লিড
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সব ধরনের মাঝারি ও ভারী ট্রাকের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তাঁর এই সিদ্ধান্ত দেশীয় ট্রাক নির্মাতাদের সুরক্ষার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করছে, তবে এটি বাণিজ্যিক সম্পর্কেও নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে।
নীতি ঘোষণা
ট্রাম্প বলেন, ‘অন্যায্য বিদেশি প্রতিযোগিতা’ থেকে দেশীয় উৎপাদকদের রক্ষা করাই এই পদক্ষেপের লক্ষ্য। এর ফলে লাভবান হবে প্যাক্কার কোম্পানির অধীনস্থ পিটারবিল্ট ও কেনওর্থ ব্র্যান্ড এবং ডাইমলার ট্রাকের মালিকানাধীন ফ্রেইটলাইনারের মতো মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অক্টোবর থেকে ভারী ট্রাক আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হবে।
বাণিজ্যচুক্তি ও শুল্ক কাঠামো
জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে করা বাণিজ্যচুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে হালকা যানবাহনের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তবে এই হার বড় যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোতে সমবেত হালকা যানবাহনের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে—যেখানে গাড়িতে ব্যবহৃত মার্কিন উপাদানের মূল্য শুল্ক নির্ধারণে কর্তন করা যায়।
কোন যানবাহন পড়বে নতুন শুল্কের আওতায়
এই নতুন ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে বিভিন্ন ধরনের বড় গাড়ির ওপর—যেমন ডেলিভারি ট্রাক, বর্জ্য পরিবহনের গাড়ি, সরকারি ইউটিলিটি ট্রাক, স্কুল বাস, ট্রানজিট বাস, ট্রাক্টর ট্রেলর ও ভারী কর্মযান।
মার্কিন বাণিজ্য চেম্বারের আপত্তি
যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স এই নতুন শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পাঁচটি ট্রাক আমদানিকারক দেশ—মেক্সিকো, কানাডা, জাপান, জার্মানি ও ফিনল্যান্ড—সবই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র; তাই এদের কাছ থেকে আমদানি কোনোভাবেই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়।
মেক্সিকোর অবস্থান ও পরিসংখ্যান
মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রে মাঝারি ও ভারী ট্রাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে শীর্ষে। ২০১৯ সালের পর থেকে এই রপ্তানি তিনগুণ বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজারে পৌঁছেছে।
উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (USMCA) অনুযায়ী, যদি কোনো ভারী ট্রাকের অন্তত ৬৪ শতাংশ উপাদান উত্তর আমেরিকার ভেতর থেকে আসে—যেমন ইঞ্জিন, অ্যাক্সেল, ইস্পাত বা শ্রম—তবে সেই ট্রাক শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারে।
প্রভাব পড়বে কোন কোম্পানিতে
এই নতুন শুল্ক স্টেলান্টিস (ক্রাইসলারের মূল কোম্পানি)–এর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যারা মেক্সিকোতে র্যাম ব্র্যান্ডের ভারী ট্রাক ও বাণিজ্যিক ভ্যান তৈরি করে। কোম্পানিটি হোয়াইট হাউসের কাছে আবেদন করেছিল যাতে মেক্সিকো-নির্মিত ট্রাকের ওপর উচ্চ শুল্ক না আরোপ করা হয়।
অন্যদিকে, সুইডেনের ভলভো গ্রুপ মেক্সিকোর মনতেরেতে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ভারী ট্রাক কারখানা নির্মাণ করছে, যা ২০২৬ সালে উৎপাদন শুরু করবে।
মেক্সিকোর শিল্প অবকাঠামো ও যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি
বর্তমানে মেক্সিকোতে ১৪টি বাস, ট্রাক ও ট্রাক্টর-ট্রাক নির্মাতা ও সংযোজক প্রতিষ্ঠান এবং ২টি ইঞ্জিন নির্মাতা রয়েছে। মেক্সিকোর দাবি, তাদের রপ্তানি করা ট্রাকগুলোর গড় ৫০ শতাংশ উপাদানই যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো থেকে প্রায় ১২৮ বিলিয়ন ডলারের ভারী যানবাহন যন্ত্রাংশ আমদানি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভারী যান আমদানির প্রায় ২৮ শতাংশ।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন উত্তেজনায় ফেলেছে। দেশীয় উৎপাদকরা যেখানে একে সমর্থন করছে, সেখানে মার্কিন বাণিজ্য চেম্বার ও মেক্সিকো সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে—কারণ এই নীতি শুধু ট্রাক শিল্প নয়, বরং উত্তর আমেরিকার বৃহত্তর অর্থনৈতিক ভারসাম্যকেও নাড়িয়ে দিতে পারে।
#ট্যাগ: যুক্তরাষ্ট্র_বাণিজ্য, ট্রাম্প_শুল্ক, মেক্সিকো_রপ্তানি, ট্রাক_শিল্প, অর্থনীতি_বিশ্লেষণ, সারাক্ষণ_রিপোর্ট