দীর্ঘ মাদকাসক্তি ও আত্মসংকটের অন্ধকার পেরিয়ে আমেরিকান ব্যান্ড দ্য লেমনহেডস-এর প্রধান কণ্ঠ ইভান ড্যান্ডো ফিরেছেন নতুন জীবন ও নতুন সঙ্গীতে। ১৯ বছর পর তাঁর অ্যালবাম লাভ চ্যান্ট এবং আত্মজীবনী রিউমারস অব মাই ডিমাইজ প্রমাণ করছে—তিনি এখনও সুর ও আত্মবিশ্বাসের জগতে নিজের জায়গা পুনরুদ্ধার করেছেন।
আসক্তি পেরিয়ে নতুন সূচনা
দীর্ঘ পুনর্বাসনের পর আবারও ফিরে এসেছেন আমেরিকান ব্যান্ড দ্য লেমনহেডস-এর প্রধান গায়ক ইভান ড্যান্ডো। তাঁর নতুন অ্যালবাম লাভ চ্যান্ট — ব্যান্ডটির প্রায় ১৯ বছর পর প্রথম মৌলিক গানভিত্তিক অ্যালবাম। একই সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই রিউমারস অব মাই ডিমাইজ।
ড্যান্ডো স্বীকার করেছেন, হেরোইনের দীর্ঘদিনের আসক্তি তাঁর সৃজনশীলতাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। “এটা হৃদয় আর মাথার মধ্যে সংলাপ থামিয়ে দেয়,” বলেন তিনি।
পতন ও পুনরুত্থানের গল্প
বইটির শুরু ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে — যখন ড্যান্ডো মাদকের নেশায় ডুবে ম্যাসাচুসেটসের মার্থাস ভিনইয়ার্ডে একটি জরাজীর্ণ ট্রেলারে বসবাস করছিলেন। তাঁর নিজের ভাষায়, “দাঁত পড়ে যাচ্ছিল, খাবার খেতে পারতাম না, দিনে দুইশ ডলারের মাদকেই টিকে ছিল জীবন।”
তবে একসময়কার এই ‘জেন এক্স’ আইকনের জীবন এমন ছিল না। নব্বইয়ের দশকে দ্য লেমনহেডস-এর ইটস এ শেম অ্যাবাউট রে ও ইনটু ইউর আর্মস গান দুটি তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালের কার বাটন ক্লথ ব্যর্থ হওয়ার পর ব্যান্ডটি বিরতিতে যায়।
আসক্তি ও আত্মসমালোচনা
১৯৯৭ সালের পর থেকে ব্যান্ডটি কেবল দু’টি কাভার অ্যালবাম প্রকাশ করলেও নতুন কোনো মৌলিক কাজ হয়নি। ড্যান্ডোর মতে, “হেরোইন আমার চারপাশের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল।”
২০২১ সালের শেষ দিকে লস অ্যাঞ্জেলেসে এক ব্যর্থ পারফরম্যান্সের পর তিনি নিজেই পুনর্বাসনে যান এবং হেরোইনের নেশা ছাড়েন। এরপর ধীরে ধীরে স্পিড ও কোকেন থেকেও মুক্তি পান। যদিও তিনি এখনো অ্যালকোহল ও গাঁজা পরিহার করেননি। তাঁর ভাষায়, “ঈশ্বর চেয়েছিলেন না যে মানুষ পুরোপুরি সোজা হয়ে বাঁচুক — নইলে সন্ন্যাসীরা মদ বানাত কেন?”
আত্মজীবনী ও খোলামেলা স্বীকারোক্তি
নিজের বই লেখার কারণ সম্পর্কে ড্যান্ডো বলেন, “সত্যি বলতে, আমার টাকার প্রয়োজন ছিল। বাঁচতে হলে কিছু আয়ের পথ খুঁজতে হয়েছিল।” তিনি আরও স্বীকার করেছেন, বইয়ের প্রথম চার অধ্যায় ছাড়া তিনি পুরোটা পড়েননি। পরে অবশ্য মত বদলে জানান, “বইটিতে আমার খারাপ দিকগুলো যথেষ্ট বলা হয়নি। আত্মজীবনী তখনই বিশ্বাসযোগ্য, যখন তা লজ্জাজনক সত্য প্রকাশ করে।”
নতুন অ্যালবাম: ‘লাভ চ্যান্ট’
২০২৫ সালের ২৪ অক্টোবর মুক্তি পাবে লাভ চ্যান্ট। এই অ্যালবামে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বেস গিটারিস্ট ফারলি গ্লাভিন ও ড্রামার জন ডেভিড কেন্ট। ব্রাজিলের সাও পাওলোতে রেকর্ড করা অ্যালবামে অংশ নিয়েছেন আরও কয়েকজন স্বাধীন সঙ্গীতশিল্পী, যেমন জে মাসকিস ও জুলিয়ানা হ্যাটফিল্ড।
ড্যান্ডো বলেন, “অ্যালবামটিতে সুরের গতি ও উচ্ছ্বাস আছে, একটু গ্রুভও আছে। অনেক দিন পর মনে হচ্ছে আমি আবার ঠিক জায়গায় পৌঁছেছি।”
কৈশোর থেকে খ্যাতির যাত্রা
ড্যান্ডোর বাবা ছিলেন আইনজীবী ও মা পেশাদার মডেল। স্কুলজীবনেই সহপাঠী বেন ডেইলি ও জেসি পেরেটজের সঙ্গে দ্য লেমনহেডস গঠন করেন। শুরুতে তারা ‘সোয়েটার পাঙ্ক’ নামে ঠাট্টার পাত্র হলেও, ১৯৯২ সালে ইটস এ শেম অ্যাবাউট রে মুক্তির পর জনপ্রিয়তার চূড়ায় পৌঁছান।
মিডিয়া তাঁকে ‘অলটারনাহাঙ্ক’ বা বিকল্প যুগের রোমান্টিক প্রতীক বানিয়ে তোলে। ১৯৯৩ সালে স্পিন ম্যাগাজিনের কভারে তাঁর টপলেস ছবি প্রকাশিত হয়। হ্যাটফিল্ডের মতে, “ওই সময় তাঁকে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেটা তাঁর ভাবমূর্তির জন্য ভালো হয়নি।”
পতনের পথে নেশা ও বিতর্ক
ড্যান্ডো ১৯৯০-এর দশকে ক্র্যাক কোকেনসহ নানা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। ব্রিটিশ পত্রিকা এনএমই তখন তাঁকে ‘ডোপহেড’ বলে আখ্যা দেয়। এমনও গুজব রটেছিল যে, তিনি মারা গেছেন — যা তাঁর বইয়ের শিরোনাম রিউমারস অব মাই ডিমাইজ-এর অনুপ্রেরণা।
তিনি বলেন, “আমি কখনো ওভারডোজ করিনি, এমনকি মাদক নেওয়ার সময় কাউকে হারাইনি। ভাগ্যবান ছিলাম।”
নতুন জীবন ও ভালোবাসা
প্রথম স্ত্রী এলিজাবেথ মোসেসের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০২৪ সালে ব্রাজিলিয়ান ভিডিও নির্মাতা অ্যান্টোনিয়া টেক্সেইরাকে বিয়ে করেন ড্যান্ডো। ১৯৯৪ সালে পরিচয় হলেও পুনরায় যোগাযোগ হয় ২০২১ সালে। টেক্সেইরাই তাঁকে জীবন ফিরিয়ে দেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি: “ও আমার জীবন আবার বাঁচার মতো করে দিয়েছে।”
ব্রাজিলে টেক্সেইরার পরিবারের মাধ্যমেই তিনি সঙ্গীত প্রযোজক অ্যাপোলো নোভের সঙ্গে পরিচিত হন, যিনি লাভ চ্যান্ট প্রযোজনা করেন। নোভ বলেন, “এই অ্যালবাম কোনো দুঃখের প্রত্যাবর্তন নয়; বরং শক্তি ও প্রাণে ভরপুর।”
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও আশাবাদ
এখন ড্যান্ডো নতুন করে জীবনের প্রতি ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছেন। “বুড়ো রকার হওয়াটা খারাপ নয়,” তিনি বলেন, “পুরোনো রকাররা কখনো মরে না — শুধু গন্ধটা থেকে যায়।”
ম্যানহাটনের এক রাস্তায় সাক্ষাৎকার শেষে তিনি ছোট একটি স্পিকার ও মাইক্রোফোন বের করে সননি ও শেয়ারের বিখ্যাত গান দ্য বিট গোজ অন গেয়ে ফেলেন — একা, কিন্তু অন্তর থেকে।
#লেমনহেডস #ইভানড্যান্ডো #রকসংগীত #সারাক্ষণরিপোর্ট #লাভচ্যান্ট #সঙ্গীতপ্রত্যাবর্তন #ইভানড্যান্ডোরফিরে_আসা #লেমনহেডসনতুনঅ্যালবাম