গাজার শরণার্থী ইনাস আবু মামার, যিনি দুই বছর ধরে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের শিকার, এখন আরও বড় শোক ও কষ্টের মুখোমুখি। যুদ্ধের মধ্যে হারানো প্রিয়জনদের স্মৃতি আর শরণার্থী শিবিরের যন্ত্রণায় তাঁর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
দুই বছর ধরে চলমান ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের ফলে গাজার শরণার্থী ইনাস আবু মামার জীবনে আরও এক অন্ধকার অধ্যায় শুরু হয়েছে। যুদ্ধে তার প্রিয়জনদের হারানোর পর, তিনি এখনো বেঁচে থাকা স্বজনদের নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। শরণার্থী শিবিরে তাদের শোচনীয় অবস্থা, সেখানকার জীবনযাত্রা এবং তীব্র শোকের কথা জানান ইনাস।
পরিবারের ক্ষতি
যুদ্ধের প্রথম দিকে, রিওটার্সের একটি ছবিতে ইনাস তার পাঁচ বছরের ভাতিজি সালীকে শবদেহ ধরে থাকতে দেখা যায়। সে সময় সালী ছাড়াও ইনাসের বাবা-মা, চাচা-চাচি, ভাই-বোন এবং অন্যান্য আত্মীয়রা নিহত হন। গত গ্রীষ্মে, যখন তার বাবা ও ভাই খাবার নিয়ে ফিরছিলেন, তখন তারা ইসরায়েলি হামলায় মারা যান। এখন সালী ও তার ভাই আহমেদসহ ইনাসের পরিবারের অধিকাংশ সদস্য আর বেঁচে নেই।
যুদ্ধের শোক
ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং ট্যাংক গোলার আঘাতে এই পরিবারের অনেক প্রিয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। ইনাস আবু মামার জানান, “যুদ্ধ আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের পরিবার, ঘরবাড়ি—সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে।” তার পরিবারের প্রায় সবাই মারা গেছেন এবং এখন তাদের জীবনে কোন নিরাপত্তা নেই।
শরণার্থী শিবিরে জীবন
বর্তমানে ইনাস এবং তার অবশিষ্ট পরিবার গাজার খান ইউনিসে একটি শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। তাদের আশ্রয়স্থল শুধুমাত্র একটি তাঁবু, যেখানে জীবন অনেক কষ্টকর। খাবার, পরিষ্কার পানি এবং চিকিৎসা সেবা নেই। ইসরায়েলি হামলার ভয় তাদের প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত করে রাখে। ইনাসের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ তার ভাতিজা আহমেদ, যিনি তার পরিবার হারিয়ে একা বেঁচে আছেন।
আহমেদের দুঃখ
আহমেদ, সালী এবং সেবার ভাই, যিনি তার মা, দুই বোন এবং অন্যান্য প্রিয়জনকে হারিয়ে একাকী বেড়ে উঠছে। আহমেদ যখন তার বাবা ও পিতামহকে হারায়, তার জীবন একেবারে বদলে যায়। বর্তমানে, আহমেদ শুধু শিবিরে বসে থাকে এবং গত কয়েক মাস ধরে একটি বিড়ালকে সঙ্গী করে রেখেছে। বিড়ালটির মৃত্যুর পর, তার শোক আরও বেড়ে যায়।
যুদ্ধের শেষ কবে?
এক বছর আগে, ইনাস আবু মামার রিওটার্সের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমরা শুধু রক্তপাত বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।” কিন্তু আজও তিনি সেই আশা নিয়ে বসে আছেন, এবং তিনি ভয় করছেন যে, আসন্ন শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হবে। তিনি জানান, “আমরা আর এই যুদ্ধ দেখতে চাই না। আমরা চাই এই যুদ্ধ একেবারে শেষ হয়ে যাক।”
ইনাস এবং তার পরিবারের জন্য পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত কঠিন। হাজার হাজার শরণার্থী এখন গাজার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে, এবং তাদের জীবন পরিস্থিতি ভয়াবহ। তবে শান্তির আশা এখনও জীবিত, যদিও যুদ্ধের সমাপ্তি কবে আসবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
#গাজা #শোক #ইনাসআবুমামার #ইসরায়েলীযুদ্ধ #ফিলিস্তিন #শরণার্থী #যুদ্ধেরশোক