নামটি এসেছে শরতের প্রথম পূর্ণিমার ঐতিহ্য থেকে। প্রাচীন কৃষকরা এই উজ্জ্বল চাঁদের আলোয় রাতের বেলায়ও জমিতে কাজ করতে পারতেন।
দ্য ওল্ড ফারমার্স অ্যালমানাক-এর তথ্যে বলা হয়, শরৎকালীন বিষুব বা অটামনাল ইকুইনক্স-এর সবচেয়ে কাছাকাছি সময়ে এই পূর্ণিমা পড়ে, তাই একে ‘হারভেস্ট মুন’ বলা হয়।
তিনটি পরপর সুপারমুন
এই অক্টোবরের পূর্ণচাঁদই হবে বছরের প্রথম সুপারমুন, যার পর আরও দুটি পরপর মাসে দেখা যাবে একই দৃশ্য।
সুপারমুন তখনই ঘটে যখন চাঁদ পেরিজি অবস্থায় থাকে — অর্থাৎ তার কক্ষপথে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের বিন্দুতে পৌঁছে। এতে চাঁদ কিছুটা বড় ও উজ্জ্বল দেখা দেয়।
পেট্রো বলেন, “এটি একটি সূক্ষ্ম পরিবর্তন, যা নিয়মিত আকাশ পর্যবেক্ষণ না করলে বোঝা যায় না। মানুষকে আমি পরামর্শ দেব নিয়মিত চাঁদ দেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে — এক সপ্তাহ, এক মাস কিংবা কয়েক মাস ধরে পার্থক্য লক্ষ্য করতে।”
চাঁদ ও মহাকাশ অভিযানের নতুন অধ্যায়
এই হারভেস্ট মুন এসেছে এমন সময়ে, যখন নাসা সদ্য তাদের নতুন নভোচারী দল ঘোষণা করেছে — যাদের কেউ কেউ ভবিষ্যতে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে পা রাখতে পারেন।
আগামী বছর শুরুর দিকে চারজন অভিজ্ঞ নভোচারী আর্টেমিস-২ মিশনে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবেন।
পেট্রো বলেন, “৬ অক্টোবরের চাঁদকে বিশেষ করে তুলছে এই বাস্তবতা — আমরা এখন জানি, আগামী বছরই মানুষ আবার চাঁদের পথে রওনা দেবে। তাই এবার শুধু দূর থেকে চাঁদ দেখার নয়, বরং সেখানে মানব পদচিহ্ন ফেরার প্রতীক্ষা করার সময়ও বটে।”
সামনে আরও সুপারমুন ও উল্কাবৃষ্টি
ফারমার্স অ্যালমানাক-এর হিসাবে, পরবর্তী দুটি সুপারমুন দেখা যাবে নিম্নলিখিত তারিখে —
- ৫ নভেম্বর: বিবার মুন
- ৪ ডিসেম্বর: কোল্ড মুন
এছাড়া রাতের আকাশে শিগগিরই দেখা মিলবে বেশ কিছু উল্কাবৃষ্টিরও। আমেরিকান মেটিওর সোসাইটি এবং আর্থস্কাই-এর তথ্যমতে ২০২৫ সালের প্রধান উল্কাবৃষ্টির তারিখগুলো হলো —
- ড্রাকোনিডস: ৮–৯ অক্টোবর
- ওরিয়োনিডস: ২০–২১ অক্টোবর
- সাউদার্ন টরিডস: ৪–৫ নভেম্বর
- নর্দার্ন টরিডস: ১১–১২ নভেম্বর
- লিওনিডস: ১৬–১৭ নভেম্বর
- জেমিনিডস: ১৩–১৪ ডিসেম্বর
- উরসিডস: ২১–২২ ডিসেম্বর
চাঁদ নিয়ে মানবজাতির বিস্ময় কখনো কমে না। আর্টেমিস অভিযানের প্রস্তুতির এই সময়টিতে অক্টোবরের এই পূর্ণচাঁদ আমাদের মনে করিয়ে দেয় — রাতের আকাশ কেবল দেখার নয়, বোঝারও একটি সুযোগ।
#সুপারমুন #হারভেস্টমুন #নাসা #আর্টেমিসমিশন #চাঁদ #উল্কাবৃষ্টি #আকাশবিজ্ঞান #সারাক্ষণ_রিপোর্ট