আলোচনার অগ্রগতি, কঠিন ইস্যু ও ‘ধারাবাহিকতার’ সূক্ষ্ম নকশা
মিসরের একটি রিসর্টে গাজা যুদ্ধ থামাতে হওয়া আলোচনায় প্রবেশ করেছে তৃতীয় দিন। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, কাতার ও মিসরের সিনিয়র প্রতিনিধিরা বৈঠকে যুক্ত হচ্ছেন—ইঙ্গিত দিচ্ছে, সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়গুলোয় ঢোকা হচ্ছে এখন: স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কীভাবে ধাপে ধাপে কার্যকর হবে, অবশিষ্ট সব ইসরায়েলি বন্দী কীভাবে মুক্তি পাবে, কোন স্কেলে ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তির ধাপ বসানো হবে, এবং কোন নিরাপত্তা সূচকের সাথে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার সূচি বেঁধে দেওয়া যাবে। মধ্যস্থতাকারীরা এই পর্যায়কে বলছেন ‘ক্লজ-ওয়ার্ক’—রাজনৈতিক ইচ্ছাকে তারিখ, স্থান, পর্যবেক্ষক ও যাচাই-বাছাইয়ের স্পষ্ট ধারায় নামানো।
এখানে উঠে আসছে সীমান্তপথে আন্তর্জাতিক মনিটর বসবে কি না, মানবিক সহায়তার কোরিডর কীভাবে সামরিক তৎপরতা থেকে আলাদা রাখা হবে, আর বিরোধ দেখা দিলে কে রায় দেবে। পরিকল্পনার কাঠামোতে আছে স্পষ্ট মাইলস্টোন—প্রথম দিকে বন্দী বিনিময় ও সহায়তা কনভয়, এরপর ধাপে ধাপে সৈন্য প্রত্যাহার ও পুনর্গঠন কোরিডর—সাথে ‘স্ন্যাপ-ব্যাক’ ধারা, যাতে লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে বিরতি বা পুনর্বিন্যাস করা যায়। কূটনৈতিক সূত্রের ভাষ্য, যেকোনো টেক্সটই ঘরোয়া রাজনীতির বাধার মুখে পড়বে—ইসরায়েলে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জনচাহিদা, আর হামাসের ভিতরে ছাড়ের রাজনীতি বনাম ‘টিকে থাকার’ বয়ান। সিনিয়র দূতদের উপস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে—এ মুহূর্তে বাধা রাজনৈতিক অস্বীকৃতির চেয়ে প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটিতে বেশি। তারপরও সংশয় রয়ে যায়: মোট চুক্তি কখনো কখনো ভেঙে পড়ে একটি ‘সিকোয়েন্সিং’ ক্লজ বা গ্যারান্টারের ভাষা আটকে গেলে।
মানবিক চাপ, আঞ্চলিক ভূমিকা ও ‘সাফল্য’ দেখতে কেমন হবে
ঘরের বাইরে মানবিক ঘড়ি থেমে নেই। ত্রাণ সংস্থাগুলো খাদ্য-ওষুধ-জ্বালানির তীব্র ঘাটতির কথা বলছে; বিদ্যুৎ-অস্থিরতা আর ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোর কারণে হাসপাতালের সক্ষমতা কম। টেকসই যুদ্ধবিরতি মানে দ্রুত স্কেল-আপ: জেনারেটর ও পানিপাম্পের জন্য জ্বালানি প্রবেশ, চিকিৎসা সরিয়ে নেওয়ার সুরক্ষিত করিডর, আর পুনর্গঠনের আগে অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ শনাক্ত ও অপসারণে ইঞ্জিনিয়ারিং টিম। অর্থায়ন দ্বিতীয় স্তম্ভ। উপসাগরীয় দাতাদের কাছে বহু-বছরের প্রতিশ্রুতি চাওয়া হচ্ছে—স্বচ্ছতা ও সাইট-অ্যাক্সেসের শর্তে; বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলো উপকরণ-থেকে-প্রকল্প ‘ট্র্যাকিং’ ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে অপব্যবহার কমে। আঞ্চলিকভাবে কায়রো ও দোহাই কেন্দ্র: মিসর প্রবেশদ্বারগুলোর প্রশাসন ও টহলব্যবস্থায় গতি আনতে পারে; কাতারের প্রভাব হামাসের ভেতরে বন্দী-সিকোয়েন্সিং ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জরুরি।
ওয়াশিংটনের কাজ দ্বিমুখী—ইসরায়েলের নিরাপত্তা আশ্বাস এবং আরব অংশগ্রহণ বাড়াতে তাগাদা, যাতে যুদ্ধ-পরবর্তী স্থিতিশীলতায় স্থানীয় কিন্তু দল-নিরপেক্ষ পুলিশিং কাঠামো গড়ে ওঠে। চুক্তি হলে প্রথম সপ্তাহই litmus test। সাফল্য মানে হবে—সমন্বিত বন্দী মুক্তি, স্থল-আকাশ অভিযান বিরত রাখার যাচাইযোগ্য পদক্ষেপ, জ্বালানি-চিকিৎসা কনভয়ের প্রকাশ্য সময়সূচি, আর সমালোচনামূলক অবকাঠামোর প্রাথমিক জরিপ। বাজারও দ্রুত সিগন্যাল নেয়: প্রকৃত প্রশান্তি এলে শিপিং ইনস্যুরেন্স কমে, বন্দরসংলগ্ন শিল্প-কারখানা খুলতে পারে। কূটনীতিতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি ‘স্লিপেজ’—সময়সীমা বাড়তে থাকলে কিন্তু ময়দানে গতি না এলে, স্পয়লাররা বয়ানে সুবিধা পায় এবং জনসহনশীলতা ক্ষয়ে যায়। তাই এগোনোর পথ দাঁড়ায় শক্ত মনিটরিং, স্বচ্ছ সূচক এবং অভিযোগ উঠলে দ্রুত সংশোধন। আপাতত, আলোচনায় অংশী হালনাগাদ দলবল জানালার ফাঁকটুকু খোলা রাখছে। তা টেকসই যুদ্ধবিরতিতে রূপ নেবে কি না—তা নির্ভর করবে বড় শিরোনামের চেয়ে বেশি, এই সপ্তাহে লেখা সূক্ষ্ম শর্তগুলোর ওপর—এবং আগামী সপ্তাহগুলোয় সেগুলো কতটা কঠোরভাবে মানা হয় তার ওপর।