ফ্রান্সে রাজনীতি সংকটের গভীরতা
ইউরোপ এবং বিশেষত ফ্রান্সে, মানবিক অর্থনীতির প্রতিফলন সুরক্ষা এবং সামাজিক খরচের ব্যয় আর বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফ্রান্সে দেশের ঋণ বৃদ্ধি, ক্রেডিট রেটিংয়ের পতন, আয় স্থবিরতা, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জনগণ দুটি প্রশ্নের সম্মুখীন: বর্তমান প্রজন্ম কি তাদের পূর্বপুরুষদের তুলনায় আরো খারাপ জীবনযাপন করবে? আর, যদি না হয়, তাহলে এই সুবিধাগুলোর জন্য খরচ কে বহন করবে?
সোমবার, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ঁ লেকর্নুর পদত্যাগের ঘটনায়, এই প্রশ্নগুলো আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাত্র চার সপ্তাহ পর তার পদত্যাগ দেশটিকে আরো গভীর রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছে। তার পূর্বসূরি, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেয়ারু, গত মাসে এক বাজেট পেশ করেছিলেন, যা গভীর কাটছাঁটের প্রস্তাব করেছিল। এর মধ্যে ছিল দু’টি জাতীয় ছুটির দিন বাতিল করার প্রস্তাবও।
জার্মানির অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
জার্মানিতে, যেখানে গত দুই বছর ধরে অর্থনীতি স্থবির, কোম্পানিগুলি কর্মী ছাঁটাই করছে, এবং সরকার জনগণের জন্য কঠোর কাটছাঁটের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা সত্ত্বেও বেশিরভাগ জার্মান নাগরিক উচ্চমানের জীবনযাত্রা উপভোগ করছে। ফ্রান্স ও জার্মানি উভয়েই পেনশন এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে। এর ফলে অর্থনীতি আরও চাপে পড়ছে এবং এর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে।
ফ্রান্সের ‘সমাজতান্ত্রিক চুক্তি’ এবং এর চ্যালেঞ্জ
আনাস্তাসিয়া ব্লে, ৩১, প্যারিসের একটি ক্যামেরা সহকারী, তার প্রজন্মের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে অপরিহার্য মনে করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সরকারী সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তবে, তিনি মনে করেন যে, ধনী ব্যক্তিরা তাদের উপার্জন অনুযায়ী যথেষ্ট কর দেন না, যা দেশের মধ্যে একটি বড় বৈষম্য সৃষ্টি করছে। ব্লে আরও বলেন, “এটি একটি অধিকার, এবং না একটি প্রিভিলেজ,” অর্থাৎ এটি একটি অধিকার, সুবিধা নয়।
আঞ্চলিক বিরোধ এবং অর্থনৈতিক সমাধানের জন্য সংগ্রাম
এদিকে, ফ্রান্সের মধ্যাঞ্চলে, ৫২ বছর বয়সী ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা, এরিক লারচেভেক, দেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে অবাস্তব মনে করছেন। তিনি মনে করেন, ফ্রান্সের বর্তমান উচ্চ করের কারণে দেশটির ব্যবসা পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তিনি পুনরায় দেশ ছাড়তে বিবেচনা করছেন।
ইউরোপের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যা
এটি স্পষ্ট যে ইউরোপের অনেক দেশ এই সংকটে পড়েছে, এবং বিশেষত ফ্রান্স ও জার্মানি তাদের সবচেয়ে অস্থির রাজনৈতিক সময় পার করছে। বিশেষত ফ্রান্সে, একদিকে সমাজকল্যাণব্যবস্থা, অপরদিকে উচ্চ ঋণ এবং রাজনৈতিক বিভাজন, যা দেশটির ক্রেডিট রেটিংকে বিপর্যস্ত করছে। বর্তমানে, ফ্রান্সের ঋণের হার গ্রীসের ঋণের চেয়েও উচ্চ, যা আগে কখনও চিন্তা করা হয়নি।
ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য সংকট
ফ্রান্সের জনগণের মধ্যে উত্থান এবং প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিশেষত, ফ্রান্সের বয়সজনিত চ্যালেঞ্জ এবং বৃদ্ধজনসংখ্যার কারণে সঞ্চিত পেনশন খরচ বাড়ছে, এবং এর জন্য সরকারি কাটছাঁটের প্রস্তাব চলছে। এই কাটছাঁট দেশের জন্য কঠিন সময়ের সূচনা করতে পারে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে থমকে দিতে পারে।
অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং নতুন দৃষ্টিকোণ
এমনকি এই সংকটের মধ্যেও, স্থানীয় উদ্যোক্তা এবং রাজনীতিবিদরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির নতুন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। রুবাই শহরের মেয়র গুইলোম ডেলবার, শহরের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি নিয়ে বলেছেন, “এটি এই শহরের সংস্কৃতি: এটি সবসময় নিজের মতো পুনর্নির্মাণ করেছে।”
এমনকি যদি এগুলি ছোট ছোট পদক্ষেপ হয়, তবুও রুবাইয়ের মতো স্থানগুলি নতুন ধারণা এবং কার্যকরী প্রকল্পের মাধ্যমে পুনরায় অর্থনৈতিক পুনর্গঠন করতে প্রস্তুত।
#ফ্রান্সেরঋণসমস্যা #জার্মানিরঅর্থনীতি #ইউরোপীয়সংকট #রাজনৈতিকঅস্থিরতা #অর্থনৈতিকপুনর্গঠন