২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই তালেবান সরকারের কোনো শীর্ষ নেতার প্রথম ভারত সফর। জাতিসংঘের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সাময়িক প্রত্যাহারের পর এই সফরকে আঞ্চলিক কূটনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, বন্দর ব্যবহারের পাশাপাশি দক্ষিণ এশীয় ভূরাজনীতিতে নতুন সমীকরণেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে এই সফর।
নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা
আফগান তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বুধবার ভারত সফরে যাচ্ছেন — ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর কোনো শীর্ষ নেতার এটাই প্রথম ভারত সফর। কাবুলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সফর দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ার একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই সফরের মধ্য দিয়ে তালেবান প্রশাসন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার ও অর্থনৈতিক সংযোগ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কেবল রাশিয়াই তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আলোচনার মূল বিষয়: বাণিজ্য, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক সম্পর্ক
কাবুলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আমির খান মুত্তাকি ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামণ্যম জয়শঙ্কর এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করবেন।
বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবে শুকনো ফল রপ্তানি, স্বাস্থ্যসেবা খাতে সহযোগিতা, কনস্যুলার সেবা এবং আঞ্চলিক বন্দর ব্যবহারের বিষয়গুলো।
পুরনো বন্ধুত্ব থেকে বিচ্ছিন্নতা ও নতুন যোগাযোগ
ঐতিহাসিকভাবে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার এবং তালেবানের পুনরায় ক্ষমতা দখলের পর নয়াদিল্লি কাবুলে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়।
এক বছর পর ভারত সীমিত আকারে একটি মিশন চালু করে, যাতে বাণিজ্য, চিকিৎসা সহায়তা এবং মানবিক সহযোগিতা কার্যক্রম চালু রাখা যায়। যদিও ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি; তবুও দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠকগুলো সম্পর্কের উষ্ণতা ফেরানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জাতিসংঘের অনুমতিতে সফর সম্ভব
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ কমিটি মুত্তাকির ওপর থাকা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে তুলে নেওয়ার ফলে এই সফর সম্ভব হয়েছে। এটি তালেবান নেতৃত্বের জন্য কূটনৈতিক ক্ষেত্র সম্প্রসারণের এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মস্কো বৈঠকে আঞ্চলিক অবস্থান
ভারত সফরের আগের দিন, মঙ্গলবার মুত্তাকি মস্কোতে অনুষ্ঠিত একটি আঞ্চলিক বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো — ভারত, পাকিস্তান, ইরান, চীন এবং কয়েকটি মধ্য এশীয় রাষ্ট্র — একটি যৌথ বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে অঞ্চলে কোনো বিদেশি সামরিক অবকাঠামো স্থাপনের বিরোধিতা জানানো হয়।
এই অবস্থানকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি পুনর্গঠনের ঘোষণার প্রতি এক প্রকার প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষণ: দক্ষিণ এশীয় কূটনীতিতে নতুন দিক
বিশ্লেষকদের মতে, মুত্তাকির ভারত সফর দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। ভারত তালেবান সরকারের প্রতি এখনো সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখলেও, ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় উভয় পক্ষই বাস্তববাদী পথে হাঁটছে।
অর্থনৈতিক স্বার্থ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং মানবিক সহায়তার দিক বিবেচনায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনরায় উষ্ণ হতে পারে বলেও কূটনৈতিক মহলের ধারণা।
#আফগানিস্তান #ভারতসফর #আমিরখানমুত্তাকি #তালেবান #দক্ষিণএশিয়াকূটনীতি #বাণিজ্যসম্পর্ক #জাতিসংঘ #মস্কোবৈঠক #আঞ্চলিকরাজনীতি #সারাক্ষণরিপোর্ট